বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহক

পল্লীবিদ্যুত সমিটির ডিজিএম বললেন, বিদ্যুত ব্যবহার বেশি হওয়ায় বিল বেশি আসতে পারে। তবে অসামঞ্জস্য কিছু ত্রুটি থাকলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে

রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং থেকে ॥ শায়েস্তাগঞ্জ পল্লীবিদ্যুতর আওতাধীন বানিয়াচং উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহকরা ভূতুড়ে বিলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় প্রতিদিনই বানিয়াচং জোনাল অফিসে অতিরিক্ত বিদ্যুত বিল বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে হাজির হচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা। এতে করে একদিকে বিতরণ বিভাগের কর্মকর্তারা যেমন বিপাকে পড়েছেন তেমনি গ্রাহকদের মাঝেও দেখা দিয়েছে চাপা ক্ষোভ। গ্রাহকরা বিদ্যুত অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারিদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন। পাশাপাশি লাগামহীন এই ভূতুড়ে বিলে গ্রাহকদের মাথায় হাত উঠেছে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাসের বিদ্যুত বিলের কপি হাতে পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা।
বিগত কয়েক মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ বিলের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক গ্রাহকের অভিযোগ, পল্লীবিদ্যুত সমিতি লোকসান দেখিয়ে একদিকে যেমন সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে, অন্যদিকে গ্রাহকের মাথায় ভৌতিক বিলের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত মুনাফা। এক কথায় তারা সেবার নামে গ্রাহকের সাথে প্রতারণা শুরু করেছে।
মোস্তফা, জালাল, সুহেল মিয়াসহ বেশ কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, বানিয়াচং বিদ্যুত অফিস থেকে জানুয়ারি মাসের তৈরিকৃত বিদ্যুত বিল অফিসের নির্ধারিত তারিখের মধ্যেই পরিশোধ করা হয়েছে। সে বিলের বকেয়া হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসের বিলে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। গ্রাহকরা বলেন, এ অবস্থায় বাড়তি টাকা খরচ করে অফিসে গিয়ে বিল সংশোধন করে আনতে হয়েছে। অন্যদিকে অফিসের স্টাফদের আচার-আচরণও ভালো নয়। তাছাড়া অনেক স্থানে নিয়মিত মিটার রিডিং না দেখেই বিল তোলে দেওয়া হয়। ফলে কোনো মাসে বিল কম আবার কোনো মাসে বিল খুব বেশি আসে।
গ্রাহক আনহারুল ইসলাম জানান, আমার ঘরে মাত্র তিনটি বাতি জ্বলে। অথচ চলতি মাসে বিল এসেছে ৪ হাজার টাকার মতো। বানিয়াচং ৪নং ইউনিয়নের গ্রাহক আনসার আলী, সিজিল মিয়া ও আব্দুস সালাম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সার্ভিস চার্জ ও ভ্যাট ছাড়াও বিদ্যুত বিলের সাথে প্রতিমাসে ২০ টাকা হারে মিটার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। অথচ টাকা দিয়ে মিটার কিনে নেওয়ার পর মাসে মাসে মিটার ভাড়া দিতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে তদারকি করার কেউ নেই। সাধারণ গ্রাহকদের কথা কেউ-ই চিন্তা করেনা। এসব নিয়ে জনপ্রতিনিধিদেরও যেন কোনো ধরণের মাথা ব্যথা নেই।
পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহক জমির উদ্দিন জানান, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে বিদ্যুত বিলের পরিমাণ কিছুটা কম ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের বিল দুই তিনগুন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিল পরিশোধে তিনি চরম বিড়ম্বনার স্বীকার হচ্ছেন। আরেক গ্রাহক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সোলায়মান খান জানান, ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে তার ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা বিল এসেছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে তার দ্বিগুন বাড়িয়ে ৮৯৪ টাকা করা হয়েছে। ব্যবসায়ী সুমন গাজী জানান, যেখানে আমার দোকানে বিল ১ হাজারের ভিতরে থাকার কথা গত দুই মাসে বিদ্যু বিল ৪ হাজার টাকার উপরে পরিশোধ করেছি। এক মাসের বিল আরেক মাসের বিলের সাথে যোগ করে দেয়। তাই বিলের পরিমাণ বেশি হচ্ছে। একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেন, আবেদন থেকে শুরু করে সংযোগ দেয়া পর্যন্ত নানা সমস্যা দেখিয়ে গ্রাহকদের হয়রানি করা হয়। সেবা পেতে অফিসে গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে রাখার পর এক রুম থেকে আরেক রুমে পাঠানো হয় সেবাপ্রত্যাশীদের। তারপরও অমুক স্যার নাই, তমুক স্যার নাই কাল আসেন বা পরশু আসেন এই বলে হয়রানি করা হয় গ্রাহকদের। বাড়তি বিল যোগ করে দিলে সেটা অফিস থেকে ঠিক করে আনতে গেলে যেমন সময় ব্যয় হচ্ছে অন্যদিকে আর্থিক ভাবেও ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে গ্রাহকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমিতির কয়েকজন গ্রাহক জানান, মাঠ পর্যায়ে মিটার রিডাররা অনেক সময় গ্রাহকের বাড়িতে না গিয়ে আন্দাজের উপর রিডিং উঠিয়ে নিয়ে এসে বিল বিলি করে দেয়। সেই চাপ সামলাতে গিয়ে সাধারণ গ্রাহককে হিমশিম খেতে হয়।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং পল্লীবিদ্যুত সমিটির ডিজিএম প্রকৌশলী ইসমাত কামাল জানান, বিদ্যুত ব্যবহার বেশি হওয়ায় বিল বেশি আসতে পারে। তবে অসামঞ্জস্য কিছু ত্রুটি থাকলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে রিডারম্যানরা চুক্তিভিত্তিক থাকায় কোনো কোনো রিডারম্যান এসব করতে পারে। অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব। আর মিটার চার্জ এটা সারাদেশেই জাতীয়ভাবে নেয়া হচ্ছে। এটা আমাদের কোনো কিছু করার নেই।