জি কে গউছ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন না, তবে দলের হাই কমান্ড তাকে প্রার্থী হতে নির্দেশ দিলে তিনি মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিবেন

এসএম সুরুজ আলী ॥ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী এখন দেড় ডজন। গতকাল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই ৪ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়ন প্রত্যাহার ১১ ফেব্রুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১২ ফেব্রুয়ারি। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৯ জন, বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী ৭ জনসহ মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী ১৮ জন। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাকর্মীরা দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডের সাথে জোর লবিং করছেন। ইতিমধ্যে জেলা আওয়ামীলীগ দলীয় ৯ প্রার্থীর তালিকা কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে কেন্দ্র থেকে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।
সম্প্রতি হবিগঞ্জের ৩টি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীদের পরাজয়ের বিষয়টি মাথায় রেখেই দলীয় হাই কমান্ড হবিগঞ্জ পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী মনোনীত করবেন বলে দলের জেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোঃ মিজানুর রহমান মিজান, জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মর্তুজ আলী, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষকলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ নূরুল আমিন ওসমান, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য শংখ শুভ্র রায়, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোঃ নূরউদ্দিন চৌধুরী বুলবুল ও পৌর আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শেখ তারেক উদ্দিন সুমন। জেলা আওয়ামীলীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের নাম কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে। যেহেতু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে এ সপ্তাহের মধ্যে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন- নবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থীর বিজয় হয়েছে। একটি কেন্দ্রে সুক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে পরাজিত করা হয়েছে। আর শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। এছাড়াও মাধবপুরে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে সমস্যা, বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় সেখানেও পরাজয় ঘটেছে। এবার আশা করি সব দিক মাথায় রেখে দলীয় হাই কমান্ড হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নিধারণ করবেন।
এদিকে হবিগঞ্জ জেলার ৩টি পৌরসভায় বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচিত হওয়ায় হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দলটির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। তবে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন যাকে দেয়া হবে তার পক্ষেই সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন জেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ। অবশ্য ইতোপূর্বে দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ এর সাথে আলাপকালে জি কে গউছ বলেছিলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে আমি ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহন করিনি। দলের সিদ্ধান্তে অংশগ্রহন করেছি। আবারও দল থেকে আমাকে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের নির্দেশ দিলে আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবো না। গতরাতে জি কে গউছের ঘনিষ্ট কয়েকজনের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন না। তবে দলের হাই কমান্ড যদি তাকে প্রার্থী হতে নির্দেশ দেয় তাহলে তিনি মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিবেন।
জি কে গউছ ছাড়া বিএনপি থেকে নির্বাচন করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক এম ইসলাম তরফদার তনু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এনামুল হক সেলিম, জেলা যুবদল সভাপতি মিয়া মোঃ ইলিয়াছ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী ফরিদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুশফিক আহমেদ, জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব আহমেদ রিংগন।
এ ব্যাপারে জেলা যুবদল সভাপতি মিয়া মোঃ ইলিয়াছ জানান, দলের একজন কর্মী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন চাইবো। আশা রাখি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম চৌধুরী ফরিদ জানান, ছাত্রদলের রাজনীতির করতে গিয়ে বিভিন্ন সরকারের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এবার হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চাইবো। দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করবো। অন্যথায় দল যে সিদ্ধান্ত দেবে আমি তা মাথা পেতে নেবো। জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ রাজিব আহমেদ রিংগন জানান, ছাত্রদলের রাজনীতি করতে গিয়ে এ সরকারের হামলা ও মামলার শিকার হয়েছি। এর মধ্যে ছাত্রদলকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করেছি। এবার মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে শায়েস্তানগর এলাকার একক মেয়র প্রার্থী হিসেবে আমাকে সমর্থন দেয়া হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি দলীয় হাই কমান্ড সকল দিক বিবেচনা করলে আমাকেই মনোনয়ন দেবে।
এছাড়াও হবিগঞ্জের নাগরিক সমাজের প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি ব্যকস হবিগঞ্জ এর সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ শামছুল হুদা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান টিটু প্রমূখ। ইতোমধ্যে ব্যকস সভাপতি মোঃ শামছুল হুদা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।