স্টাফ রিপোর্টার ॥ শনিবার বিকেলে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েক ঘন্টার সংঘর্ষে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল, এর একদিন পর গতকাল রবিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে শায়েস্তানগর আবারো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আবারো সংঘর্ষের আশংকায় ওই এলাকার ব্যবসায়ীসহ মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গতকালের সংঘর্ষের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে দোষারূপ করছে।
হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী বলেন- শনিবার বিএনপি পদযাত্রার নামে হবিগঞ্জ শহরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে। তারা পুলিশের উপর হামলা করে। তাদের হামলায় ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ আহত হয়। এরই প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। সমাবেশ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল বের করি। মিছিল শেষ করে আমরা আওয়ামী লীগের অফিসের দিকে ফিরছিলাম। এমন সময় হঠাৎ শায়েস্তানগরে বিএনপি নেতাকর্মীসহ সন্ত্রাসীরা আমাদের মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তারা পূর্ব থেকে ওৎ পেতে ছিল। তারা রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমাদের উপর আক্রমণ করে। এতে আমাদের ছাত্রলীগ যুবলীগ আওয়ামী লীগ শ্রমিকলীগের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট প্রেরণ করা হয়েছে।
অপরদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সাবেক ও হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক পদত্যাগী মেয়র জি কে গউছ বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে লাঠিসোটা সহকারে হঠাৎ আমাদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা করে। অফিসে ব্যাপক ভাংচুর করেছে। আমার বাসায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। পুলিশও তাদের সাথে যোগ দিয়েছে। হামলায় পৌর কাউন্সিলর শফিকুর রহমান সিতুসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মহিবুল ইসলাম শাহীন জানান, কোন কারণ ছাড়াই আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির অফিস ও জি কে গউছের বাসভবনে হামলা চলায়। খবর পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা এসে তাদের প্রতিহত করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ রঞ্জন দে জানান, হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে নেতাকর্মীরা আহত হয়। পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ধারণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলাকালে ওই এলাকার সকল দোকানপাট, যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। আতংকে মানুষ দিগি¦দিক ছোটাছুটি করে। এ সময় বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ক্লিনিকের গ্লাস ভাংচুর হয়। পুলিশ উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নিলে সন্ধ্যা ৭টায় সাঁজোয়া যানসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বেশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। গুরুতর আহত অবস্থায় শেখ সেবুল, সাব্বির আহমেদ রনি, মুহিবুর রহমান মাহি, সাইদুর রহমান, বাবুল আহমেদ, মুকুল মিয়া, হারুন মিয়া, ইমতিয়াজ শাওন, হানিফ মিয়া, রহিম, শেখ আব্দুল হাকিম, মুসা আহমেদ রাজুসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মাঝে আশংকাজনক অবস্থায় কয়েকজনকে সিলেট এবং ঢাকা প্রেরণ করা হয়।
সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, এত বেশি সংখ্যক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন যে ডাক্তার ও নার্সরা চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ নুরুল হক নিজে হাসপাতালে এসে তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম তাদারকি করেন। হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র আতাউর রহমান সেলিম আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসা কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি তদন্ত বদিউজ্জামান জানান, পুলিশ সংঘর্ষের খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।