সিসি ফুটেজে অসঙ্গতির দৃশ্য নিয়ে রহস্য সৃষ্টি
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি গ্রামে বাড়িঘরে ডাকাতির কাল্পনিক ঘটনা সৃষ্টি করে যুক্তরাজ্য প্রবাসীসহ এলাকার বিশিষ্টজনকে আসামী করে হয়রানীমূলক মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তদন্তপূর্বক কাল্পনিক ঘটনা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- কুর্শি ইউনিয়নের কুর্শি গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী মির্জা আওলাদ বেগের বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা নিয়ে প্রতিবেশী মৃত মাহমুদ মিয়া ওরফে (কাচা মিয়ার) পরিবারের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছে। রাস্তার জায়গা নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা চলে আসছে। মির্জা আওলাদ বেগের লিখিত অভিযোগের পর সেনাবাহিনীর নির্দেশে কুর্শি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেদুর রহমান উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে বিরোধটি মীমাংসা করে দেন। প্রথমে আপোষ মেনে নিলেও পরে মাহমুদ মিয়ার পরিবার বিষয়টি মেনে নেয়নি। গত ৬ অক্টোবর রাতে মৃত মাহমুদ মিয়ার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ডাকাতির ঘটনার পূর্বেই যুক্তরাজ্য প্রবাসী মির্জা আওলাদ বেগসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে ফেসবুকে লাইভ করেন মৃত মাহমুদ মিয়ার ছেলে পতুর্গাল প্রবাসী সাজ্জাদুর রহমান। এনিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ডাকাতির ঘটনাটি রহস্যজনক মনে হয়। এরপর বিষয়টি আমলে নেয়নি পুলিশ। পরে ডাকাতির ঘটনা উল্লেখ করে ১৬ অক্টোবর হবিগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মৃত মাহমুদ মিয়ার স্ত্রী রাহেনা বেগম বাদী হয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মির্জা আওলাদ বেগকে প্রধান আসামী করে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ- মৃত মাহমুদ মিয়ার ছেলে পর্তুগাল প্রবাসী সাজ্জাদুর রহমান ঘটনার পূর্বেই কিভাবে আঁচ করলেন নিজের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে, ঘটনার পূর্বেই ডাকাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের নাম তিনি উল্লেখ করে বক্তব্য কিভাবে দেন! পাশ্ববর্তী অনেক মসজিদ থাকলেও ওই সময় কেন প্রায় ১ কিলোমিটার দূরের একটি মসজিদের মাইকে ডাকাতির ঘটনার খবর প্রচার হয় এমন নানা প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়- ঘটনার দিন রাত ২টা ৩০ মিনিট থেকে ২টা ৩২ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড পর্যন্ত মাহমুদ মিয়ার বাড়ির প্রধান দরজার সামনে মুখোশধারী ৪/৫জন লোককে ধাক্কাধাক্কি করতে দেখা যায়। ২টা ৩৪ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের ফুটেজে ঘরের দরজা খোলা দেখা যায়। ২টা ৩২ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড থেকে ২টা ৩৪ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের মধ্যখানের সিসিটিভির দেড় মিনিটের ফুটেজ পাওয়া যায়নি, কিভাবে ঘরের দরজা খোলা হয় তার ফুটেজ দেখা যায়নি। পরবর্তীতে ২টা ৩৬ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ফুটেজে দেখা যায় ৪/৫জন লোক ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছে। ৩ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে কিভাবে ডাকাতির ঘটনা সংঘটিত হয় এনিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রাহেনা বেগম বাদী হয়ে দায়েরকৃত ডাকাতির মামলায় আশপাশের লোকজনকে সাক্ষী না দিয়ে ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একই ঘরের ৩জনকে মামলার সাক্ষী করা হয় এবং বাদী রাহেনা বেগমের নাতীকেও মামলায় সাক্ষী দেয়া হয়। এনিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন- কুর্শি গ্রামের ডাকাতির ঘটনার বিষয়টি জানার পর সরেজমিন পরিদর্শন করে রহস্যজনক মনে হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে সিসি টিভির ফুটেজে নানা অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে। তিনি বলেন- বাদীপক্ষ আদালতে মামলা দায়ের করেছে, আদালতের নির্দেশে মামলাটি এফআইআর গণ্যে রুজু করে এ ঘটনার অধিকতর তদন্তের ব্যাপারে আমরা কাজ করবো।