করোনার রূপ পরিবর্তন ॥ বাংলাদেশে করোনার রূপ পরিবর্তনের হার ১২.৬০%, বিশ্বে ৭.২৩%
এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জে করোনা আক্রান্ত হয়ে আইনজীবীসহ তিন জন মারা গেছেন। রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা গেছেন অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম। এছাড়া করোনা আক্রান্ত হয়ে বাহুবল ও বানিয়াচঙ্গের দুজন মারা গেছেন।
অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলামের পারিবারিক সূত্র জানায়, এক সপ্তাহ আগে মো. নজরুল ইসলামের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এরপর তাকে ঢাকার মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় পরে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকালে তিনি মারা যান।
এদিকে, হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্তার মুখলিছুর রহমান উজ্জল জানান, রবিবার বিকেলে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী হবিগঞ্জ জেলায় কোভিড আক্রান্ত হয়ে আরো ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তন্মধ্যে ১জন বাহুবল উপজেলার তার বয়স ৮০ বছর। তার নমুনা প্রেরণ করা হয়েছিল ১৭ আগস্ট। মৃত্যু হয়েছে ৬ সেপ্টেম্বর। আরেকজন বানিয়াচং উপজেলার বাসিন্দা। তার বয়স ৯০ বছর। তার নমুনা প্রেরণ করা হয়েছিল ১৬ আগস্ট। উভয়ের করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসে। এ নিয়ে জেলায় মোট মারা গেছেন ১৪ জন।
এদিকে, মহামরি করোনাভাইরাসের রূপ বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের রূপ পরিবর্তনের হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। যেখানে বিশ্বে এই পরিবর্তনের হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)-এর জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি কোভিড-১৯ জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়। বিসিএসআইআর’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ’র সভাপতিত্বে এই সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
প্রতিবেদন তৈরির জন্য দেশের ৮ বিভাগ থেকে সর্বমোট ২৬৩টি জিনোম সিকোয়েন্সিং ডাটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। মে মাসের ৭ তারিখ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত এসব ডাটা সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল ভাইরাসের সংক্রমণ, মিউটেশনের হার, জিনগত বৈচিত্র্য, নন-সিনোনিমাস মিউটেশন এবং জিনোমিক ফাইলোজেনি পর্যবেক্ষণ করা। গবেষণার ফলাফলকে কোভিড-১৯ মহামারি রোধে কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যবহার করা।
সংগৃহিত নমুনায় শতভাগ ক্ষেত্রে আধিপত্যকারী ভ্যারিয়েন্ট জি৬১৪ (স্পাইক প্রোটিনে ৬১৪তম অবস্থানে অ্যাসপাটি এসিডের পরিবর্তে গ্লাইসিন হওয়ার কারণ) এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ২৬৩টি সার্স কোভ ২ জিনোম বিশ্লেষণে ৭৩৭ পয়েন্টে মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৩৫৮ নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো এসিড প্রতিস্থাপন ঘটায়। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে বার্ষিক মিউটেশনের হার ২৪ দশমিক ৬৪ নিউক্লিওটাইড- জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এতে জানানো হয়, স্পাইক প্রোটিনের জিনে ১০৩টি নিউক্লিওটাইড মিউটেশনের মধ্যে ৫৩টি নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো এসিড প্রতিস্থাপন ঘটে যার মধ্যে ৫টি স্বতন্ত্র যা বিশ্বে আর কোথাও নেই।
সংগৃহিত নমুনায় শতভাগ ক্ষেত্রে ৪টি মিউটেশন পুনরাবৃত্তি লক্ষ্যণীয়। গবেষণার ফলাফল প্রিন্ট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। কয়েকটি রিসার্চ পেপার ও শিগগিরই আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হবে।
চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভাক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, আমেরিকার প্রতিষ্ঠান মর্ডানা, দ্য ইউনির্ভাসিটি ও অক্সফোর্ডসহ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করা ৫০টি প্রতিষ্ঠানে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে- বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এর ফলে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ উপযোগী ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়তা করবে এবং বিসিএসআইআর তার অংশীদার হওয়ার গৌরব অর্জন করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।