স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লুকড়া ইউনিয়নের ফান্দ্রাইল গ্রামে প্রতারণার মাধ্যমে নিজের মায়ের নামে জাল দলিল সৃষ্টি করে অন্যের ভূমি আত্মসাতের মামলার পলাতক আসামী ইংল্যান্ড প্রবাসী কামাল চৌধুরী ও তার মা হালিমা চৌধুরীসহ ৮ আসামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে মামলার বিচার কার্য শুরু করেছে আদালত। গত ৩০ জুন হবিগঞ্জের বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালতের বিচারক এ আদেশ দেন। এর আগে ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আমল আদালত-১ এর ভারপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াছির আরাফাত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ফান্দ্রাইল গ্রামের বাসিন্দা, বর্তমানে হবিগঞ্জ শহরের মোহনপুর এলাকায় বসবাসকারী হাজী আলতাফ মিয়া চৌধুরীর ছেলে ব্যবসায়ী মোঃ আমিরুল ইসলাম চৌধুরী তুহিনকে ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বীমা করার কথা বলে ফান্দ্রাইল গ্রামের মৃত আম্বর আলীর ছেলে লাউছ মিয়া হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজারের বদরুল আলম চৌধুরীর মালিকানাধীন হার্ডওয়ারের দোকানে নিয়ে যান। সেখানে লাউছ মিয়া ও বদরুল পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তুহিনকে তার দোকানের ২য় তলায় নিয়ে যান। ২য় তলায় পূর্ব থেকে তাদের সহযোগিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় লাউছ মিয়া আলাপ-আলোচনার মাঝে কৌশলে ১টি কাপে করে তাদের দই খাওয়ান। দই খাওয়ার পরপরই তুহিনের শরীরে ঝিমুনী ভাব আসে এবং তুহিন কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন মামলার ১নং আসামী লন্ডন প্রবাসী কামাল, তার সহযোগি লাউছ মিয়া, সজল মিয়া তাদের সঙ্গে থাকা ৮/১০টি টাইপ করা স্ট্যাম্পে তুহিনকে স্বাক্ষর করার কথা বলেন। তুহিন স্বাক্ষর করতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা তাকে হত্যার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক তুহিনের কাছ থেকে স্ট্যাম্পে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ ও স্বাক্ষর নিয়ে তুহিনের নামীয় পাকা বাড়ি, পুকুর, দোকানসহ ২৫ লাখ টাকা মূল্যের সম্পত্তি কামাল চৌধুরীর মা হালিমা চৌধুরীর নামে প্রতারণামূলক ভাবে দলিল সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে জাল দলিলের মাধ্যমে মোঃ আমিরুল ইসলাম চৌধুরী তুহিনের সম্পত্তি আত্মসাত করার অভিযোগে তিনি হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে (হবিগঞ্জ সদর) ৯ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-সিআর ৪০৯/২০ হবিগঞ্জ। মামলায় প্রধান আসামী করা হয় লন্ডন প্রবাসী কামাল চৌধুরীকে। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি সিআইডি পুলিশকে তদন্তের আদেশ দেন। পরবর্তীতে সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মুনসী আবু কুদ্দুস দীর্ঘ তদন্ত করে মোঃ আমিরুল ইসলাম চৌধুরী তুহিনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে আদালতে ৮জন আসামীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সকল আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন। মামলার অন্য আসামীরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন লাভ করলেও প্রধান আসামী কামাল চৌধুরী আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা হুলিয়া ও মালক্রোকের আদেশ দেন। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু নাঈম মোঃ শিবলী খায়ের এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।