ইউএনও বললেন, একঘরে করার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি ॥ খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো

মাধবপুর প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আদাঐর ইউনিয়নের সম্ভদপুর গ্রামে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে মিটিং করে আবিদ মিয়ার পরিবারের ৩২ সদস্যকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ যখন আতস্কিত ঠিক সেই মুহূর্তে, মিটিংয়ে তাদের একঘরে করার ঘোষণা দিয়ে গ্রামের কাউকে ওই পরিবারের সঙ্গে না মেশার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। কেউ ওই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মিশলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়েছে। গত ৫-সেপ্টেম্বর এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাজচ্যুত করার বিষয়ে সমাজচ্যুত ব্যক্তি ওই গ্রামের এনু মিয়ার পুত্র আবিদ মিয়া বাদী হয়ে ৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সম্ভদপুর গ্রামের মাতব্বর আব্দুল আলী, এমবাদ উল্লাহ, স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুল্লা মাস্টার মঙ্গল আলী, শফিক মিয়ার নেতৃত্বে সম্ভদপুর গ্রামের হাবিবুল্লাহ মাস্টার এর বাড়িতে গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এনু মিয়ার পুত্র আবিদ মিয়ার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগকারী আবিদ মিয়ার মেয়ের বিবাহ ছিল। বিবাহের আগের দিন আবিদ মিয়ার নিকট আব্দুল আলী ও তার সহযোগীরা দশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।
আবিদ মিয়া টাকা দিতে অনিহা প্রকাশ করলে বিয়ের দিন মসজিদের ইমামসহ বরযাত্রীদেরকে বিয়ে বাড়িতে আসতে বাঁধা প্রদান করে। এমনকি, মসজিদের মাইকে ঘোষণা করে দেয় আবিদ মিয়ার পরিবারের লোকজন সমাজের বাহিরে, তাদের বাড়িতে কেউ যেন বিয়ে এবং অন্যান্য কাজে না যায়। তাদের বাঁধার কারণে বিয়ের দিন আবিদ মিয়া ও বরযাত্রীদের মান-সম্মানসহ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধিত হয়। বর্তমানে আবিদ মিয়ার পরিবারের লোকজনকে হাঁটে ঘাটে মাঠে কোথাও চলাফেরা করতে দেয়া হচ্ছে না এবং প্রকাশ্যে হুমকি প্রদান করা হচ্ছে।
এছাড়া আবিদ মিয়া অভিযোগে উল্লেখ করেন এমনভাবে এক ঘরে করে রাখার অবস্থা চলতে থাকলে আবিদ মিয়া ও তার পরিবারের লোকজনদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
ওই পরিবারের সদস্য আবিদ মিয়ার ভাই ফিরোজ মিয়া বলেন, আমরা জমিতে যেতে পারছি না, চাষ করতে পারছি না। আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রাম্য মাতব্বর আব্দুল আলী উরুফে কাইল্লা অভিযোগ স্বীকার করেন।
তিনি বলেন এটা আমার একার সিদ্ধান্ত না, গ্রামের কোন আইনকানুন মানে না এবং তারা গত দুই বছর যাবত মসজিদের ইমাম সাহেবের বেতন বা হাদিয়া দেয় না তাই গ্রামবাসী হাবিবুল্লাহ স্যারের বাড়িতে মিটিং করে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারা মসজিদের ইমামের বেতন দিলে আমরা তাদের নিয়ে আগের মতো স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করবো।
এ বিষয়ে জানতে শিক্ষক হাবিবুল্লাহ মাস্টারের সাথে ফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। আদাঐর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক পাঠান বলেন এমন অভিযোগ আমি এখনও পাইনি তবে কাউকে সমাজচ্যুত করা এটা খুবই খারাপ কাজ আমি এ বিষয়ে খবর নিচ্ছি।
মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। আমি এখনই খবর নিয়ে দেখছি। তবে এমন কেউ করে থাকলে এটা আইন পরিপন্থি। কারণ দেশে সমাজচ্যুত করার আইন নাই। এই বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা হলে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসনূভা নাসতারান বলেন, একঘরে করে দেওয়ার বিষয়ে আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমি খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।