মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল
হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার পর ৪৫ বছর কেটে গেছে। এক সময়ে অতিকষ্টে নির্মিত টিনের ঘর আজ পাকা ত্রিতল ভবনে সুশোভিত। হবিগঞ্জ জালাল স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে প্রেসক্লাব ভবন। জেলায় সাংবাদিকতার উন্নয়ন ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে এই ক্লাব। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার কাজ খুব একটা সহজ ছিল না। গোটা কয়েক জাতীয় দৈনিকের যে কজন সাংবাদিক এখানে ছিলেন তাদের মধ্যে ছিল না পারস্পরিক যোগাযোগ। অনেকটা নিজ নিজ অবস্থান থেকেই তারা সাংবাদিকতা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময়ে আমি এবং আমার সহপাঠি ‘দৈনিক আজাদ’ পত্রিকার হবিগঞ্জ মহকুমা সংবাদদাতা নোমান চৌধুরী উদ্যোগ নিলাম প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার। এ উদ্যোগে আমাদের বন্ধু মোহাম্মদ আমির হোসেনও সঙ্গী হলো। পরবর্তীতে জেলার বিভিন্ন স্থানের অনেক সাংবাদিক আমাদের সাথে যোগ দিলেন। যথারীতি ২০/০২/১৯৭৪ইং তারিখে আমার বাসায় অনুষ্ঠিত সাংবাদিকদের এক সভায় প্রেসক্লাব কমিটি গঠন করা হলো। আমাকে সভাপতি ও মোহাম্মদ আমির হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করা হলো। কমিটির অন্যান্য কর্মকর্তা ও সদস্য হন সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল ওয়াদুদ মুর্শেদ, সদস্য- মোঃ আব্দুল জব্বার, নোমান চৌধুরী, দেওয়ান গোলাম রব্বানী চৌধুরী কামাল, আবু তাহের জ্যোতি, মোঃ নুরুল ইসলাম খোকন, মুশফিকুর রহমান চৌধুরী, মোঃ আব্দুল হাই, মোঃ আব্দুল রাজ্জাক তালুকদার, মোঃ ফরিদ মিয়া, মোঃ আবদুল মন্নাফ, রফিকুল বারী চৌধুরী মামুন, মনজুর হোসেইন, তবারক আলী লস্কর, মোঃ আব্দুল কবির, মনজুর উদ্দিন আহমেদ শাহিন, জিতেন্দ্র চন্দ্র সেন, মাহফুজুর রহমান বাচ্চু, সৈয়দ মোস্তফা কামাল, হাফিজ সিদ্দিক আহমেদ, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, সুচন্দ্র রায় ও মছদ্দর আলী। কমিটির ২৬ জন কর্মকর্তা ও সদস্য প্রেসক্লাব ভবন তৈরি সহ বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজে যখন আমরা ব্যস্ত ছিলাম সেই সময় একটি মহল আমাদের এ কাজে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করলেন। কিন্তু আমরা সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে সেই বাধা মোকাবেলা করে এগিয়ে গেলাম। তদানিন্তন মন্ত্রী জেনারেল এম.এ.জি ওসমানী ১৯৭৪ সালে হবিগঞ্জ সফরকালে স্থানীয় সার্কিট হাউজে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব কর্মকর্তাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতকালে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে পুরাতন সার্কিট হাউজ ভবনে গ্রুপ ছবি তুলেন। তখন মহকুমা প্রশাসক ছিলেন কাজী মোঃ আবুবকর সিদ্দিকী এবং সেকেন্ড অফিসার ছিলেন ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সুলতান মোল্লা। কমিটি গঠনের কিছুদিন পর প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয় হিসাবে ব্যবহারের জন্য আমরা মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত অফিসার্স ক্লাবের পরিত্যক্ত ভবনটি ব্যবহারের অনুমতি চাইলাম। মহকুমা প্রশাসক আমাদেরকে ভবনটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেন। এর কয়েকদিনের মধ্যেই আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা তদানীন্তন মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ হবিগঞ্জ সফরকালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয় উদ্বোধন করলেন। এ ব্যাপারে বরাবরের মতই আমাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন সাবেক এমপি কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী। মাত্র দুই ঘন্টা সময়ের মধ্যে আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি গ্রহন করি। অফিসার্স ক্লাবের পরিত্যাক্ত ভবনে প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয় উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী এমপি, এনামুল হক মোস্তফা শহীদ এমপি, মহকুমা প্রশাসক কাজী মোঃ আবুবকর সিদ্দিকী সহ সরকারি কর্মকর্তাগণ ও শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অফিস গৃহ পেয়েই আমরা ক্লাবের আসবাবপত্র সংগ্রহের উদ্যোগ নিলাম। ক্লাবের তহবিলে তখন একটি টাকাও নেই। আমি ও আমির হোসেন পরিচিতজনদের নিকট থেকে ৫/১০ টাকা করে চেয়ে নিয়ে প্রতিদিন শ্রমিকদের মজুরি দিতাম। এসময়ের একটি কথা খুব মনে পড়ে। সাবেক শ্রমিক নেতা ও পৌরসভার কাউন্সিলর সৈয়দ মোঃ হেলাল প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণের কথা শুনে পকেট থেকে ২০টি টাকা বের করে দিয়ে বলেছিলেন এ মহৎ কাজে আমিও শরিক থাকলাম। এমনিভাবে তিল তিল করে অর্থ সংগ্রহ করে প্রেসক্লাবের প্রথম ভবন নির্মিত হয়েছিল। কয়েকদিন পর শায়েস্তাগঞ্জে বন বিভাগের নিলামের কাঠ ক্রয় করে প্রায় এক মাস সময়ে আসবাবপত্র তৈরির কাজ শেষ হলো। এ সময়ে কিছু সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা পুনরায় অফিসার্স ক্লাব চালুর উদ্যোগ নিলেন। তারা মহকুমা প্রশাসককে ভুল বুঝিয়ে আমাদেরকে অস্থায়ী কার্যালয়টি ছেড়ে দিতে বললেন। আমরা এতে দুঃখিত হয়ে অস্থায়ী কার্যালয়টি ছেড়ে দিলাম। ক্লাবের আসবাবপত্র রাখার জন্য কোন স্থান না পেয়ে অগত্যা সেগুলো আমার বাসায় এনে রাখলাম। এ ঘটনায় আমরা মহকুমা প্রশাসকের উপর অনেকটা অভিমান করে তাকে এড়িয়ে চলতে লাগলাম। কয়েকদিন পর ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সুলতান মোল্লা আমাকে ও আমির হোসেনকে তার মাস্টার কোয়ার্টারস্থ সরকারি বাসায় ডেকে নিয়ে বললেন অভিমান না করে মহকুমা প্রশাসক বদলী হয়ে যাওয়ার আগেই পৌরসভার কোন খালি ভূমি কিংবা পরিত্যক্ত ভবন প্রেসক্লাবের জন্য বন্দোবস্ত নিতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে আমাদেরকে যথাসাধ্য সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন। আমাদের সদস্যদের অনেকেই সিনেমা হল রোডে অর্পিত ও অনাগরিক সম্পত্তি হিসাবে পরিচিত একটি ভবন বন্দোবস্ত নিতে বলেন। আমি ও আমির হোসেনের পছন্দ ছিল স্টেডিয়ামের পাশের ৯/১০ ফুট গভীর খালের অংশ। যাতে বর্তমান প্রেসক্লাব ভবন দাঁড়িয়ে আছে। মহকুমা প্রশাসক কাজী মোহাম্মদ আবুবকর সিদ্দিকীর নিকট যথারীতি আবেদনের প্রেক্ষিতে পৌরসভার উল্লেখিত খালের দৈর্ঘ্যে ৬০ হাত জায়গা আমাদেরকে বন্দোবস্ত দেয়ার আদেশ দিলেন। খাল ভরাটের জন্য তিনি ২০ মণ গম এবং বিদেশ থেকে প্রাপ্ত রিলিফের ২০টি কাঠের খুটিও বরাদ্দ করলেন। এ কাজের জন্য আমরা মোহাম্মদ আমির হোসেনকে কনভেনার করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট গৃহনির্মাণ কমিটি গঠন করলাম। কমিটির সদস্য ছিলেন মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, শফিকুর রহমান চৌধুরী, নোমান চৌধুরী, মাহবুবুল ওয়াদুদ মুর্শেদ ও আবু তাহের জ্যোতি। ১৯৭৫ সালের ৪ জুলাই শুক্রবার প্রেসক্লাবের গৃহনির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিদায়ী মহকুমা প্রশাসক কাজী মোহাম্মদ আবুবকর সিদ্দিকী। মাটি ভরাটের কাজ শুরু হল। কোর্ট মসজিদের দক্ষিণ পাশে খোয়াই নদীর চর থেকে মাটি কেটে আনার জন্য প্রতিজন দেড় কেজি গমের বিনিময়ে ৭০/৮০ জন শ্রমিক কিছুদিন কাজ করে প্রেসক্লাবে মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করেন। ওই কাজে আমাকেই বেশি শ্রম দিতে হয়েছে। কোথাও বসার জায়গা ছিল না। শ্রমিকদের সাথে সাথে সারাদিন হাঁটতে হতো। আমির হোসেনকেও পেতাম বেলা ২টার পর। সে ওই সময় একটি সংস্থায় চাকুরী করার কারণে সকাল বেলা আসতে পারতো না। অন্যান্য সদস্যরাও মাঝে মধ্যে আসতেন। প্রেসক্লাব নির্মাণ কাজ তদারকের জন্য আমাকেই থাকতে হতো প্রতিদিন। অবশ্য সুযোগও ছিল। কারণ ওই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পড়ালেখা শেষ হওয়ার কারণে অনেকটাই অবসর ছিলাম। আমাদের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও ঐক্য থাকায় প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে যেতে থাকে। নির্মাণ কাজ চলার সময়ে মহকুমা প্রশাসক প্রেসক্লাবের জন্য আরো ২২হাত ভূমি বরাদ্দ করায় প্রেসক্লাবের জন্য পৌরসভা থেকে বরাদ্দকৃত ভূমির পরিমাণ দাঁড়ায় দৈর্ঘ্যে ৮২ হাত। ঐ ২২ হাত ভূমি ভরাটের জন্য মোঃ আব্দুল মন্নাফকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণের জন্য প্রথমেই কাঠ সংগ্রহ করার কাজ হাতে নেই। ওই সময়ে বাজারে কাঠের দাম অনেক বেশি ছিল। চুনারুঘাটের ব্যবসায়ী ইয়াকুত সাহেব জানালেন খুবই স্বল্পমূল্যে প্রেসক্লাবের জন্য কাঠ দিতে পারবেন। তবে তা নিজ দায়িত্বে আনতে হবে। আমি ও আমির হোসেন তৎকালীন মহকুমা পুলিশ অফিসারের সাথে দেখা করে এ ব্যাপারে তার সহযোগিতা চাইলাম। তিনি রাজী হলে আমি, শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আবু তাহের জ্যোতি নির্দিষ্ট দিনে একটি ট্রাক নিয়ে উক্ত ব্যবসায়ীর কথামত কামাইছড়া গেলাম। তিনি ট্রাক সহ আমাদেরকে পাহাড়ের ভিতর নিয়ে গেলেন। দুর্গম পাহাড়ী পথে যাওয়ার সময় এক স্থানীয় শ্রমিক জানালেন কিছুদিন পূর্বেও এখানে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পোতা মাইন বিষ্ফোরিত হয়ে কয়েক জন মারা গেছে। একথা শুনে গা শিহরিত হয়ে গেল। মনে হলো কোথায় যাচ্ছি বাসায় বলে যাইনি। যদি দুর্ঘটনায় মারা যাই তাহলে কেউ কিছু জানবে না। সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। যাই হোক সন্ধ্যার সময় কাঠ নিয়ে হবিগঞ্জ ফিরলাম। কাঠ চিড়াই করার পর তা রাখার সমস্যা হওয়ায় পাশ্ববর্তী আমার খালাতো ভাই ডাঃ রফিকুল ইসলাম সাহেবের বাসার একটি পরিত্যক্ত ঘরে কাঠ রাখলাম। কিছুদিন পর আমি ও আমির হোসেন ব্যবসায়ী মহরম আলী সাহেবের দোকান থেকে নিজেদের দায়িত্বে বাকীতে পাঁচ বান্ডিল ঢেউটিন আনলাম। এই টিন ঘরের চালে লাগানো হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে আমরা টিনের মুল্য পরিশোধ করেছি। এক পর্যায়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোঃ ফয়েজুল্লাহ একদিন সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবের নির্মাণাধীন ভবনের কাজ দেখতে এসে আরো পাঁচ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ করেন। এই টিন ঘরের বেড়ার কাজে লাগানো হয়। ভবনের মেঝে পাকা করে দেন বিশিষ্ট ঠিকাদার গোলাম মর্তুজা লাল মিয়া। রাজনীতিবিদ রকিব চৌধুরী ও জলযোগ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক সুুধির বাবু দুইটি সিলিংফ্যান দান করেন। প্রায় দুই বছরে প্রেসক্লাব ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ভবন ও আসবাবপত্র তৈরীর কাজে মিস্ত্রি হিসাবে কাজ করেন জালালাবাদ গ্রামের আব্দুল হামিদ, পৈল গ্রামের যোগেশ বাবু ও তার পুত্র, চট্টগ্রামের জয়নাল মিয়া, পৈল গ্রামের কিম্মত আলী সহ অনেক নাম না জানা শ্রমিক। প্রেসক্লাব নির্মাণকালে আর্থিক অনুদান দেয়ার মত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট অভাব ছিল। সে কারণে প্রতিদিনই আমাদেরকে আর্থিক সংকট মোকাবেলা করতে হয়। সকল সংকট কাটিয়ে প্রায় দুই বছরে প্রেসক্লাব ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ইতিমধ্যে প্রেসক্লাবের সুহৃদ মহকুমা প্রশাসক এম.এস মোল্লা সাহেবের বদলীর আদেশ হয়। এই ভবন নির্মাণে তার সহযোগিতার জন্য সম্মান দেখিয়ে ১৯৭৭ সালের ১৩ই এপ্রিল তাকে দিয়েই প্রেসক্লাব ভবন উদ্বোধন করা হয়। একই বছর ৭ মে তদানীন্তন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান হবিগঞ্জ সফরকালে জালাল স্টেডিয়ামে জনসভা শেষে আমার ও আমির হোসেনের মৌখিক আমন্ত্রণে প্রেসক্লাবে আসেন। তিনি প্রেসক্লাবে একটি টিভি সেট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কয়েকদিনের মধ্যেই ঢাকা থেকে প্রতিশ্রুত ২৪ ইঞ্চি ফিলিপস সাদাকালো টিভি সেট নিয়ে আসলেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমির হোসেন। সেই সময়ে শহরে টিভি সেট ছিল আঙ্গুলে গোনা কয়েকটি। টিভি সেট আসার পর প্রতিদিন সন্ধ্যায় টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখার জন্য ক্লাবের সদস্যরা ছাড়াও এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও মহিলারা ভিড় জমাতেন। এমনকি উৎসাহী তরুণদের উদ্যোগে প্রেসক্লাব টিভি দর্শক সমিতিও গঠিত হয়। ওই সময়ে প্রেসক্লাব হয়ে দাঁড়ায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়া সদস্যদের নিয়মিত পদচারনায় প্রেসক্লাব থাকতো মুখরিত। ১৯৭৪-৭৭ইং এই তিন বছরে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার পর আমি নতুন কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করলাম। পরবর্তীতে ১৬ বছরে ক্লাব ভবনের তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। ১৯৯৪-৯৫ইং সনে আমাকে পুনরায় ক্লাবের সভাপতি এবং মোঃ ইসমাইল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এ সময়ে আমরা ক্লাবের বহুতল ভবন নির্মাণের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান প্রদত্ত ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেই। সে অনুযায়ী ১৯৯৫ সালের ৬ই জানুয়ারি প্রেসক্লাব বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান। পরবর্তীতে আর্থিক ও নানা কারণে ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকে। কেটে যায় আরো পাঁচ বছর। ২০০০-২০০১ইং সনে আমাকে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও মোঃ ফজলুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে নতুন কমিটি গঠিত হয়। এ সময় হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী এস.এ.এম.এস কিবরিয়া প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণের জন্য ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন। চেক হস্তান্তরের জন্য আমাদেরকে পৃথক কোন অনুষ্ঠান করার সুযোগ না দিয়ে স্থানীয় কিবরিয়া মিলনায়তনে অপর এক অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রী বরাদ্দকৃত ১০ লক্ষ টাকার চেক আমার নিকট হস্তান্তর করেন। এই অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারে তদনীন্তন জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আজিজ যথেষ্ট সহায়তা করেন। বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে প্রেসক্লাবের বর্তমান নতুন ভবনের নিচতলার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। পরবর্তী ১৮ বছরে জনপ্রতিনিধি, দানশীল ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুদানে প্রেসক্লাবের আরো উন্নয়ন হয়। এ সময় যারা সহযোগিতা করেন তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরী, প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠাতা কমিটির সদস্য মোঃ আব্দুল কবির, সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া, শিল্পপতি এম আমজাদ হোসেন ফনিক্স, এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির, সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার শিপা, হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ, শিল্পপতি আলহাজ্ব আতিকুর রহমান আতিক, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, জেলা প্রশাসকদের মধ্যে মোঃ জয়নাল আবেদীন ও মাহমুদুল কবীর মুরাদ। সর্বোপরি ক্লাবের সদস্য ও হবিগঞ্জের সর্বস্তরের জনসাধারণের সহযোগিতায় নির্মিত প্রেসক্লাবের সুরম্য ত্রিতল ভবনটি এখন সহজেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়েই আমি ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়েছি। সে জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে অশেষ শোকরিয়া আদায় করছি। বর্তমানে প্রতিদিন বিভিন্ন সামাজিক- সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে প্রেসক্লাব ভবন থাকে মুখরিত। সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গ যাদের অনুদানে ও সহায়তায় হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব পরিপূর্ণতা পেয়েছে তাদের নিকট আমরা কৃতজ্ঞ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে নির্মল পরিবেশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে আমার প্রাণপ্রিয় হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব। এর পবিত্রতা বজায় রেখে অনাগত ভবিষ্যতে প্রেসক্লাব সদস্যগণ সৎ, নির্ভীক ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে এলাকার মাটি ও মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণে সচেষ্ট হওয়া ছাড়াও হবিগঞ্জের সাংবাদিকতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন এই কামনা রইলো।