জালাল স্টেডিয়াম ছিল হবিগঞ্জ শহরের খেলাধুলার প্রাণকেন্দ্র
বাসাবাড়ির টয়লেটের ময়লা মহিষের গাড়ি নিয়ে যেতো ময়লার ভাগারে
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জ শহর সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে হবিগঞ্জ কালীবাড়ি পূজা কমিটির সভাপতি বিমল জ্যোতি চক্রবর্তী রঞ্জু জানান- তৎকালীন সময়ে হবিগঞ্জ আদালতের সামনে ছিল বাসস্ট্যান্ড। আর বাসের মালিক ছিলেন বীর কুমার চক্রবর্তী, মন্টু রায়, ফটিক মিয়া, ওয়ারিশ মিয়া। তাছাড়া শহরের অধিকাংশ ঘর বাড়ি ছিল টিনের তৈরী। কিছু কিছু আধাপাকা ঘরও ছিল।
তিনি আরও জানান, হবিগঞ্জে জালাল আহমেদ নামে একজন এসডিও (মহকুমা প্রশাসক) ছিলেন (বর্তমানে মহকুমাগুলো জেলায় উন্নীত হয়েছে)। তাঁর নামানুসারে জালাল স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়। জালাল স্টেডিয়াম ছিল খেলাধুলার প্রাণ কেন্দ্র। এ মাঠটি সব সময় খেলোয়াড়রা মাতিয়ে রাখতেন। প্রতিটি খেলায় প্রচুর দর্শক সমাগম হতো। মোহামেডান, মিলন সংঘ, শেরে বাংলা, ইউএফসি ছিল উল্লেখযোগ্য ক্লাব। বর্তমান পিটিআই স্কুলের নাম ছিল ম্যাম স্কুল। এটি ম্যাম দ্বারা পরিচালিত হতো বলে এই নামকরণ করা হয়। এ স্কুলে দুটি হোস্টেলও ছিল। একটি ছিল হিন্দু হোস্টেল অপরটি ছিল মুসলিম হোস্টেল। আর বর্তমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি তখনকার সময়ের বিশিষ্ট সঙ্গীত প্রশিক্ষক ওস্তাদ মিলন রায়ের পরিবারের ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত। ওস্তাদ মিলন রায়কে গান শেখানোর কথা বলে চুনারুঘাটের শ্রীবাড়ি চা বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ হন। পরে কালেঙ্গা বন থেকে তার দেহাবশেষ অর্থাৎ শরীরের কিছু হাড় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবিতে হাড় নিয়ে হবিগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করা হলে পুলিশ সন্দেহভাজন আসামী গ্রেফতারও করে। পরে মামলা পরিচালনার লোক না থাকায় তা আর সামনে এগোয়নি। মিলন রায় ছিলেন চিরকুমার। তাই মৃত্যুর পর তার ভূমিটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। পরে সরকারের সিদ্ধান্তে ওই ভূমিতে হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় স্থানান্তর করা হয়। প্রসঙ্গত, হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ছিল শহরের বদিউজ্জামান খান সড়কে।
বিমল জ্যোতি চক্রবর্তী রঞ্জু আরো জানান- তৎকালীন সময়ে শহরের ব্যাক রোডে (অ্যাডভোকেট এম.এ মতিন খানের বাসা সংলগ্ন) সুইপার কলোনীর পাশে ছিল ময়লার ভাগাড়। তখনকার সময়ে শহরের অধিকাংশ লেট্রিন (টয়লেট) ছিল কাঁচা। প্রতিটি লেট্রিনে টিনের ছোট কৌটা থাকতো। ওই কৌটায় টয়লেটের ময়লা জমা হতো। কমলা ও গেদা নামে দুইজন ওই ময়লা অপসারণের কাজ করতো। তারা ময়লার টিন নিয়ে বড় ড্রামে টিনের ময়লা রাখতো। পরে ময়লা ভর্তি ড্রাম মহিষের গাড়িতে উঠানো হতো। পরে তা ময়লার ভাগাড়ে নিয়ে অপসারণ করা হতো। সড়কে চলাচলে তখন দুর্গন্ধে নাক টিপে চলতে হতো। ময়লার গাড়ি টানা দুটি মহিষ সব সময় বর্তমান হাইস্কুল এন্ড কলেজের পেছনে পুকুর পাড়ে ঘাস খেতে ছাড়া থাকতো।