ভাড়াটিয়ারা কোন দোকানে মাসে কত টাকা ভাড়া দেন কালীবাড়ি পরিচালনা কমিটির অনেক নেতৃবৃন্দসহ ভক্তরা জানেন না ॥ অনেক ভাড়াটিয়া দোকানের সিকিউটির টাকা দেননি
স্টাফ রিপোর্টার ॥ শারদীয় দুর্গোৎসব সামনে রেখে হবিগঞ্জ কালীবাড়ির আয় ব্যয়ের হিসেব নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী অনেকেই এ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কালীবাড়ির আয় ব্যয় জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। এ নিয়ে গতকাল থেকে চলছে ব্যাপক আলোচনা। হবিগঞ্জের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী কালীবাড়ির সামনে শহরের প্রধান সড়কে রয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান। অভিযোগ রয়েছে এসব দোকান দীর্ঘদিন ধরে একই ভাড়ায় ভাড়াটিয়ারা ব্যবসা করে আসছেন। যেই মান্ধাতার আমলে নির্ধারণ করা হয়েছিল, এখনো সেই ভাড়া রয়েছে দোকানগুলো। দোকান ভাড়া বাড়াতে চাইলে কমিটিতে থাকা দোকানগুলোর ভাড়াটিয়ারা এ নিয়ে কঠোরভাবে আপত্তি জানান। ভাড়াটিয়ারা কোন দোকানে মাসে কত টাকা ভাড়া দেন কালীবাড়ি পরিচালনা কমিটির অনেক নেতৃবৃন্দসহ ভক্তরা জানেন না। কালীবাড়ি মন্দিরের উন্নয়নে ৫০ লাখ টাকা অনুদান আসলে সঠিক সময়ে উন্নয়ন কাজ না করায় সেই টাকা ফেরত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে চলছে আলোচনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালীবাড়ি মন্দির ভক্তদের দান, কালীবাড়িতে দোকান ভাড়া প্রদান আয়ের উৎস হলেও এখানে মালা বদল করে অনেক বিয়ে করানো হয়। যারা মালা বদল করে বিয়ে করেন তাদের কাছ থেকেও টাকা নেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিয়ে থেকে যে টাকা নেওয়া হয়, তা রেজিস্ট্রারী খাতায় লিখে রাখতে হয়। সেখানে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন তারা অনেক বিয়ের টাকা তুলেন আবার কোন কোন বিয়ের টাকা তুলেন না।
কালীবাড়ির অনিয়ম নিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জেলার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য বিপ্লব রায় সুজন ফেসবুকে ২টি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। একটিতে তিনি উল্লেখ করেন হবিগঞ্জ কেন্দ্রীয় কালীবাড়ির হিসেব নিকাশ জনসম্মুখে দিতে হবে। পরিচালনা কমিটির নিজেরাই মিটিং করে রেজুলেশন করেন। ঘর ভাড়া সিন্ডেকেট মুক্ত করে নিলামে ঘর ভাড়া দিতে হবে। তার এই স্ট্যাটাসে ২৫ জন কমেন্ট করেন এবং ৩টি শেয়ার হয়। পংকজ বিশ্বাস নামে একজন কমেন্ট করেন কালীবাড়ি কি মার্কেট ১শ’ বছরের জন্য লিজ দেওয়ার কারণ জন্মের পর থেকে দেখছি, কোন পরিবর্তন নাই। স্বপ্ন ধর নামের আরেকজন কমেন্ট করেন এসব বিষয়গুলো জনসম্মুখে আনা হোক। যে পরিমান চাঁদা আদায় হয়, সেই পরিমান উন্নয়ন হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এটি আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধান্দাবাজি ও বাটপারি চলবে না। পূজা উদযাপন কমিটির নেতা বিপ্লব রায় সুজন আরেকটি স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন কালীবাড়ি কমিটি কি অডিট করেছে। কার কয়টি দোকান, কে কিভাবে ভাড়া নেয়। সেটা কি হবিগঞ্জ সনাতনীরা জানতে চায় না। আর এসব দোকান ভাড়া দান যায় কোথায়? তার এই স্ট্যাটাসে ২৬জন কমেন্ট করেন এবং একজন শেয়ার করেন।
এ ব্যাপারে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য বিপ্লব কুমার রায় সুজনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই কালীবাড়িতে অনিয়ম চলছে। অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। আমরা চাই দোকান ভাড়াসহ মন্দিরের সকল হিসেব নিকাশ জনসম্মুখে আসুক।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সদস্য সচিব শংকর পাল বলেন- যারা দোকানের ভাড়াটিয়া রয়েছেন তারাও কালীবাড়ি পরিচালনা কমিটিতে রয়েছেন। তাহলে কিভাবে ভাড়া বাড়ানো হবে। দোকানের সিকিউটির টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে কিন্তু অনেক ভাড়াটিয়া আছেন যারা সিকিউটির টাকা দেননি। জেলা প্রশাসক দায়িত্বকালীন সময়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করে কিছু ভাড়া বাড়িয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে আর ভাড়া বাড়ানো হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই উপযুক্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হোক।
এ ব্যাপারে কালীবাড়ি পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট পূণ্যব্রত চৌধুরী বিভু জানান, কালীবাড়ি সুন্দরভাবেই পরিচালনা করা হচ্ছে। যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব নিয়ে কারো মনের ক্ষোভ থেকে আনা হয়েছে। আমাদের কিছুটা ত্রুটি রয়েছে আমরা নিয়মিত বসতে পারছি না। পূজার পর কালীবাড়ির বিষয় নিয়ে আমরা বসবো।