হবিগঞ্জের মুখ আলোচিত সংবাদ

ডেস্ক রিপোর্ট ॥ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার পাতাল কালীমন্দির থেকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় জড়িত দুই পলাতক আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মগহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। দুই আসামি হিন্দু পরিচয়ে কালিমন্দিরে থাকতেন বলে ডিবির দাবি। বুধবার (২৬ জুন) বিকেলে রাজধানীর পূর্বাচলে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ দাবি করেন। এর আগে পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টার দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালায় ডিবি।
ডিবি জানায়, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন ফয়সাল ভুঁইয়া ও মোস্তাফিজুর রহমান। হত্যাকান্ডের পর ১৯ মে তারা কলকাতা থেকে দেশে ফেরেন। এমপি আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড শিমুল ভুঁইয়ার কাছ থেকে পাওয়া ৩০ হাজার টাকা নিয়ে তারা আত্মগোপনে চলে যান সীতাকুন্ডের পাতাল কালি মন্দিরে। সেখানে তারা হিন্দু পরিচয়ে ২৩ দিন অবস্থান করেন। বুধবার (২৬ জুন) ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় এনেছে। ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে বহন করা হেলিকপ্টারটি বুধবার বিকেলে পূর্বাচলের ১৮ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু ট্রাই টাওয়ারের জমিতে অবতরণের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, আমরা ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনা তদন্ত করছি। গতকাল শুনলাম, তারা (ফয়সাল ও মোস্তাফিজ) খাগড়াছড়ি বা সীতাকুন্ড পাহাড়ের দিকে অবস্থান করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের একটি টিম গতকাল সেখানে সাঁড়াশি অভিযানে যায়। বুধবার সকালে আরেকটি টিম সেখানে যায়। অনেক উঁচু পাহাড়। সেখানে টিম নিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন। সেখানে ৭-৮ ঘণ্টা লাগে হেঁটে পৌঁছাতে। আমাদের কাছে যারা মোস্ট ওয়ানটেড, তাদের দুজনকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
‘কলকাতায় যে রুমে সংসদ সদস্য আনারকে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে ছিলেন ফয়সাল ভুঁইয়া। হত্যার আগে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করা করেছিল আনারকে। মোস্তাফিজুর রহমান সংসদ সদস্য আনারকে চেয়ারে বেঁধে বিবস্ত্র করেছিল, মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল। এরপর তাকে বাথরুমে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে মূল মাস্টারমাইন্ড শিমুল ভুঁইয়ার সহযোগী হিসেবে ছিলেন জিহাদ, ফয়সাল ভুঁইয়া ও মোস্তাফিজুর রহমান।’
হারুন অর রশীদ বলেন, এই দুজন কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। আমরা এ দুজনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করব। তারপর তাদের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাবে।’
খাগড়াছড়িতে তারা কাদের আশ্রয়ে ছিলেন? জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, সীতাকুন্ড পাহাড়ের নিচে পাতাল কালি মন্দির আছে। সেখানে তারা নিজেদের নাম বদলে ফেলেন। ফয়সাল পলাশ রায় আর মোস্তাফিজুর শিমুল রায় নাম ধারণ করে হিন্দু সেজে মন্দিরে অবস্থান করেন। তারা বলেন, ‘মাকে (কালী) খুব ভালবাসি। কালী মন্দির ছাড়া থাকতে পারি না’ এভাবে তারা সেখানে ছদ্মবেশে ২৩ দিন অবস্থান করেন।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, তারা ইন্ডিয়াতে হত্যার কাজ শেষ করে ১৯ মে দেশে ফেরেন। তারা শামীমের সঙ্গে কথা বলেন। দুজনকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা নিয়ে তারা খাগড়াছড়িতে চলে যান। যেহেতু, তারা আগে ট্রাক চালাতেন, সেজন্য তারা সীতাকুন্ডের গহীন এলাকাটা চিনতেন। নিরাপদ ভেবে সেখানে অবস্থান নেন। হিন্দু নাম ধারণ করে আত্মগোপন করেন। বাঁচার জন্য তারা আরও নানা জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
তিনি বলেন, সংসদ সদস্য আনারকে হত্যায় যে সাতজন অংশ নিয়েছিলেন, তার মধ্যে এই দুজন ছিলেন শিমুল ভুঁইয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তি। আজকে এই দুজনকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে কিলিং মিশনে যে সাতজন অংশ নিয়েছিলেন, তারা সবাই গ্রেপ্তার হলেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- অন্যতম ঘাতক শিমুল ভুঁইয়া, ফয়সাল ভুঁইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান, ইন্ডিয়ান পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদার, আমাদের তথ্যের ভিত্তিতে নেপালে আত্মগোপনে থাকা সিয়াম; বাংলাদেশে আমরা দুজনকে গ্রেপ্তার করেছিলাম তানভীর ও শিলাস্তিকে। এর বাইরে যারা মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছেন, অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেছেন, বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন; আমরা মনে করি, সকল ব্যক্তিকে এখন গ্রেপ্তার করতে হবে। শিমুল ভুঁইয়ার ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে মিন্টু ও গ্যাস বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশের গ্রেপ্তার সাতজন ও ইন্ডিয়াতে আছে সিয়াম ও জিহাদ।
এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, যখন শিমুল ভুঁইয়া, শিলাস্তি ও তানভীরকে প্রথম গ্রেপ্তার করি, তখন কিন্তু ইন্ডিয়ান পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমরাও কিন্তু টিম নিয়ে তাদের হাতে গ্রেপ্তার জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এরপর যখন জানলাম সিয়াম নেপালে, তা ইন্ডিয়ান পুলিশকে জানিয়েছি। নেপালে গিয়েছি, সিয়ামকে গ্রেপ্তারে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছি। তাদের দেওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আমরা মিন্টু ও গ্যাস বাবুকে গ্রেপ্তার করেছি।
তিনি আরও বলেন, এমপি আনার হত্যার আরেক মাস্টারমাইন্ড, যিনি আমেরিকা পালিয়েছেন, তাকে গ্রেপ্তারে আমরা আমেরিকার দূতাবাসে কথা বলেছি। দেখা করে গ্রেপ্তারের অনুরোধ করেছি। ইন্টারপোলের সহযোগিতা চেয়েছি। ইন্ডিয়ার কাছে কিন্তু সে মোস্ট ওয়ানটেড। তাদের সঙ্গে আমেরিকার চুক্তি আছে। তারাও চেষ্টা করছে, আমরাও চেষ্টা করছি।
অপর প্রশ্নের জবাবে এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আজকে গ্রেপ্তার দুজনসহ সবাইকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করব। যদি আরও কেউ থাকেন, যারা অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, প্ল্যান করেছেন; তাদের যদি নাম পাই, তথ্য- উপাত্ত পাই, পারিপার্শ্বিক প্রমাণ পাই, তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।