স্টাফ রিপোর্টার ॥ “মানুষ মানুষের জন্যে…” করোনা ভাইরাস আতঙ্কে গৃহবন্দি অন্যদিকে পেটের ক্ষুধা। বিশেষ বিপত্তি যেন গরীব, দিন-মজুর অথবা ছা-পোষাদের ভাগ্যে, এমন দুঃসময়ে প্রচার বিমুখ কিছু তরুন যুবকদের নিয়ম-নীতি মেনে ত্রাণ সংগ্রহ এবং গরীবদের মাঝে ত্রাণ বন্টনের কার্যক্রম, সত্যিই দৃষ্টিনন্দন। কারো টিউশনির টাকা, বৃত্তবানদের কাছ থেকে খাদ্য-সামগ্রী চেয়ে আনা, করোও বা ব্যক্তি বিশেষ সঞ্চিত টাকায়। গুটিকয়েক তরুনদের সম্মিলিত উদ্যোগে তৈরী করা হয়ছে তিন শতাধিক মাঝারি সাইজের প্যাকেট, প্রতিটি প্যাকেটে তিন কেজি চাল, এক কেজি ডাল, হাফ লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি আলু, পেঁয়াজ এক কেজি, একটি করে হাত দোওয়ার সাবান, মাস্ক ইত্যাদি, কেউ বা সুরক্ষার পোষাক পরিধান করে কাঁধেতে পিপার নিয়ে এলাকায় এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটাচ্ছে জীবাণুনাশক ঔষধ এমন কার্যক্রম শহরের বগলা বাজার, ঘাটিয়া বাজার, চিড়িয়াকান্দি এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে। কার্যক্রমগুলো বুঝিয়ে দেয়, “সচেতনতায় থাকব করোনা থেকে দূরে, ক্ষুধার জ্বালায় মরতে নয়, থাকব তোমাদের পাসে। ” দুঃসময়ে তরুনদের এমন সাহসী উদ্যোগ আরোও যোদ্ধাদের সৃষ্টি করবে দেশ-মাতৃকা প্রীতিতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উদ্যোগ দাতাদের একজনের সাথে আলাপকালে জানান, মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, শুনেছি মাত্র, প্রতিটা যুদ্ধক্ষেত্রে তরুণরাই প্রথমে এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। মরণব্যাধি করোনা ভাইরাস আতঙ্কে গোটা বিশ্ব নতজানু, হবিগঞ্জেও এ ছোবল থেকে পিছিয়ে নেই। সরকারী নির্দেশ, ভাইরাস এর ছোবল থেকে সুরক্ষার জন্যে বিশেষ কারণ ছাড়া ঘরবন্দি থাকা চাই। অন্যদিকে পেটের ক্ষুধা তো করোনা ভাইরাস আতঙ্ক মানতে নারাজ। প্রতিদিন দুইশত বা তিনশত টাকা উপার্যন না করলেই যাদের সংসার চালানো সম্ভব নয় এদের সংখ্যা অনেক। তাদের ক্ষেত্রে সরকারী তহবিল থেকে আসা সাহায্য স্বরুপ ১০ টাকা কেজির মোটা চাল, জেলা প্রশাসন কর্তৃক পোটলাকৃতি বিনামূল্যের ত্রান সামগ্রী চাহিদানুযায়ী বিতরণ করতেই যেন নিমিষেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই যতটুকু পারা যায় নিজেদের উদ্যোগে গরীবদের পাশে থাকতে চাচ্ছি, কোন নাম প্রকাশ বা সেলফির উদ্দেশ্যে নয়। সকলকে নিয়ে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার আনন্দটাই ভিন্ন। মুখ পরিচয়ে নয়, যারা সত্যিকারের অসহায় তাঁদের নাম লিস্ট করেই এলাকা ভিত্তিক ত্রাণগুলো বন্টন করা হচ্ছে। সরকারী বাধ্যবাধকতা বা নিয়মানুতান্ত্রিকতা আছে কিনা এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অত্র এলাকার বড় ভাই এবং সাংবাদিক মোহাম্মদ নাহিজ এবং এলাকার শ্রেনী পেশার ব্যক্তিগর্ব আমাদেরকে তাঁদের সাধ্য অনুযায়ী সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করেছেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিক মোহাম্মদ নাহিজ জানান, বর্তমান দুঃসময়ে এলাকার কিছু তরুণ যুবকরা গরীবদের সহযোগীতা করতে ইচ্ছে পোষন করলে, তাদের আগ্রহকে সাদুবাদ জানাই। তাদের জন্যে আমার নির্দেশনা ছিল শুধু ত্রাণ সংগ্রহ আর বন্টন করলেই চলবে না, নিজেদের ও অন্যদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। সেফটি থাকতে প্রয়োজনীয় মাস্ক, গ্লাভস, জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহার এবং নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় সাপেক্ষে ত্রাণগুলো বন্টন করতে হবে এবং সকলকে দু/তিন ফুট দুরত্ব বজায় রেখেই সাহায্য সহযোগীতা করতে হবে। গণমাধ্যম এর তরুণ-যুববদের কার্যক্রম প্রচার ও প্রসার দেখে, যেন আরোও তরুনসহ সকলে এগিয়ে আসতে পারে সে আশা করছি।
ঘাটিয়া বাজার এলাকার তরুন সাহা (সাগর) ব্যপ্ত করেন, নিজেকে যখন গরীব আর অসহায়দের স্থানে ফেলে, উপলব্ধিবোধ থেকে শুধুমাত্র আমি আর আমার দুই বন্ধু মিলে নিজেদের জমানো টাকায় আমার এলাকাতেই নিতান্ত গরীব পঞ্চাশটি পরিবারের জন্যে পাঁচ কেজি করে চাল, পাঁচ কেজি আলু, এক কেজি পেয়াজ, দুই কেজি করে ডাল আর সাবান বন্টন করেছি। আমি চাই সারা জেলা থেকে এভাবে আরোও তরুনরা করোনা সচেতনতার বার্তাসহ সাহায্যের হাত প্রসারিত করুক।