প্রায় ৩৬ কিলোমিটার এ রেললাইনের শিক পাথর সিগন্যাল তার নাটবল্টু ও ওজন মাপার যন্ত্রপাতি এবং ৭টি স্টেশনের অবকাঠামোসহ কোটি কোটি টাকার মালামাল লুটপাট হয়ে গেছে

মোঃ মামুন চৌধুরী ॥ শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ বন্ধ হয়ে আছে ২১ বছর ধরে। এ ফাঁকে রেলপথের মালামাল লুটপাট হয়ে গেছে। পরিত্যক্ত রেল পথটির সাথে জড়িয়ে আছে শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের নাম। রেলপথটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন নামটি মুছে গিয়ে স্টেশন লেখা হবে। তাই জশংনের ঐতিহ্য রক্ষায় ও যাত্রীদের চলাচলের পাশাপাশি পণ্য পরিবহণের স্বার্থে দ্রুত এ রেলপথে পুনরায় ট্রেন চালুর দাবি স্থানীয়দের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার হবিগঞ্জ জেলা শহর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন হয়ে বাল্লা সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৫২ কিলোমিটার রেল লাইন স্থাপন করে। সে সময় জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ১৩টি বাগানের চা-পাতা রপ্তানি ও বাগানের রেশনসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানি করার একমাত্র মাধ্যম ছিল এ রেলপথ। স্বাধীনতার পর এরশাদ সরকারের প্রথম দিকে এ লাইনটি সর্বপ্রথম অঘোষিত ভাবে বন্ধ হয়। পরে আবার চালু হয়। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ এবং সর্বশেষ ২০০৩ সালে এ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে অঘোষিতভাবে বন্ধ হওয়ার পর থেকেই একটি প্রভাবশালী মহল রেলের বিশাল সম্পদের দিকে নজর দেয়। পরে আবার হবিগঞ্জ থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইনটি উঠিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়।
তার সাথে শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেল লাইনের প্রায় ৩৬ কিলোমিটার সড়কের রেলের শিক, পাথর, সিগন্যাল, তার, নাটবল্টু ও ওজন মাপার যন্ত্রপাতি এবং ৭টি স্টেশনের অবকাঠামোসহ কোটি কোটি টাকার মালামাল লুটপাট শুরু হয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত ৯৯ ভাগ লুটপাট হয়েছে। লুটপাটকারীরা অনেকেই এখন বিলাস বহুল বাড়ি ও গাড়ির মালিক। এছাড়া এ রেলপথের কোটি কোটি টাকার সরকারী জমিও দখল করে নিয়েছে একশ্রেণীর লোকজন। এসব জমিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ও সবজি বাগান গড়ে উঠেছে।
শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের ঊর্ধ্বতন উপ-প্রকৌশলী পথ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাইফুল্লাহ রিয়াদ বলেন, পরিত্যক্ত স্টেশন ঘরগুলো ঝরে ঝরে পড়ছে। এ পথ পুনরায় সংস্কার করে ট্রেন চালুর জন্য ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছ থেকে কোন নির্দেশনা আসেনি। আর যদি ট্রেন চালু না হয় তবে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন নাম পাল্টে স্টেশন হবে। কারণ জংশন থাকতে হলে ফাঁড়ি রেলপথ থাকতে হয়।
রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মীর সাব্বির আলী বলেন, পরিত্যক্ত এ রেলপথের এরিয়া শায়েস্তাগঞ্জ ও চুনারুঘাট উপজেলার প্রায় ৩৬ কিলোমিটার। বিশাল এ রেলপথে এখন চুরি হচ্ছে না। চুরি হলে প্রকৌশল বিভাগ থেকে অভিযোগ আসবে। অভিযোগ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ তৎপর আছে।
শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার গৌর প্রসাদ দাশ পলাশ বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ নামে থাকলেও কাজে নেই। এ রেলপথ সংস্কার করে ট্রেন চালুর ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। এখানে রেলপথটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণার সাথে সাথে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন থেকে স্টেশন হবে।
শায়েস্তাগঞ্জ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ গাজীউর রহমান ইমরান বলেন, রেলপথমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত শায়েস্তাগঞ্জে জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন এ রেলপথ আবারো চালু হবে। বাস্তবে এখনও চালু হয়নি। এ পথে ট্রেন চালু হলে হাজার হাজার মানুষের বিরাট উপকার হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে।