![](https://dailyhabiganjermukh.com/wp-content/uploads/2024/09/Untitled-1-1.jpg)
হবিগঞ্জে পাহাড়ি ছড়ার লাল বালু সাদা বালু ও সিলিকা বালু থেকে সরকারের বেশ রেভিনিউ আসে
আতাউর রহমান কানন
১৯ আগস্ট ২০০৭, রবিবার। সকাল ৯টায় লাখাই উপজেলার বুল্লা ইউনিয়ন ভূমি অফিস পরিদর্শনের জন্য বের হই। লাখাইয়ের নি¤œাঞ্চল বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। সে রিপোর্টও আমার কাছে ছিল। আমি ১০টায় ইউএনওকে নিয়ে প্রথমে ইউনিয়ন ভূমি অফিস পরিদর্শন করি। এরপর বন্যাকবলিত এলাকাসমূহ দর্শন করি। আমি ইউএনওকে একটি ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়ন করে জেলায় পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দিয়ে বিকেল আড়াইটায় সদরদপ্তরে ফিরে আসি।
রাতে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের নৈশভোজে যোগদান করি। কিছুদিন আগে সেনা ইউনিটের সিও কর্নেল মনিরুল ইসলাম আখন্দের উদ্যোগে বিবদমান-বিভক্ত সাংবাদিকগণ ভেদাভেদ ভুলে তাঁদের খ- সংগঠন বিলুপ্ত করে প্রেসক্লাবের সাথে একীভূত হন। মূলত সে কারণেই আজকের এই নৈশভোজের আয়োজন। এ অনুষ্ঠানে প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে কর্নেল মনির, এসপি রফিক ও আমাকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
২০ আগস্ট ২০০৭, সোমবার। সকাল সাড়ে ১০টায় মাধবপুর উপজেলাধীন হবিগঞ্জ গ্যাসফিল্ডে যাই। সেখানে নতুন একটি কূপের খনন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করি। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. শেখ আবদুর রশিদ এ কূপ খনন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ১৯৬৩ সালে আবিষ্কৃত দেশের এই অন্যতম বৃহৎ গ্যাসফিল্ডে বিভিন্ন সময়ে পর্যায়ক্রমে ১০টি কূপ খনন করে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছিল। আজ ১১তম কূপের খনন কাজ শুরু হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এ কূপ থেকে দৈনিক ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ সম্ভব হবে। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে বেলা ১২টায় হবিগঞ্জ সদরে ফিরে আসি।
২৩ আগস্ট ২০০৭, বৃহস্পতিবার। সকাল ৯টায় অফিসে যাই। ১০টায় সেনাবাহিনীর হবিগঞ্জ ইউনিট ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ণ কার্যক্রমের ওপর একটি প্রেজেন্টেশন দেয়। জেলার প্রায় সকল কর্মকর্তা এতে উপস্থিত থাকেন। দেশে নব্বই দশকে একবার ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা ও কার্ড প্রণয়নের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছিল। প্রায় ৭-৮ বছর সে কার্যক্রম চলার পর নিয়োজিত ভেন্ডর বা ঠিকাদারী ফার্মের ব্যর্থতার জন্য সে প্রকল্প ২০০০ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এতে নির্ভুল ভোটার তালিকা হতে জাতি বঞ্চিত হয়। আর সেসঙ্গে দেশের টাকারই শুধু শ্রাদ্ধ হয়। এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্য পুনরায় প্রকল্প নিয়ে সেনাবাহিনীকে কাজটি করার দায়িত্ব প্রদান করে। সেনাবাহিনী স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় কাজটি করার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পের অধীন হবিগঞ্জ জেলায় ১৬ অক্টোবর থেকে এ কাজ শুরু হয়ে ২০০৮ সালের ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করার একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এবার প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দেখে আশা করা যাচ্ছে- বর্ণিত কাজটি সুসম্পন্ন হবে।
বিকেল ৪টায় জেলা বালু মহালের দরপত্র সংক্রান্ত সভা করি। এ জেলায় জলমহালের মতো বালু মহালের ব্যাপ্তি না হলেও মূল্যমানের দিক থেকে কম না। পাহাড়ি ছড়ার লাল বালু, সাদা বালু ও সিলিকা বালু থেকে সরকারের বেশ রেভিনিউ আসে।
২৭ আগস্ট ২০০৭, সোমবার। সকাল সাড়ে ৮টায় সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের অফিসের উদ্দেশে রওনা করি। সেখানে পৌঁছে সাড়ে ১০টা থেকে বিভাগীয় চোরাচালান টাস্কফোর্সের সভা-সহ পরপর কয়েকটি সভায় অংশগ্রহণ করি। সভা শেষে বিকেল ৫টায় হবিগঞ্জ ফিরে আসি।
বাসায় এসে দেখি ঢাকা থেকে আমার সহধর্মিণী পুত্র-কন্যাসহ ঠিকঠাক মতোই বাসায় এসে পৌঁছেছে। এবার তারা অনেকদিন পরই হবিগঞ্জ এসেছে।
রাত ৯টায় সপরিবারে আমির-চাঁন কমপ্লেক্সে যাই। সেখানের স্কাই কুইন লাউঞ্জে আমার অফিসের ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন নাহারের বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় যোগদান করি।
পরের দিন অফিসের বাইরে কোনো প্রোগ্রাম ছিল না। সারাদিন অফিসের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এবার হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং ও লাখাইয়ের হাওড় এলাকায় বন্যায় কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারিভাবে বন্যাদুর্গতদের যথাসম্ভব ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এর বাইরেও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠন সাহায্য সহায়তা করে যাচ্ছে। আজ সকালের দিকে বাংলাদেশ কাজী সমিতি, হবিগঞ্জ জেলা শাখা ও হবিগঞ্জ মহিলা উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকে পৃথকভাবে ১০হাজার টাকার চেক জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিলে প্রদান করা হয়।
২৯ আগস্ট ২০০৭, বুধবার। সকাল ৯টায় সার্কিট হাউজে যাই। সেখানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরপর তিনটি সভায় অংশগ্রহণ করি। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত জেলার বিভিন্ন কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। কিন্তু দেশের বর্তমান জরুরি অবস্থায় কিছু বিশেষ কমিটির সভা সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সভাপতিত্বেই হচ্ছে।
১ সেপ্টেম্বর ২০০৭, শনিবার। সারাদিন বাসাতেই কাটাই। আকাশটা ভালো থাকায় সন্ধ্যা ৭টায় টেনিস মাঠে যাই। ঘণ্টাখানেক টেনিস খেলে বাসায় ফিরে আসি। আজ পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামের বাসায় সপরিবারে দাওয়াত খেতে যাই। তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকার বাসিন্দা। বলা যায়, আমার দেশের বাড়ির কাছাকাছি এলাকার মানুষ। তবে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন দেখে মনে হয়েছে, এককালের কাশিমপুরের জমিদারের চেয়েও কম না। এছাড়া তিনি যে ভোজনরসিক তা তাঁর দেহই সাক্ষী। আমাদের ঠেলেঠুলে খাইয়ে একবারে নাভিশ্বাস তুলে দেন। বাসায় ফিরে অতিভোজনের কষ্টে রাতে একরকম নির্ঘুম কাটিয়েছি। কর্নেল মনিরও সপরিবারে দাওয়াতি ছিলেন। পরদিন সকালে তিনি আমাকে জানান যে, রাতটা কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে কাটিয়েছেন।
২ সেপ্টেম্বর ২০০৭, রবিবার। সকাল ১০টায় মাধবপুর উপজেলায় গিয়ে আমার পূর্বনির্ধারিত প্রোগ্রামে যোগদান করি। সেখানে ইউএনও আলোর সন্ধানে শিক্ষা ফাউন্ডেশনের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করে। এ সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকারীগণ ফাউন্ডেশন গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং উপস্থিত অনেকেই আশাতীত অনুদানের প্রতিশ্রুতি দেন। আমি যে একসময় এই উপজেলার ইউএনও ছিলাম, সে কথাও তাঁদের বক্তব্যে বলতে ভুলেননি। উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিকেল ২টায় নিজ অফিসে ফিরে আসি।
বিকেল ৪টায় আমার অফিসের সহকারী কমিশনার হেলাল হোসেনের বদলিজনিত বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। আমি সে অনুষ্ঠানে যোগদান করি। হেলাল উচ্চশিক্ষা গ্রহণার্থে ইংল্যান্ডে যাচ্ছে। সবাই তার শুভকামনা করে বিদায় জানাই।
আজ রাতের সংবাদে দেখলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন পেপার-পত্রিকায় খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তার হওয়ার খবর বেশ জোরালোভাবেই পরিবেশন করা হয়েছে। সংসদভবন এলাকার একটি বাসাকে সাবজেল ঘোষণা করে তাঁকে সেখানে অন্তরীণ করা হয়েছে। দেশে জরুরি অবস্থা বিরাজমান থাকায় এ গ্রেপ্তার নিয়ে কোনো রাজনৈতিক সমালোচনা বা টুশব্দ নেই। অবশ্য দেশবিদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন খেলা কোনো অস্বাভাবিক না।
৫ সেপ্টেম্বর ২০০৭, বুধবার। সকাল ১১টায় নবীগঞ্জ উপজেলার গোপলার বাজার ইউনিয়ন ভূমি অফিস পরিদর্শনে যাই। ভূমি উন্নয়ন করের দাবি ও আদায় কার্যক্রম নিরীক্ষা করি। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করি। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু কাজকর্মের প্রতি যতœশীল হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিদের্শনা দিয়ে গোপলার বাজার হাইস্কুলে যাই। ক্লাশে ক্লাশে ঢুকে পড়ার মান যাচাই করি। স্কুলের প্রতিটি ক্লাশেই ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। পড়ার মান তেমন উল্লেখ করার মতো না। আমি প্রধান শিক্ষককে কিছু উপদেশ-নির্দেশনা দিয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে আসি। এরপর বাজারের অদূরে অবস্থিত দেবপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যাই। চেয়ারম্যান-মেম্বার ও গ্রাম পুলিশগণ আমার আগমন পূর্বাবহিত থাকায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। আমি গ্রাম পুলিশদের কাজকর্ম ও তাদের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে শুনলাম। তাদের বেতনভাতা নিয়মিত পরিশোধ করা হচ্ছে বলে জানা যায়। অতঃপর সেখান থেকে আমি সাড়ে ১২টায় নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে গিয়ে পূর্বনির্ধারিত গভর্নিং বডির সভায় সভাপতিত্ব করি। সভা শেষে কলেজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত নবীনবরণ অনুষ্ঠানে যোগদান করি। বিকেল ৪টায় নবীগঞ্জের ভ্রমণ শেষ করে সদর দপ্তরে ফিরে আসি।
সন্ধ্যা ৭টায় রোটারি ক্লাব, হবিগঞ্জ শাখার ১৭ঃয ওহংঃধষষধঃরড়হ ঈবৎবসড়হ-তে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করি। সেখান থেকে ডিনার শেষে বাসায় ফিরতে রাত ১১টা বেজে যায়। তবে অভিজাত এ ক্লাবের আয়োজনের প্রশংসা করতেই হয়। চলবে…