আটক নোয়াজ আলী হত্যার দায় স্বীকার করে বলেন, আজ থেকে চার বছর আগে কবিরাজের মাধ্যমে নোয়াজ আলীর ছেলেকে তাবিজ করে মেরে ফেলে নুরুল ইসলাম। এ থেকেই নোয়াজ আলীর রাগ-ক্ষোভ জন্মায় নুরুল ইসলামের প্রতি। ঘটনার চার বছর পর গত ২১ সেপ্টেম্বর কৌশলে কাজের কথা বলে তাকে দেবিদ্বার নিয়ে আসেন নোয়াজ। গত সোমবার গভীর রাতে ঘুমন্ত নুরুল ইসলামকে গাছের গুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন তিনি। হত্যার পরপরই একই ঘরে মাটিচাপা দিয়ে রাখেন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ কুমিল্লায় পিটিয়ে হত্যার পর ঘরের মধ্যেই মাটি চাপা দিয়ে রেখেছিলেন লাশ। শিয়াল-কুকুরে মাটি আচঁড়ে বের করে ফেলে একটি হাত। বের হওয়া অর্ধগলিত হাত থেকে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র দুর্গন্ধ। দুর্গন্ধের উৎপত্তি খুঁজতে গিয়ে দেখা মেলে গর্তে রয়েছে মানুষের হাত। ঘটনাটি ঘটে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বারুর-পিরোজপুর গ্রামের সীমান্তে। গতকাল শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) মাটি চাপা দেওয়া অর্ধগলিত লাশটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর পরপরই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৩ জনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হত্যাকা-ের জড়িত না থাকায় দুই জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের হাতে আটক রয়েছেন নোয়াজ আলী (৬০) নামে এক ব্যক্তি। তিনি নবীগঞ্জ উপজেলার বড়কান্দি এলাকার আব্দুল আলী ছেলে। নিহত নুরুল ইসলাম (৪০) নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা গ্রামের মরগিছ ইসলামের ছেলে।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় নিহতের লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত নোয়াজ আলীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হওয়ার পর তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) শাহিনুল ইসলাম।
জানা যায়, নুরুল ইসলামকে দিনমজুরের কাজের কথা বলে গত ২১ সেপ্টেম্বর দেবিদ্বার নিয়ে যান অভিযুক্ত নোয়াজ আলী। দুজনই থাকতেন চরবাকর-এলাহাবাদ সংযোগ সড়কের সাথে বারুর-পিরোজপুর গ্রামের সীমান্তের একটি ভাড়া বাসায়। নোয়াজ আলী দেবিদ্বারের বিভিন্ন এলাকায় লোক নিয়ে শ্রমিকের কাজ করতেন।
জাফরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. নাসির বলেন, লাশ দেখার পর আমরা নিহতের সাথে থাকা নোয়াজ আলীকে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় ধরে আনি। তখন আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি লোকটা কি ভাবে মারা গেছেন। তিনি এক পর্যায়ে হত্যার দায় স্বীকার করে বলেন, আজ থেকে চার বছর আগে কবিরাজের মাধ্যমে নোয়াজ আলীর ছেলেকে তাবিজ করে মেরে ফেলে নুরুল ইসলাম। এ থেকেই নোয়াজ আলীর রাগ-ক্ষোভ জন্মায় নুরুল ইসলামের প্রতি। এ ঘটনার চার বছর পর গত ২১ সেপ্টেম্বর শনিবার কৌশলে কাজের কথা বলে তাকে দেবিদ্বার নিয়ে আসেন। গত সোমবার গভীর রাতে ঘুমন্ত নুরুল ইসলামকে গাছের গুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন তিনি। হত্যার পরপরই একই ঘরে মাটিচাপা দিয়ে রাখেন।
স্থানীয় মুদি দোকানদার আলী আকবর, রফিকুল ইসলাম ও স্বপ্না বেগম বলেন, সকালে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে, যা সহ্য করার মতো ছিল না। আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। কিন্তু পাইনি। পরে চরবাকর-এলাহাবাদ সংযোগ সড়ক দিয়ে হাঁটাচলা করার সময় স্থানীয় লোকজন দেখতে পান সড়কের পাশে একটি ঘরে গর্তের মধ্যে মানুষের হাত। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ এসে গর্ত থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
দেবিদ্বার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহিনুল ইসলাম বলেন, লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় এনেছিলাম। জিজ্ঞাসাবাদে দুজনের জড়িত থাকার সত্যতা না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া নোয়াজ আলী নামে একজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com