হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার নিজের অফিস রুমে বসে জেলার প্রতিটি থানার কার্যক্রম দেখবেন। ৯টি থানায় বসানো হয়েছে আইপি ক্যামেরা। থানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কার্যক্রম দেখার পাশাপাশি থানাহাজতে থাকা আসামীদের প্রতিও নজর থাকবে পুলিশ সুপারের। থানায় কোন আসামীকে টর্চার করলে তাও এসপির নজরে পড়বে। থানা হবে দালাল মুক্ত।
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ থানার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে হবিগঞ্জের ৯টি থানায় আইপি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। গতকাল পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ‘এসপির চোখ’ নামে ওই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বিপিএম-পিপিএম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, ৯টি থানায় স্থাপিত আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে ওই সকল থানার কার্যক্রম মনিটরিং করা হবে। থানার ডিউটি অফিসার কি করছেন, হাজতখানার অবস্থা অর্থাৎ থানার অভ্যন্তরে যা কিছু ঘটবে তার সবকিছু মনিটরিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। থানা হাজতে অনেকে ‘সুইসাইড’ করে থাকেন। আর এর দায় এসে পড়ে পুলিশের কাঁধে। মিথ্যা অপবাধে পুলিশকে চাকুরি হারাতে হয়। শাস্তি পেতে হয়। এখন থেকে আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে ঘটনাস্থলের প্রকৃত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। এখন থেকে আর অহেতুক কোন পুলিশ সদস্যকে চাকুরি হারাতে হবে না। শাস্তি পেতে হবে না। সর্বোপরি পুলিশের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি থানা হাজতে কোন আসামীকে টর্চার করা হলে তাও পুলিশ সুপারের নজরে পড়বে। আসামীর নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।
‘এসপির চোখ’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ রবিউল ইসলাম, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মোঃ ইসমাইল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান জাহির, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী, হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাহিজ, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন, এটিএন নিউজ হবিগঞ্জ প্রতিনিধি আব্দুল হালিম, একাত্তর টিভি হবিগঞ্জ প্রতিনিধি শাকিল চৌধুরী। অনুষ্ঠানে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচঙ্গ সার্কেল) শেখ মোঃ সেলিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মাহমুদুল হাসান, সহকারি পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন, হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলী। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তাগণ বলেন, থানায় আইপি ক্যামেরা স্থাপন পুলিশ সুপারের একটি ভাল উদ্যোগ। থানায় সেবা নিতে যাওয়া সাধারণ মানুষ এর সুফল ভোগ করবে। হবিগঞ্জের ৯টি থানায় আইপি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে থানা এখন অনেকটা দালাল মুক্ত হবে। যেহেতু পুলিশ সুপার নিজে এটি মনিটরিং করবেন তাই এর সুফল পাবে সেবা প্রত্যাশিরা। শুধু তাই নয় পুলিশও এর সুফল ভোগ করবে। অনেক সময় দেখা যায় দালালদের কারণে পুলিশ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। কাজে ব্যাঘাত ঘটে। পুলিশ সুপারের এ উদ্যোগের ফলে পুলিশ দালালদের হাত থেকে রেহাই পাবে। কেউ থানার অভ্যন্তরে কোন অপরাধ করতে চাইলে ভেবে চিন্তে করবে। প্রত্যেক অফিসারের মোবাইলে সফ্টওয়্যার আপডেট করা আছে। তিনি ইচ্ছে করলে যে কোন স্থান থেকে থানার কার্যক্রম মনিটরিং করতে পারবেন। অনুষ্ঠানে হবিগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিশেষ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ উদ্যোগে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে পুলিশ সুপার ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানান।