স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুদে ৬০ হাজার টাকা ধার নিয়ে ২ বছরে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা সুদ দেয়ার পরও নিরীহ দুধ ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করার অভিযোগ উঠেছে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামের সুদের ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে। তাদের নির্যাতন থেকে মুক্তির জন্য সমাজপতিদের কাছে গিয়েও রক্ষা পাননি দুধ ব্যবসায়ী দিগেন্দ্র চন্দ্র গোপ।
সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামের জালাল উদ্দিন ওরফে জালু মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া ও একই গ্রামের আব্দুল হাসিমের ছেলে আব্দুল হামিদ দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ধানের ব্যবসার আড়ালে সুদের ব্যবসা করে আসছেন। ২০১৬ সালে একই ইউনিয়নের এড়ালিয়া গ্রামের দিগেন্দ্র চন্দ্র গোপ ৬০ হাজার টাকা সুদে ধার নেন। ওই টাকায় প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা করে দুই বছরে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা সুদ দেন। ২০১৮ সালের শেষে দিগেন্দ্র গোপ বাবুল ও হামিদের কাছে তাদের সুদের উপরে আসল ৬০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেন। এ সময় সুদ ব্যবসায়ীরা তার কাছে আরো ১৫ দিনের লাভ ৩ হাজার টাকা দাবি করেন। দিগেন্দ্র ওই লাভের টাকা না মওকুপ করে দেয়ার জন্য তাদের অনুরোধ করেন। এতে সুদ ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ২০১৯ সালে দিগেন্দ্রের দেওয়া গ্রামীণ ব্যাংকের একটি খালি চেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা লিখে চেকটি ডিজঅনার করান। পরবর্তীতে তারা দিগেন্দ্রকে আসামী করে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ দিগেন্দ্রকে গ্রেফতার করলে তিনি কারাভোগ করেন। পরবর্তীতে টাকা দেওয়ার শর্তে জামিনে মুক্তি লাভ করেন। পরে তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দেন এবং ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মইনুল হক আরিফ, সাবেক চেয়ারম্যান সাহেব আলী ও ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলামের কাছে শালিসের জন্য যান। কিন্তু সুদ ব্যবসায়ী বাবুল ও হামিদ তাদের ডাকে সাড়া দেননি।
দিগেন্দ্র গোপ জানান, পরিবারের একটি সমস্যা সমাধানের জন্য আমার স্বাক্ষরিত একটি খালি চেক দিয়ে বাবুল ও হামিদের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা সুদে নেই। ওই টাকার বিপরীতে আমি ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা লাভ ও আসল ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। কিন্তু ১৫ দিনের ৩ হাজার টাকা লাভ না দেওয়ায় তারা আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করেন এবং আমার বিরুদ্ধে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করেন। শুধু আমিই নয়, এলাকার বিভিন্ন মানুষকে সুদে টাকা দিয়ে তারা এভাবে নির্যাতন করে আসছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
পইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ মইনুল হক আরিফ জানান, এ বিষয়টি দিগেন্দ্র গোপ আমাকে জানালে আমি ওয়ার্ড মেম্বারের মাধ্যমে শালিসের আয়োজন করি। কিন্তু আমার ডাকে আব্দুল হামিদ ও বাবুল মিয়া আসেননি। এ ব্যাপারে সুদের ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ জানান, আমাদের কাছে ধান বিক্রি করবেন বলে দিগেন্দ্র গোপ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আমাদের ধান না দেওয়ায় আমরা টাকা ফেরত চাই। এ প্রেক্ষিতে তিনি আমাদের ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার চেক দেন। ব্যাংকে গিয়ে আমরা ওই পরিমাণ টাকা না পাওয়ায় চেকটি ডিজঅনার হয় এবং আমি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করি।