তাহমিনা বেগম গিনি
ছোট বেলায় একটি লাইন সবাই পড়েছি। “সদা সত্য কথা বলিবো”। বহুদিন পর কলম ধরেছি। কোনো কিছু বলা যাবে না, লেখা যাবে না, কারো নামও উল্লেখ করা যাবে না, তাহলে কি লিখবো? বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মোঃ ইউনূস সাহেব সব পত্রিকার সম্পাদককে বলেছেন আপনারা সত্য কথা লিখবেন যাতে আমরা দেশের বর্তমান অবস্থা জানতে পারি। সুন্দর কথা। আমি বাসায় দুটো জাতীয় দৈনিক আর তিনটি স্থানীয় পত্রিকা রাখি। স্থানীয় পত্রিকায় ভরা থাকে নারী নির্যাতন, হত্যা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, বালু দখল ইত্যাদি কোন সময় নাম থাকে, কোন সময় নাম থাকে না। জাতীয় পত্রিকাকে আজকাল সাহসী মনে হয়। আসলে সত্যের পথে চলার জন্যই তো এতো ছেলে-মেয়ে প্রাণ দিল, অন্ধ হলো, পঙ্গু হলো। আজ প্রায় তিন-চার মাস হতে চলেছে আমরা সংস্কার আন্দোলনের মাঝে আছি। কিন্তু যখন টিভি, পত্রিকা, ফেসবুকে নানান খবর পাই তখন মনে হল পরিবর্তনটা কোথায় হলো? একলা নারী পথ চলতে পারছে না, ছিনতাইকারীর হাতে অহরহ ছিনতাই হচ্ছে, নারী-শিশু ধর্ষণ যেন বেড়ে গিয়েছে, চুরি-ডাকাতি সর্বকালের মধ্যে বেড়ে গেছে। আমাদের হবিগঞ্জে এমন চুরি-ডাকাতি আগে কখনোই হয়নি। সবচেয়ে পীড়া দিয়েছে শিক্ষা গুরুদের অবমাননা। খাদ্য দ্রব্যের দাম আকাশচুম্বি। মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তেরও আওতার বাইরে। খেটে খাওয়া শ্রমিকদের কথা বাদই দিলাম। প্রথম আলোয় পড়লাম প্রতি রাতে পঞ্চাশ হাজার টাকা লেনদেন হয় কাওরান বাজারে, তাহলে তো সিন্ডিকেট আছেই। অথচ ট্রাক চালকরা বলেছেন, রাস্তায় কোন চাঁদাবাজি হয় না। স্কুলপড়–য়া ছেলে-মেয়েদের প্রায়ই দেখি রাস্তায় ঘুরাফেরা করতে। অনেক এলাকায় মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না ইভটিজিং, অপহরণের ভয়ে। প্রায় স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। শিক্ষাতো গেছেই, এবার এমন চললে আরো যাবে। একটি দেশকে ধ্বংস করতে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করাই যথেষ্ট। আমরা কখনোই আশা করিনা ৩/৪ মাসে এত বছরের জঞ্জাল সরানো যাবে। আর সবইতো শূন্য। তখন ভিষণ অবাক হই, যখন শুনি কারো কারো ২০০/৩০০টি বাড়ি, ফ্ল্যাট আছে দেশে-বিদেশে বেগম পাড়ায়। মানুষের কত লাগে সাড়ে তিন হাত জায়গাই তো? দেশে নতুন সংস্কারে যারা জড়িত আছেন আমার ভাবনা তারা পন্ডিত ব্যক্তি। ছাত্রদের এতো ত্যাগ, এতো মৃত্যু বৃথা যাবে না। হয়তো দেশটা বদলাবে কিন্তু আসল কথা আমরা মানুষরা কি বদলাবো? আমাদের চরিত্র কি বদলাবে? ৫৩ বছরের বাংলাদেশে কত দলইতো আমরা সবাই চিনি, মাঝে মাঝে মনে হয় অনেক কষ্ট করে সংস্কারকরা একটি নির্বাচন দিলেন, তারপর দেখবোনা তো নতুন বোতলে পুরানো পানীয়? আমার প্রিয় কবি ওমর খৈয়ামের কয়েকটি পংক্তি দিয়ে লেখার ইতি টানছি-
“ভেবে কি দেখেছো সখি ক্ষণস্থায়ী কত এ জীবন?
একটি প্রভাত আসে বিকশিত ফুলের মতন,
মরা বাঁচা শুধু একবেলা।
খেয়ালীরা সৃজনের খেলা।
একটি রাতের শুধু উৎসবের মহা সমারোহ,
মুহূর্তের স্বপ্নসম-মিথ্যা মায়া মোহ।
তারপর
হলে বেলা শেষ,
না জানি কোথা পুনঃ হবো নিরুদ্দেশ”।