ডেস্ক রিপোর্ট ॥ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্যবারের মতো এবারও নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে প্রাধান্য পাচ্ছেন জেলা প্রশাসকরা।
নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্রের তালিকা ও ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ছাপানো হয়েছে মনোনয়নপত্র। তৈরি করা হয়েছে মনোনয়নপত্র দাখিলের সিস্টেম ও নির্বাচনী অ্যাপ। টেবিলে রয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের পরিকল্পনাও। ব্যালট বাক্স থেকে শুরু ভোটের প্রায় সব উপকরণ পৌঁছানো হয়েছে জেলা পর্যায়ে। এখন কেবল তফসিল ঘোষণাই বাকি রয়েছে।
সুনির্দিষ্ট করে দিনক্ষণ না বললেও প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্য নির্বাচন কমিশনাররা বলেছেন চলতি সপ্তাহেই ঘোষণা হতে পাওে নির্বাচনী তফসিল। এক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পাচ্ছেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারাই। ডিসি, পুলিশ সুপারদের (এসপি) প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতেও তেমন বার্তাই দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনাররা।
নির্বাচন কমিশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ভোটের পুরো কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হলেও মূলত ভোটগ্রহণের সব দায়িত্ব রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেই আইনের নির্ধারিত উপায়ে হস্তান্তর করে সংস্থাটি। তাই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের হাতেই থাকে নির্বাচনের সব কর্তৃত্ব।
গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, ইসি ৩০০ আসনের জন্য ৩০০ রিটার্নিং কর্মকর্তা যেমন নিয়োগ করতে পারে, তেমনি একজনকে দুই বা ততোধিক আসনের জন্যও নিয়োগ করতে পারে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সব আসনের জন্য পৃথক পৃথক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হলে সরকারের অন্যান্য দপ্তর থেকে ডিসিদের সমমর্যাদার কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে ডিসিদের মতো কর্তৃত্ব না থাকায় নির্বাচনের মতো বিরাট জনমুখী কাজে তারা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন না। তাই সে আলোচনা সামনে আনছে না সংস্থাটি। বরং ডিসিদের কথাই জোর দিয়ে ভাবা হচ্ছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, প্রতিটি আসনের জন্য একজন করে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের ধারণাটি এদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়। কেননা, জেলা প্রশাসকের হাতে থাকে মাঠের সব ক্ষমতা, যা অন্য দপ্তরের কর্মকর্তারা পান না। তাই তাদের জন্য নির্বাচন তুলে আনা যতটা সহজ, অন্যদের ক্ষেত্রে ততটাই কঠিন।
সদ্য অনুষ্ঠিত ডিসি-এসপিদের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে নির্বাচন কমিশনরাও তাই ডিসিদের সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ওই কর্মসূচিতে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ডিসিদের উদ্দেশে বলেছেন, আমাদের ফাইনাল চাওয়া, মূল চাওয়াটা হলো, ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা যেন ব্যাহত না হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেন এটি আমরা দেখতে চাচ্ছি। জেলা প্রশাসক যদি রিটার্নিং অফিসার হন, ভোটকেন্দ্রের ভেতরে যাবেন, ঘুরবেন। কিন্তু বাইরে থেকেও এটি পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করুন সবাই- ভেতরে শৃঙ্খলা সংরক্ষিত হচ্ছে কি না।
সিইসি আরও বলেন, বিশেষ করে মূল কর্মকর্তা হলো পুলিশ সুপার ও ডিসি। তারা কিন্তু নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তাদের মধ্যে যেন সমন্বয় থাকে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি ক্ষমতা প্রয়োগের প্রয়োজন হয় তখন ক্ষমতা ও শক্তি দেখাবেন।
নির্বাচন কমিশনার মোঃ আহসান হাবিব খান বলেন, তফসিল ঘোষণার পর আপনারাই মাঠ পর্যায়ে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। আপনারাই মাঠ পর্যায়ে আমাদের বিশ্বস্ত প্রতিনিধি। আপনারা যারা রিটার্নিং অফিসার হবেন, তারাই প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারদের সিলেক্ট করবেন। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আপনারা তাদের মোটিভেট করবেন।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। যিনি রিটার্নিং অফিসার থাকবেন, তার কাজই হবে তাদের দিকে নজরদারি রাখা। আপনারা এ বিষয়ে খুবই ভিজিলেন্ট হবেন, তারা কিভাবে ভেতরে গিয়ে কাজ করছে।
নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, নির্বাচন একবারেই কাছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই হয়তো তফসিল ঘোষণা হয়ে যাবে। নির্বাচন কিভাবে করতে হয় আপনারা জানেন। আমরাও জানি নির্বাচন কিভাবে করাতে হয়। এর মধ্যে যদি পার্থক্য বা গ্যাপ থাকে সে বিষয়ে আলোচনা বা অবহিত করা হবে।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করেছিল কে এম নূরুল হুদা কমিশন। সে সময় ৬৪ জন জেলা প্রশাসক ও দুজন বিভাগীয় কমিশনারকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন মোট ৫৮১ জন। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৪৯২ জন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ২৩ জন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ১০, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ৮ জন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ৩ জন, আইন কর্মকর্তা একজন। আর বাকিদের সরকারের অন্যান্য দপ্তর থেকে নিয়োগ দিয়েছিল ইসি।
আগামী ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন করতে চায় ইসি। ইতোমধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতিও পেয়েছে কমিশন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই রেকর্ড করা হতে পারে সিইসির জাতির উদ্দেশে ভাষণ, যেখানে থাকবে ভোটের তফসিলও।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। তাই সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান সংসদের ৫ বছর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। ভোটগ্রহণ করতে হবে তার আগের নব্বই দিনের মধ্যে। অর্থাৎ গত ১ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে। আর ২৯ জানুয়ারির মধ্যে রয়েছে নির্বাচন সম্পন্ন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা।