আবুল কালাম আজাদ ॥ হবিগঞ্জের সকল চা বাগানের শ্রমিকরা যখন করোনা ভাইরাস এর কারনে কাজ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছেন তখন চুনারুঘাট উপজেলার রেমা চা-বাগনে ২৫ দিন ধরে কাজ না থাকায় এবং রেশন মজুরী না পাওয়ায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। বাগানের পরিত্যক্ত জমিকে খেলার মাঠ দাবি করাকে কেন্দ্র করে বাগানের কতিপয় শ্রমিক ৫ বাগান ব্যবস্থাপক ও সুপারভাইজারকে মারধোর করে রক্তাক্ত জখম করলে বাগান বন্ধ হয়ে যায়। সরকারিভাবে বিরোধ নিস্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হলেও এখন করোনার গ্যাড়াকলে বিরোধ নিস্পত্তির কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া বাগান কর্তৃপক্ষের মামলার কোন আসামী না ধরা এবং বাগানের ব্যবস্থাপক এখনও চিকিৎসাধীন থাকায় বাগান কর্তৃপক্ষ সাড়া দিচ্ছে না। এ অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহর নেতৃত্বে ঐ বাগানের শতাধিক চা শ্রমিকদের চাল ডাল আলু পেয়াজ তেল বিতরণ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মার্চ রেমা বাগানের বাগানের পরিত্যক্ত জমিকে খেলার মাঠ দাবি করাকে কেন্দ্র করে বাগানের কতিপয় শ্রমিক ৫ বাগান ব্যবস্থাপক ও সুপারভাইজারকে মারধোর করে রক্তাক্ত জখম করলে বাগান বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে চা শ্রমিকরা কর্মহীনতায় রয়েছেন। তারা চিকিৎসা সেবা, রেশনসহ অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত রয়েছেন। ফলে এই চা-বাগানের শ্রমিকদের জীবনে নেমে এসেছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও অভাব-অনটন।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ রেমা বাগানের শ্রমিকদের পাশে দাড়িয়ে আন্দোলনের হুমকি দিলেও করোনার কারনে তারা কোন কর্মসূচি দিতে পারেনি। পরে শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মালিক ও শ্রমিক পক্ষকে নিয়ে গত ২৪ মার্চ বৈঠক আহবান করেন। কিন্তু মালিক পক্ষ বাগান ব্যবস্থাপক এখনও হাসপাতালে এবং জড়িতদের বিরোদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করায় আসতে অপারগতা দেখালে সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
এদিকে গত ২৮ মার্চ জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে রেমা চা বাগানের শ্রমিকদেরকে নগদ ১শ’ টাকা এবং সবার মাঝে ৩ টন চাউল বিতরণ করা হয়। সেখানে নিয়মিত শ্রমিক রয়েছেন ৪৫৮ জন। ফলে প্রত্যেক পরিবার সাড়ে ৬ কেজি করে চাউল পায়। যা দিয়ে তাদের পক্ষে পরিবারের ব্যয় পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল জানান, চা শ্রমিকরা যদি অন্যায় করে তাহলে অবশ্যই তার বিচার হবে। কিন্তু সরকারি লিজ এবং শ্রমিকদের সাথে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কেউ এভাবে বাগান বন্ধ করতে পারে না। আলোচনায় বসলেই বিষয়টির সমাধান হত। কিন্তু মালিক পক্ষ বিভিন্ন অজুহাতে প্রশাসনের আহবানে সাড়া দিচ্ছে না। যদি বিষয়টির দ্রুত সমাধান না হয় তাহলে আমরা সকল বাগানেই কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
এ বিষয়ে বাগানের জি এম ওয়াহিদ উদ্দিন জানান, আমাদের বাগানের ৫ ব্যবস্থাপক ও সুপার ভাইজারকে অফিসে আবদ্ধ করে মারধোর করে রক্তাক্ত জখম করে এব বাগানের অফিস ও কম্পিউটারসহ ৬টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে কতিপয় শ্রমিক। তাদের নেতৃত্ব দেয় বাগান থেকে বহিস্কৃত এক ইউপি মেম্বার নির্মল দেব। আমরা এ বিষয়ে চুনারুঘাট থানায় মামলা দিয়েছি। কিন্তু পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আতংকে আমাদের কোন স্টাফ বাগানে যেতে ভয় পাচ্ছে। তাই এ মুহুর্তে সমাধান দেখছি না। তাছাড়া বাগান তো তাড়াই বন্ধ করে রেখেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেমা চা বাগানের এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা শ্রমিকদেরকে কাজে যোগ দিতে বলেছি। শুধুমাত্র ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে বাদ দিয়ে আসতে বলা হয়েছে। তারা চায় মামলা তুলে নিতে। মামলা নিজ গতিতে চলবে। কিন্তু তারা আসছে না। আমরা বাগান চালুর জন্য মন্ত্রীসহ প্রশাসনকে পত্র দিয়েছি। আমাদের কর্মকর্তারা স্থানীয় প্রশাসন থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চায়।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিৎ রায় দাস জানান, শ্রম অধিদপ্তর এর পক্ষ থেকে শ্রমিক ও মালিক পক্ষকে নিয়ে বসার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে তা বাতিল হয়েছে। শ্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা শ্রমিকদেরকে সহযোগিতা করেছি।
হবিগঞ্জের জেলা শ্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। যেহেতু বাগানটি বেসরকারি এবং মালিক পক্ষ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে তাই তাদেরকে বোঝাতে একটু সময় লাগছে।
শ্রীমঙ্গলস্থ শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম জানান, আমরা ২৪ মার্চ বসার জন্য বললে মালিক পক্ষ জানায় তাদের ম্যানেজার ও সহকারি ম্যানেজার আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। আর করোনার জন্য ঢাকা থেকে উর্ধ্বতন কেউই আসতে পারবে না। তাই সেদিন বসা সম্ভব হয়নি। আর মালিক ও শ্রমিক পক্ষ কেউ কারও সাথে যোগাযোগ করেনি। ফলে দুরত্ব থেকেই যায়। আমি ২৫ মার্চ উভয় পক্ষকে পত্র দিয়েছি যাতে তারা নিজেদের মাঝে যোগাযোগ করতে পারে। তবে করোনার জন্য বসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না।