শায়েস্তাগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্য ২
শায়েস্তাগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পূর্বে ছিল ধর্মীয় শিক্ষালয় ॥ দাউদনগর মাছের ঘাট পূর্বে ছিল খেলার মাঠ। বিভিন্ন জায়গা থেকে ধর্ম প্রচারকগণ নৌকায় করে সেখানে আসতেন। নদী দিয়ে চলাচলের সময় ওই ঘাটে এসে লোকজন ওলিদের সম্মান জানিয়ে সালাম দিতেন। তাই ওই ঘাটকে সেলামী ঘাট বলা হতো
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ শায়েস্তাগঞ্জ দাউদনগরের বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সৈয়দ বংশের কৃতি সন্তান সৈয়দ হাবিবুর রহমান পারভেজ জানান- সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীন (র:) এর অধস্তন বংশধর লস্করপুর হাবেলী নিবাসী সৈয়দ হামিদ রাজার পুত্র ছিলেন সৈয়দ শায়েস্তা মিয়া। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। চুনারুঘাটের ঘরগাঁও ছিল তাদের আদি নিবাস। প্রায় ৬শ’ বছর পূর্বে তার পূর্ব পুরুষগণ শায়েস্তাগঞ্জে এসে বসবাস শুরু করেন। আর তার নামানুসারে শায়েস্তাগঞ্জের নামকরণ করা হয়।
সৈয়দ নাছির উদ্দিনের বংশধর সৈয়দ হাফিজ উদ্দিন। সৈয়দ হাফিজ উদ্দিনের নামানুসারে হাফিজপুরের নামকরণ করা হয় যা বর্তমানে বাহুবলের মিরপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত। তারা ধর্মের প্রচারে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতেন এবং সেখানে অবস্থান করতেন। সৈয়দ হাফিজ উদ্দিনের ৩ পুত্র সন্তান ছিলেন। সৈয়দ নূর, সৈয়দ আহমদ ও বন্দেগী সৈয়দ শাহ দাউদ (রঃ)। সৈয়দ নূর ও সৈয়দ আহমদের নামানুসারে চরনুর আহমদ গ্রামের নামকরণ করা হয়। আর তরফ রাজ্য থেকে দাউদনগর পরগণা শাহ দাউদের নামে খারিজ করে দেয়া হয়। সেই থেকে নামকরণ করা হয় দাউদনগর। সম্ভবত ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে দাউদনগরে বন্দেগী সৈয়দ শাহ দাউদ (রঃ) জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। মোঘল স¤্রাট হোসেন শাহ সৈয়দ বংশের লোক ছিলেন। তিনি বন্দেগী সৈয়দ শাহ দাউদ (রঃ) জামে মসজিদে তৎকালীন ক্যালিওগ্রাফি সম্বলিত ২টি কষ্টি পাথর দান করেন। যা আজও মসজিদে লাগানো রয়েছে।
দাউদনগর বাজারটি সৈয়দ দাউদের নামে নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে বাজারটি নতুন রূপে প্রতিষ্ঠিত করেন ওনার বংশধর সৈয়দা ধন বিবির নাতি সৈয়দ ওবেদুর রহমান গাজী মিয়া। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ কোর্টের অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট, সিলেট জজ কোর্টের জুরী বোর্ডের সদস্য। তিনি ২৮ বছর চর পঞ্চায়েত সভাপতি ছিলেন। অনুমান ১৮৮৬ সালে সৈয়দ দাউদের বংশধর সৈয়দা ধন বিবি ওয়াকফ্ এস্টেট এর কাছ থেকে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ের জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। ১৮৯৯ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের মাধ্যমে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন স্থাপিত হয়। ফলে শায়েস্তাগঞ্জ বাজারটি সম্প্রসারিত হয়ে রেল স্টেশন সংলগ্ন দাউদনগর বাজার নামে আরেকটি বাজারের গোড়াপত্তন হয়। তৎকালীন সময়ে জমিদারগণ তালুক নিয়ন্ত্রণ করতেন। ১৯৫০ সালের পর জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে জমিদারী ভেঙ্গে খন্ড বিখন্ড হয়ে যায়।
সৈয়দ দাউদ বেশি সময় কাটাতেন মুড়ারবন্দে। তিনি পায়ে হেঁটে ও নৌকায় করে সেখানে যেতেন। বর্তমান খোয়াই নদীর নাম পূর্বে ছিল ক্ষমা নদী। কালের আবর্তে সেটি নাম পরিবর্তিত হয়ে হয় খোয়াই নদী। শায়েস্তাগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পূর্বে ছিল ধর্মীয় শিক্ষালয়। সেখানে শিক্ষক ছিলেন সৈয়দ খলিল উল্লা। আর বর্তমান দাউদনগর মাছের ঘাট পূর্বে ছিল খেলার মাঠ। বিভিন্ন জায়গা থেকে ধর্ম প্রচারকগণ নৌকায় করে সেখানে আসতেন। আর সেখানে যে খেয়া ঘাট ছিল তাকে সালামী ঘাট বলা হতো। নদী দিয়ে চলাচলের সময় লেঞ্জাপাড়া এলাকায় অবস্থিত ওই ঘাটে এসে লোকজন ওলিদের সম্মান জানিয়ে সালাম দিতেন। তাই ওই ঘাটকে সেলামী ঘাট বলা হতো।