মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া না পর্যন্ত দন্ডপ্রাপ্তদের গলায় ফাঁস দ্বারা ঝুলিয়ে রাখতে হবে ॥ একজনকে ৩ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে

শায়েস্তাগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ শায়েস্তাগঞ্জের স্কুলছাত্র তানভীর হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদ-ের আদেশ দিয়েছেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। একই সাথে একজনকে ৩ বছরের কারাদ-ের পাশাপাশি মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক। তাছাড়া অপর জনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক স্বপন কুমার সরকার আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন। নিহত তানভীর (১৯) শায়েস্তাগঞ্জের নসরতপুর গ্রামের ফারুক মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলো- পশ্চিম নসরতপুর গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে উজ্জ্বল মিয়া (২৫), নুরপুর গ্রামের মলাই মিয়ার ছেলে শান্ত (২৬) ও বাছিরগঞ্জ বাজারের জলিল কবিরাজের ছেলে জাহিদ মিয়া (২৮)। তাছাড়া ৩ বছরের কারাদন্ডপ্রাপ্ত লিমন মররা গ্রামের মৃত মরম আলীর ছেলে।
সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সরওয়ার আহমদ চৌধুরী বলেন, আসামিরা পরিকল্পনা করে নির্মমভাবে তানভীরকে হত্যার পর লাশ পুঁতে রেখেছিল। একদিন পরই তাদের গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে গ্রেফতারকৃতরা। তাদের তথ্যমতে লাশ ও আলামত উদ্ধার করা হয়। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলার রায় দেন বিচারক। আদালতে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। রায়ে উল্লেখ করা হয়, মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া না পর্যন্ত দন্ডপ্রাপ্তদের গলায় ফাঁস দ্বারা ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি শায়েস্তাগঞ্জের নসরতপুরের বাসিন্দা তানভীর হোসেন নিখোঁজ হয়। এর পরই তার বাবার কাছে ৮০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে মোবাইল ফোনে কল আসে। এ ঘটনায় অনুসন্ধান চালিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি অজয় চন্দ্র দেব আসামিদের আটক করলে তারা তানভীরকে হত্যা করে পুকুরে লাশ পুতে রাখা হয়েছে বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
পুলিশ অনুসন্ধানে জানতে পারে, ৬ বছর আগে তানভীরের বাবার কাছে অপমানিত হয় মামলার আসামী উজ্জ্বল মিয়া ও তার বাবা। এ ঘটনার পর প্রবাসে চলে যায় উজ্জ্বল। ৬ বছর পর ২০২১ সালে দেশে ফিরে প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পনা করে উজ্জ্বল। পরিকল্পনা অনুযায়ী তানভীরকে ডেকে গ্রামের পুকুরপাড়ে নিয়ে আসে আসামি শান্ত। পরে শান্ত ও জাহিদ তানভীরকে ধরে রাখে ও উজ্জ্বল তানভীরের গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে মরদেহ পুকুরে কাঁদার মধ্যে চাপা দেয়। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তানভীরের বাবার মুঠোফোন নম্বরে কল দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয় বলেও পুলিশের অনুসন্ধানে উঠে আসে।