চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার লস্করপুর ভ্যালীর ন্যাশনাল টি কোম্পানীর (এনটিসি) ৪টি চা বাগানে বকেয়া মজুরির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে চা শ্রমিকরা। এতে এসব বাগানে কয়েক লাখ কেজি তৈরী চা আটকা পড়ার পাশাপাশি বাগানে নষ্ট হচ্ছে কাঁচা পাতা। শ্রমিকরা বাগান বন্ধ করে দেয়ায় এসব বাগানের ৩ হাজার শ্রমিক অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
এদিকে বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকার পরিবর্তনের পর এনটিসির বোর্ড চেয়ারম্যানসহ ৮ জন পরিচালক পদত্যাগ করার কারণে সৃষ্ট সমস্যায় তারা অর্থ পাচ্ছেন না। ফলে শ্রমিকসহ স্টাফদের বেতন ভাতাও বন্ধ রয়েছে।
এনটিসির মালিকানাধীন ১২টি চা বাগানের মধ্যে লস্করপুর ভ্যালীর মধ্যে চন্ডিছড়া, পারকুল, সাতছড়ি, তেলিয়াপাড়া ও জগদীশপুর চা বাগানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক কাজ করে। তারা দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরি হিসেবে প্রতি সপ্তাহে সেই হাজিরা পায়। কিন্তু এনটিসির ১২টি বাগানেই গত ২২ আগস্ট থেকে অর্থ সংকটে তাদের মজুরি প্রদান বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে এবং বাগানের চা নিলামে পাঠানো বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে গত দুর্গাপূজায় শ্রমিকদের বোনাস ও মাত্র ৩ সপ্তাহের মজুরি প্রদান করে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে তাদের ৬ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার থেকে শ্রমিকরা বাগান বন্ধ করে দেয়। এর আগে থেকেই তারা বাগানের তৈরী চা নিলামে পাঠানোও বন্ধ করে দেয়। এতে এসব বাগানে কয়েক লাখ তৈরী চা আটকা পড়েছে। বাগানে নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ কেজি কাঁচা পাতা। মজুরি না পেয়ে এসব চা বাগানের শ্রমিকরাও চরম কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। অনেকেই ধার কর্জ ও দোকান বাকি থেকে কেনাকাটা করলেও এখন দোকান বাকিও পাচ্ছে না। ফলে তাদের অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে। এ অবস্থায় উপজেলা প্রশাসন তাদের ১০ কেজি করে চাল দিয়েছিল।
চন্ডিছড়া চা বাগানের পুস্প বাউড়ি বলেন, গত ৬ সপ্তাহ ধরে আমাদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। এতে আমাদের শ্রমিকরা অনেকেই না খেয়ে দিন যাপন করছে। অনেকেই দোকান বাকি কিংবা ধারকর্জ করে খেয়েছে, এখন তাও পাচ্ছে না। আমরা আমাদের মজুরি না পেলে না খেয়ে মারা যাব। তিনি বলেন, বকেয়া সকল মজুরি না পেলে বাগান খুলে দেওয়া হবে না।
বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি রনজিত কর্মকার জানান, মজুরি না পেয়ে শ্রমিকরা খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বকেয়া মজুরি প্রদান করা না হলে আমরা বাগান চালু করবো না। অকশনে নিলামের কোন চালানও দিব না। এ পাতা বিক্রি করে আমাদের মজুরি দিতে হবে।
চন্ডিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিমুর রহমান জানান, বোর্ডের সমস্যার কারণে আমরা আর্থিক সংকটে ভুগছি। তারপরও আমরা তাদের পূজার বোনাস ও তিন সপ্তাহের মজুরি দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি যাতে মজুরি নিয়মিত করা যায়। কিন্তু নিলামে চা না পাঠাতে পারার কারণে বাগানে দেড় লাখ কেজি চা আটকা পড়েছে।