মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ আজ ১ মে মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় দিন পহেলা মে। অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মরণে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২য় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের সব দেশেই আজ বুধবার পালিত হবে মহান মে দিবস। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শাসন থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে মে দিবস পালিত হয়। ওই বছরই সদ্য স্বাধীন দেশে পহেলা মে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রাষ্ট্রীয়ভাবে মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে নানা সংগঠনের পক্ষ থেকে হবিগঞ্জেও নেয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি।
মহান মে দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ১০ টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়স্থ নিমতলা প্রাঙ্গণ হতে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হবে। র‌্যালি শেষে সকাল সাড়ে ১০ টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মহান মে দিবস উপলক্ষে প্রধান কার্যালয় ও সকল আঞ্চলিক কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা এবং সংগঠনের লাল পতাকা উত্তোলন করবে। এছাড়া শ্রমিক জমায়েত ও সংগঠনের পক্ষ হতে হবিগঞ্জ শহরে বর্ণাঢ্য লাল পতাকা র‌্যালি বের করা হবে। তাছাড়াও আলোচনা সভা ও নিহত শ্রমিকদের পরিবারের হাতে মৃত্যু দাবির টাকা হস্তান্তর করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এমপি আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির।
এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উল্লেখ্য, শ্রমজীবী মানুষের এই স্বীকৃতির সূচনাকাল সহজ ছিল না। দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এই দিনে বুকের রক্তে শ্রমিকরা আদায় করেছিলেন দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের অধিকার। শ্রমিকদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই সেদিন মালিকরা স্বীকার করে নিয়েছিলেন শ্রমিকরাও মানুষ। তারা যন্ত্র নয়, তাদেরও বিশ্রাম ও বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। ১৮৮৬ সালের এই দিনে শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। সেই ডাকে শিকাগো শহরের তিন লাখের বেশি শ্রমিক কাজ বন্ধ রাখেন। শ্রমিক সমাবেশকে ঘিরে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় বিক্ষোভ সমুদ্রে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে ১০ শ্রমিক প্রাণ হারান। গ্রেফতার হন শ্রমিক নেতা স্পাইস ও ফিলডেন। পরবর্তীতে হে মার্কেটের ঘটনার দায় চাপানো হয় স্পাইসসহ অন্যান্য শ্রমিক নেতার ওপর। এক সংক্ষিপ্ত ও প্রহসনমূলক বিচারে ফাঁসি হয় শ্রমিক নেতা স্পাইস, পার্সনস, ফিলডেন, মাইকেল স্কোয়ার, জর্জ এঙ্গেলস ও অ্যাডলফ ফিসারের। এর পরপরই হে মার্কেটের ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। পরে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ১ মে তারিখটিকে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করতে শুরু করে।