রাস্তায় প্রতিপক্ষের অর্ধশত লোক ঘেরাও করে আঘাতের পর আঘাত করে খুন করে তাকে ॥ নিহতের শরীরে ফিকলের ৩২টি আঘাতের চিহ্ন পায় পুলিশ ॥ খুনের ২১ বছর পর রায় ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার হুরগাও গ্রামের হারুন আহমদ নামে প্রতিপক্ষের এক মুরুব্বীকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় ৭ আসামীকে মৃত্যুদন্ড ও ১০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ আজিজুল হক এ রায় প্রদান করেন। রায়ে দন্ডিত প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আসামিদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন বিচারক। আদালতের পেশকার বাবলু মিয়া জানান, মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলেন- জালাল মিয়া, রুহুল আমিন মিলন, কাজল মিয়া, কুতুব উদ্দিন, রফিক মিয়া, জাকির হোসেন ও আব্বাস উদ্দিন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জজ মিয়া, ইব্রাহিম মিয়া, ইছহাক আলী, জিয়াউর রহমান, কালাম মিয়া, কতুব উদ্দিন-২, আব্দুল মতলিব, সায়েদ আলী, মিজাজ মিয়া, পলাতক আয়াত আলী।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, সদর উপজেলার হুরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি মেম্বার মিলন আহমেদ ও হারুন আহমেদের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। ২০০৩ সালে ইউপি নির্বাচনের পর এ বিরোধ আরও তীব্র আকার ধারণ করে। এরই জের ধরে ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে হারুন আহমেদসহ ৭/৮ জন নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল আহমেদকে দাওয়াত দিতে যান। এসময় পথে মিলন আহমেদের নেতৃত্বে অর্ধশত লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালান। হামলায় হারুন আহমেদ ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার শরীরে ৩২টি ফিকলের (সুচালো অস্ত্র) আঘাতের চিহ্ন পায় পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সুমন আহমেদ বাদী হয়ে সদর থানায় ৪৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে একই বছরের ১৮ আগস্ট সব আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। মামলায় ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় বিচারক এ রায় প্রদান করেন। মোট ৪৭ আসামীর মধ্যে সাজার আদেশপ্রাপ্ত ১ জন পলাতক ও বাকী ১৬ জনসহ ৩৮ আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মামলা চলাকালে মারা গেছেন ৮ আসামী। নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় ২২ জনকে খালাস দেওয়া হয়। মামলার ২১ বছর পর রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
এই রায়ে নিহতের ছেলে রাহাত আহমেদ সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। তবে আসামি পক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানান।
হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ২০০৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার হুরগাঁও গ্রামের প্রতিপক্ষ গোষ্ঠীর মুরুব্বী হারুন মিয়াকে রাস্তায় পথরোধ করে আক্রমণ করে হত্যা করা হয়।