আক্তার হোসেন আলহাদী
আলহাজ্ব সামছুদ্দিন আহমেদ এম.বি.ই, যিনি হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার কৃতি সন্তান। যাকে বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, দেশ তথা সমাজের প্রতি অসাধারণ অবদানের জন্য (এম.বি.ই) মেম্বার অফ ব্রিটিশ এম্পায়ার খেতাবে ভূষিত করেছেন। আলহাজ্ব সামছুদ্দিন আহমদ এম.বি.ই, হবিগঞ্জ জেলার, নবীগঞ্জ উপজেলার, দিনারপুর পরগনার, ১১ নম্বর গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামে ১৯৩৭ ইংরেজি সনের জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম কমর উদ্দিন আহমদ এবং মাতার নাম মরহুমা আলহাজ্ব ফয়জুন্নেসা খাতুন। আলহাজ্ব সামছুদ্দিন আহমেদ এম.বি.ই একজন সফল ব্যবসায়ী, যিনি ১৯৫৮ ইংরেজিতে যুক্তরাজ্যে গমণ করেন। ইংল্যান্ডে এসে স্কুলে ভর্তি হন এবং পাশাপাশি রেস্টুরেন্টেও কাজ করেন। এভারেস্ট নামের একটি রেস্টুরেন্টে প্রথম কাজ শুরু করেন। ১৯৬১ সালে ওই রেস্টুরেন্টের আংশিক মালিকানা কিনে নেন। এখান থেকেই তার ব্যবসায়িক জীবনের শুরু। তখনকার সময়ে তিনি ছিলেন মানচেষ্টার শহরের দ্বিতীয় বাংলাদেশি তরুণ। তিনি সামাজিক কর্মকান্ডের জন্য অত্যন্ত সুপরিচিত ছিলেন। তিনি সমাজ সেবায় নিজেকে এমনভাবে নিয়োজিত করেছিলেন, নিজ ব্যবসা-বাণিজ্যের চেয়ে সমাজসেবাই তাঁর কাছে বেশি প্রাধান্য পেত। তিনি নর্থ ওয়েস্টের অনেক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯৬১ সালে তিনিই নর্থ ওয়েস্টের সবচেয়ে কম বয়সী ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাত ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে তাঁর রেস্টুরেন্টই ছিল নর্থ ওয়েস্টের লিবারেশন মুভমেন্ট অ্যাকশন কমিটির অফিস তথা প্রাণকেন্দ্র। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে লিবারেশন অ্যাকশন কমিটির পক্ষ থেকে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ঐ কমিটির সদস্যদের মধ্যে বর্তমানে সম্ভবত তিনিই একমাত্র জীবিত সদস্য। ইউকে ক্যাটারিং এসোসিয়েশনের প্রচেষ্টায় প্রথম শেখঘাট সিলেটে পাসপোর্ট অফিস স্থাপন করা হয় এবং তিনি এতে সার্বিক সহযোগিতা করেন। পি.আই.এ ৭০৭ জেট ঢাকায় অবতরণে যথেষ্ট কাজ করেন যা ১৯৬৬ সালে শুধুমাত্র করাচিতে অবতরণ করত, ইতিপূর্বে ঢাকাতে অবতরণ করে নাই। তিনি বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকদের ভাষা শিক্ষার ব্যাপারে যথেষ্ট কাজ করেন। দীর্ঘদিন তিনি বিভিন্ন চ্যারিটি সংগঠনের জন্য ফান্ড রেইজিং এর কাজ করেন। স্বাধীনতা-পূর্ব ১৯৭০ সালে ইস্ট পাকিস্তান রিলিফ ফান্ড, পরবর্তিতে বাংলাদেশের জন্য সাইক্লোন ফান্ড, ইউনিসেফ, বন্যা দুর্গত এলাকায় খাদ্য সরবরাহ, টিউবওয়েল স্থাপন, টাকা সংগ্রহ, সেভ দ্য চিলড্রেন, হস্পিস অফ গুড শেফার্ড, ইন্ডিয়ান আর্থ কুয়াক এপিল ইত্যাদি। কমিউনিটি হেলথ কাউন্সিল এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অন্যান্য ধর্ম ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে বুকলেট ছাপান ও তা বন্টন এবং প্রচার করেন। সাউথ চেশায়ার হসপিটালে বয়স্কদের জন্য তিনি নানা প্রকার বিনোদনের ব্যবস্থা সহ আনন্দ ভ্রমনের ব্যবস্থা করেন। সমাজসেবামূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সামছুদ্দিন আহমেদকে এম.বি.ই (Member of British Empire) উপাধিতে ভূষিত করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, এমবিই খেতাব ব্রিটেনে অত্যন্ত সম্মানজনক একটি উপাধি। তিনি গ্রামের মানুষের সুবিধার্থে নিজ বাড়িতে একটি মসজিদ স্থাপন করেছেন। তিনি নবীগঞ্জ কলেজের দাতা সদস্য। দিনারপুর কলেজের দাতা সদস্য। দিনারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য। হবিগঞ্জ ডায়াবেটিস হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। জালালাবাদ এসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য। সিলেট বিভাগ উন্নয়নের আজীবন সদস্য। নবীগঞ্জ এডুকেশন ট্রাস্ট এর ভাইস চেয়ারম্যান।
সামসুদ্দিন আহমেদ এম.বি.ই, হবিগঞ্জ কোর্ট স্টেশন এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার সৈয়দ আজিজুর রহমান এর বড় মেয়ে আয়েশা আহমেদ (বি.এ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ) এর সঙ্গে শুভ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি যুক্তরাজ্যে এসে ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ সহ অন্যান্য বিষয়ের উপর ডিপ্লোমা করেন। সংসার জীবনে আহমদ দম্পতি তিন পুত্র সন্তানের জনক। ১) রুহুল আমিন আহমদ- সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, আয়ারল্যান্ড। ২) নুরুল মোমিন আহমেদ- প্রভাষক, বার্সেলোনা ইউনিভার্সিটি, স্পেন। ৩) তারেক জামিল আহমদ- রেস্টুরেন্ট পরিচালক (ম্যানেজমেন্ট)। আলহাজ্ব সামছুদ্দিন আহমেদ এম.বি.ই এর সহধর্মিণী আয়েশা আহমদ নর্থ ওয়েস্ট (North-West) বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রথম মহিলা জে.পি (J.P. অর্থাৎ Justice of Peace). দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে আলহাজ্ব সামছুদ্দিন আহমেদ এম.বি.ই সবার বড়। অন্যান্য ভাই- বোনেরা হচ্ছেন- ১) করিমুন্নেসা খাতুন- স্বামী মরহুম হাজী সাজন মিয়া, গ্রাম মোস্তফাপুর, ইনাতগঞ্জ, নবীগঞ্জ। সপরিবারে যুক্তরাজ্য প্রবাসী; ২) মরহুমা নাজিরুন্নেছা খাতুন- স্বামী-মরহুম জয়তুন মিয়া, গ্রাম রামলুহ, কোর্টের বাড়ি, দিনারপুর-নবীগঞ্জ। সন্তানাদি যুক্তরাজ্য প্রবাসী; ৩) খায়রুন্নছা খাতুন (লায়লা বেগম)- স্বামী মরহুম শেখ মো: রমজান আলী (মাস্টার)- বিএড, প্রাক্তন শিক্ষক, লোকনাত রমনবিহারী সরকারি (এলআর) উচ্চ বিদ্যালয় বানিয়াচং, গ্রাম তকবাজ খানী (মাস্টার বাড়ি), বানিয়াচং, হবিগঞ্জ; ৪) আলহাজ্ব সফিক উদ্দিন আহমদ (সাবেক মেম্বার), হবিগঞ্জ গোবিন্দপুর নিবাসী মোহাম্মদ ইদ্রিস নিয়ার বড় মেয়ে সুফিয়া বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বর্তমানে সপরিবারে ইংল্যান্ড প্রবাসী।
১৯৭১ সালে তাঁর মালিকানাধীন শালিমার রেস্টুরেন্ট লিবারেশন ওয়ার মুভমেন্ট একশন কমিটি North-West এর হেডকোয়ার্টার ছিল। এই হেডকোয়ার্টার এর অধীনে মোট ১৩টি অ্যাকশন কমিটি ছিল। কমিটির দায়িত্ব পালন করেন সামছুদ্দিন আহমেদ এম.বি.ই সহ অনেক নেতৃবৃন্দ। তাঁর দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশের পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালানো ও লিফলেট বিতরণ করা এবং লকেল এমপিকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা এবং বাংলাদেশের পক্ষে সাপোর্ট আদায় করা। তিনি চেষ্টার কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন এর প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি এবং চেষ্টার এশিয়ান কমিউনিটি প্রোজেক্টের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান। তিনি ১৯৯৫ ইংরেজিতে বার্কলেস কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ডে লাভ করেন, যা তিনি হাউস অব কমন্সের চার্চিল রুম থেকে নিউজকাস্টার মার্টিন লুইস এর কাছ থেকে গ্রহণ করেন এবং তিনি আঞ্চলিক ও জাতীয় কো-অপ কমিউনিটি এওয়ার্ড মানচেষ্টার যুব-সংঘের তরফ থেকে লিবারেশন অ্যাক্টিভিটি অ্যাওয়ার্ডে প্রাপ্ত হন। নাইজেল জে কর্তৃক বিবিসি North-West টিভি ব্রডকাস্টে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারণায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি পত্রিকা কমিউনিটি আওয়ার্ড লাভ করেন, যা গ্রহণ করেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফ্রেন্ক ডবসন এর কাছ থেকে। চেশেয়ার কাউন্টি কাউন্সিল তাহাকে দীর্ঘমেয়াদি কমিউনিটি ওয়ার্কার (লীডার) অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে, যা তাকে প্রদান করা হয় ডিউক অফ ওয়েস্ট মিনিস্টার এর মাধ্যমে। ১৯৯৯ সালে বিবিসি এশিয়ান কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ডে রানার-আপ এবং চেশেয়ার ও নর্থ ওয়েলস মিলেনিয়াম চ্যাম্পিয়ন কমিউনিটি এওয়ার্ড এর জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। ২০০১ সালে চেশেয়ারের লর্ড মেয়র লর্ড মস্টিন কর্তৃক স্টার সিটিজেন এওয়ার্ডে ভূষিত হন। তিনি ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট মিনিস্টার দ্রেয়া কর্তৃক হাউস অব লর্ডসে মুসলিম কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। তিনি বর্তমানে কাউন্টি স্পাইস রেস্টুরেন্টের স্বত্ত্ব¡াধিকারী।
পরোপকারী, সমাজসেবক, দাতা, অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী, অত্যন্ত ন¤্র-ভদ্র, বহু গুণে গুণান্বিত বর্ষীয়ান কমিউনিটি নেতা আলহাজ্ব শামসুদ্দিন আহমদ এম.বি.ই এর ৮৭তম জন্মদিনে শুভেচ্ছাসহ-
আলহাজ্ব শামসুদ্দিন আহমদ এম.বি.ই এর ভাগনা সাংবাদিক আক্তার হোসেন আলহাদী, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ।