জি কে গউছকে কারাগারে প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা দিতে আদালতের আদেশ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ¦ জি কে গউছসহ বিএনপির ৪ নেতার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। অন্য নেতারা হলেন- জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ সেলিম, স্বেচ্ছাসেবক দল আহ্বায়ক সৈয়দ মুশফিক আহমেদ ও যুবদল যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল আহমেদ চৌধুরী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আসামীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ূম জানান, সোমবার বিএনপির এ ৪ নেতাকে ঢাকা কারাগার থেকে হবিগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। তাদেরকে পৃথক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার তাদেরকে হবিগঞ্জ আদালতে হাজির করে জামিন আবেদন করলে বিচারক তা নামঞ্জুর করেন।
পুলিশ ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯ আগস্ট বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে ১ হাজার ২শ’ বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ এসল্ট ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করে। এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নিতে গিয়ে ২৯ আগস্ট ঢাকায় গ্রেফতার হন জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ সেলিম, স্বেচ্ছাসেবক দল আহ্বায়ক সৈয়দ মুশফিক আহমেদ ও যুবদল যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল আহমেদ চৌধুরী। একই দিন হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হলে রাতে ঢাকার কাকরাইল থেকে গ্রেফতার হন বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ। তাকে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মোহিত ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরকে কারাগারে বসে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
এদিকে ২০১৫ সালে পবিত্র ঈদের দিন হবিগঞ্জ কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় জি কে গউছকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় দায়েরকৃত একটি মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয়েছে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও টানা ৩ বারের নির্বাচিত হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছকে। একই সাথে আসামী পক্ষের আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে জি কে গউছকে কারাগারে ডিভিশন-১ (প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা) দেয়ার আদেশ দেন আদালত। মঙ্গলবার হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক এই আদেশ দেন। এর আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আলহাজ্ব জি কে গউছকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় দলীয় নেতাকর্মী সহ হাজার হাজার মানুষ আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন জি কে গউছকে এক নজর দেখার জন্য।
জি কে গউছের আইনজীবী আফজাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন- ২০১৫ সালে ১৮ জুলাই পবিত্র ঈদের দিন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হবিগঞ্জ কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় বিএনপি নেতা আলহাজ্ব জি কে গউছকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করে একাধিক খুনের মামলার আসামী যুবলীগ কর্মী ইলিয়াছ মিয়া ওরফে ছোটন। এ ঘটনায় হবিগঞ্জ কারাগারের জেলার মোঃ শামীম ইকবাল বাদী হয়ে হামলাকারী ইলিয়াছকে একমাত্র আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার এসআই সাহিদ মিয়া। আদালত ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে গত ২০ জুলাই হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবদুল আলীম রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ইলিয়াছকে দেড় বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেন। ইলিয়াছ শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার দাউদনগর গ্রামের সালেহ আহাম্মদ কনার পুত্র।
অপরদিকে একই ঘটনায় হবিগঞ্জ সদর থানার এসআই সানা উল্লা বাদী হয়ে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলাটি দীর্ঘ ৮ বছর যাবত তদন্তাধীন রয়েছে। দীর্ঘ দিন পর এই মামলায় জি কে গউছকে গ্রেফতার দেখাতে আদালতে আবেদন করেন মামলার আইও (সদর থানার ওসি তদন্ত) বদিউজ্জামান। এই আবেদনের বিষয়ে মঙ্গলবার শোনানী শেষে আদালত জি কে গউছকে এই মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখাতে আদেশ দেন। একই সাথে তাকে ডিভিশন-১ (প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা) দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট রাত ৭টার দিকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ জি কে গউছকে আটক করে। ৩০ আগস্ট ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকা সিএমএম কোর্টে হাজির করা হয়।