সব ধরণের সভা-সমাবেশ থেকে বিরত থাকার আহবান জানালেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা
এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ জেলায় বিদেশ ফেরত প্রবাসির সংখ্যা প্রায় ২৬শ’ হলেও হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন মাত্র ১২৭ জন। এদের আবার অধিকাংশই মানছে না হোম কোয়ারেন্টিনের নিয়ম-কানুন। ফলে জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। বাড়ছে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি। হবিগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ এ.কে.এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলা পর্যায়ে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিরোধ কমিটি রয়েছে। ওই কমিটি নিয়মিত বৈঠক করছে এবং সার্বক্ষণিক বিষয়টির খোঁজ-খবর নিচ্ছে।
জেলা পর্যায়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, হবিগঞ্জে গত ১ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত ২৫শ ৯৫ জন প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। পুলিশ প্রতিনিয়ত তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে যৌথভাবে কাজ করছেন তারা।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ১২৭ জন প্রবাসী। এদের মধ্যে লাখাই উপজেলার ফ্রান্স ফেরত এক প্রবাসি ও তার পরিবার হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে বিয়ে করায় বৌভাত অনুষ্ঠান পন্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হোম কোয়ারেন্টিন মানা হচ্ছে না বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশ ফেরত যাত্রীরা হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র করছেন ঘুরাঘুরি। এ অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাছাড়া প্রায় আড়াই হাজার বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ১২৭ জনের হোম কোয়ারেন্টিন নিয়েও বিষ্ময় প্রকাশ করছে সচেতন মহল।
এদিকে, করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য হবিগঞ্জ জেলায় সব ধরণের গণজমায়েত বন্ধ রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম)। তিনি গতকাল দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার এ প্রতিনিধি’র সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন- সরকারের নির্দেশ না মেনে কোথাও গণজমায়েত হলে পুলিশকে তাৎক্ষণিক খবর দেবেন। পুলিশ তা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন- এ ধরণের ভয়ানক ভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হলে যতটুকু সম্ভব গণজমায়েত বা গণসমাগম বন্ধ রাখতে হবে। পুলিশ সুপার বলেন- করোনা ভাইরাসে চীনসহ বিভিন্ন দেশে ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে। বাংলাদেশেও একজন মারা গেছেন। পহেলা মার্চ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত হবিগঞ্জ জেলায় ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ২হাজার ৫৯৫ জন প্রবাসী ফিরেছেন। তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমাদের বিভিন্ন বিট অফিসার (এসআই) তাদের সাথে কমিনিউটি পুলিশ, চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড মেম্বার সমন্বয় রেখে কাজ করছেন। প্রবাসীদের গতিবিধি লক্ষ্য করছেন তারা। কোথাও কারো মধ্যে এ ভাইরাস দেখা গেলে সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি বলেন- ইতোমধ্যে জেলায় ১২৭ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এখনও জেলার কোথাও এ ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হননি। তিনি বলেন- হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করা হচ্ছে। কিভাবে এ রোগ ছড়ায় সে সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করছি। পাশাপাশি কোয়ারেন্টিন কি, কিভাবে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয় তা বুঝাচ্ছি। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যানার লাগানোর পাশাপাশি লিফলেট বিতরণ করছি। করোনা ভাইরাসের গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পুলিশের সকল কর্মকর্তারা একযোগে কাজ করছেন। তিনি বলেন- এ থেকে রক্ষা পেতে হলে সচেতন থাকতে হবে।