কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা রোজিনা নবীগঞ্জের দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদের একটি ভূয়া জন্মনিবন্ধন তৈরি করে হয়ে যান রোকেয়া ॥ রোকেয়াকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে এসে রোকেয়া আক্তার ওরফে রোজিনা আক্তার (১৮) নামের এক রোহিঙ্গা বালিকা ও আমানুর রশীদ মাহি (২৬) নামে এক দালালকে আটক করা হয়েছে।  রোববার (২২ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে জেলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃত রোকেয়া আক্তার কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং মাহি হবিগঞ্জ শহরের রাজনগর এলাকার বাসিন্দা।
বিষয়টি পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনে অবগত করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনমুন নাহার আশা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে ওই রোহিঙ্গা নারীর প্রকৃত পরিচয় জানা যায়। পরে তাদের হবিগঞ্জ সদর থানায় সোপর্দ করা হয়।
হবিগঞ্জ মডেল থানার এসআই কৃষ্ণধন সরকার জানান, আটককৃত মাহির বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং জালিয়াতির মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক মো. বজলুর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রোহিঙ্গা রোজিনা আক্তার কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসে নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদের একটি ভূয়া জন্মনিবন্ধন তৈরী করেন। এতে নিজের নাম লিখেন রোকেয়া বেগম। পিতা মো. নাজমুল হোসেন চৌধুরী এবং মাতার নাম লিখেন শেখ উম্মে শেলিনা শিবু। গ্রাম দেওতৈল, পোঃ আউশকান্দি হীরাগঞ্জ, উপজেলা নবীগঞ্জ, নবীগঞ্জ। এ জন্মনিবন্ধন দিয়ে দালাল আমানুর রশিদ মাহির মাধ্যমে রোববার হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে আসেন। তখন দায়িত্বরতদের সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন তাকে আটক করা হয়। এ সময় তাকে পাসপোর্ট করতে নিয়ে যাওয়া আমানুর রশিদ মাহিকেও আটক করা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গা নারী রোকেয়া জানায়, সে কক্সবাজার উকিয়া ক্যাম্পের বাসিন্দা। রোকেয়ার এক কথিত বড় ভাই তাকে শনিবার রাতে কক্সবাজার থেকে রওয়ানা হয়ে রবিবার সকালে হবিগঞ্জে নিয়ে আসে। পরে মাহির সাথে সে পাসপোর্ট অফিসে আসে। অফিসের কর্মকর্তাদের সন্দেহ হলে তারা তাকে আটক করে। রোহিঙ্গা নারী রোকেয়া ভালোভাবে বাংলা বলতে ও বুঝতে না পারায় তার কাছ থেকে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তার জমা দেয়া কাগজপত্রে দেখা যায়, জন্মসনদ নেয়া হয়েছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাগ ইউনিয়ন থেকে।
দালাল মাহি জানায়, আমি ওই নারীকে চিনি না। জনৈক ব্যক্তি পাসপোর্টর ফরম পূরণ করতে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসে। তবে পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, মাহী পাসপোর্ট অফিসের অভিযুক্ত দালাল, তাকে বার বার সতর্ক করা হলেও সে সংশোধন হয়নি। পাসপোর্ট অফিস থেকে জেলা প্রশাসনে দালালদের যে তালিকা দেয়া হয়েছে তাতে মাহির নাম রয়েছে। খবর পেয়ে হবিগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনমুন নাহার আশা সহ পুলিশের কর্মকর্তারা পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনমুন নাহার আশা দালাল মাহিকে আটক করে তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের নির্দেশ এবং আটক রোহিঙ্গা নারী রোকেয়া বেগমকে পুলিশী নিরাপত্তায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন।
হবিগঞ্জ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বজলুর রশীদ জানান, একটি চক্র রোহিঙ্গা নারীদের পাচারের উদ্দেশ্যে ভূয়া কাগজপত্র দিয়ে পাসপোর্ট করানোর চেষ্টা করে আসছে। এ চক্রটির সাথে স্থানীয়দের সংশ্লিষ্টতা য়য়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনমুন নাহার আশা জানান, আটক দালালকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই চক্রটির সাথে কারা জড়িত তা বের করা যাবে।
দালালের বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. বজলুর রশিদ বলেন, হবিগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসকে দালালমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। এজন্য অফিসের প্রবেশ গেইটে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদি কোনো দালাল এখানে ঢুকে, তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। যার ফলশ্রুতিতে রোহিঙ্গা নারী ও তার সাথে আসা একজনকে আটক করে পুলিশে দেয়া হয়েছে।