বায়তুস সালাম জামে মসজিদে জুমার খুৎবায় মুফতি মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ

সৈয়দ মিজান ইব্রাহীম ॥ হবিগঞ্জ শহরের নিউ মুসলিম কোয়ার্টার (গোসাইপুর) এলাকাস্থ বায়তুস সালাম জামে মসজিদে জুমার খুৎবায় মুফতি মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ বলেছেন, মহান রাব্বে কারীম সূরা বাকারাহ’র ২৭৫নং আয়াতের প্রারম্ভে ইরশাদ করেন- যারা সুদ খায় কিয়ামতের দিন তারা সে ব্যক্তির ন্যায় দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দিয়েছে। (আল-কুরআন)
তিনি বলেন, সুদ খাওয়া, সুদ দেওয়া এবং সুদের লেনদেনে সাহায্য সহযোগিতা করা সবই হারাম এবং অভিশপ্ত কাজ। এ সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ করেন- হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) সুদ দাতা, সুদ গ্রহীতা, সুদ লেনদেনের লেখক ও সাক্ষীদ্বয়কে লানত করেছেন। আরও বলেছেন- তারা সকলে সমান অপরাধী। (সহীহ মুসলিম)
তিনি আরও বলেন, ‘সুদ’ আপন মায়ের সাথে যিনা করার থেকেও মারাত্মক গুনাহ। এ সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে নবী করীম (স.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেছেন, সুদের সত্তর প্রকার গুনাহ রয়েছে। তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা ছোট গুনাহ হচ্ছে- কোনো ব্যক্তি তার মায়ের সাথে যিনা করার সমতুল্য। (আল-মুসতাদরাক, হাকিম)
তিনি বলেন, সুদ খাওয়ার গোনাহ আল্লাহর নিকট ব্যভিচারের চেয়েও বড়। ফিরিশতার হাতে গোসল লাভকারী সাহাবী হযরত হানযালা (রা.) এর পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (স.) ইরশাদ করেন, জেনে শুনে এক দিরহাম পরিমাণ সুদ খাওয়ার গোনাহ আল্লাহর নিকট ৩৬ বার ব্যভিচার করার চেয়েও বড়। (মুসনাদে আহমদ)
তিনি আরও বলেন, সুদ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। এই মর্মে হাদীসে উল্লেখ করেন- হযরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে রাসুলুল্লাহ (স.) বর্ণিত: তিনি বলেন, সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সাহাবীগণ আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (স.)! সেগুলো কি? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, (২) যাদু, (৩) আল্লাহ তা’আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা (৪), সুদ খাওয়া, (৫) ইয়াতিমের মাল গ্রাস করা, (৬) যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবা সতী-সাধ্বী মুমিন নারীদের অপবাদ দেয়া। (সহীহ বুখারী)
তিনি সুদখোরদের সম্পর্কে ভয়ানক শাস্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (স.) ইরশাদ করেন, আজ রাতে আমি স্বপ্ন দেখেছি যে, দুই ব্যক্তি আমার নিকট এসে আমাকে এক পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেলো। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌঁছলাম। নদীর মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেক ব্যক্তি নদীর তীরে, তার সামনে পাথর পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝখানের লোকটি যখন বের হয়ে আসতে চায়, তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথর খন্ড নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে যতবার সে বেরিয়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে কে? সে বলল, যাকে আপনি রক্তের নদীতে দেখছেন, সে হলো সুদখোর। সে স্বীয় কার্যের শাস্তি ভোগ করছে। (সহীহ বুখারী)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, মিরাজের রাতে আমি এমন একদল লোকের নিকট উপস্থিত হলাম যাদের পেট ঘরের ন্যায় বড় এবং উহার ভিতরে বহু সাপ রয়েছে, যেগুলো পেটের বাহির হতে দেখা যায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিব্রাঈল! এরা কোন লোক? তিনি বললেন, এরা সুদখোর। (ইবনে মাজাহ)
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন- চার ব্যক্তির সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তাদেরকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন না এবং জান্নাতের স্বাদ গ্রহণ করতে দেবেন না। এ চার ব্যক্তি হলো: (১) মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি, (২) সুদখোর, (৩) অন্যায়ভাবে ইয়াতিমের মাল ভক্ষণকারী এবং (৪) পিতামাতার অবাধ্যতাকারী। (আল-মুসতাদরাক, হাকিম)
আলোচনার শেষপ্রান্তে বক্তা তার বক্তব্যে বলেন, সুদখোররা হচ্ছে সমাজের জন্য অভিশাপ, এরা সমাজ ব্যবস্থাকে শোষণ করছে, এদের গেঁড়াকলে পিষ্ট হয়ে অনেকে ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছে। ফলে শুরু হয় সমাজে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, ইত্যাদি। এতে বিঘিœত হয় সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তা। পরিশেষে সুদখোরদের সামাজিকভাবে বয়কট করার উদাত্ত আহবান জানিয়ে বক্তা তার আলোচনা সমাপ্ত করেন।