স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজমিরীগঞ্জে জাইকার অর্থায়নে পশ্চিমবাগ বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ না করিয়ে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসক বরাবরে এলাকাবাসি সাক্ষরিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, পশ্চিমবাগ বেড়িবাঁধ ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি মো: শামছু মিয়া তালুকদার, সম্পাদক তাবাজুল হোসেন তালুকদার শিবপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মো: নলিউর রহামন তালুকদার ও উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোছাদ্দেকুল ইসলামের যোগসাজসে এ অর্থ আত্মসাত করা হয়।
অভিযোগ আরো উল্লেখ করা হয়, একই প্রকল্পে হিলিপের অর্থায়নে বোয়ালিয়াখাল ইতিমধ্যে দুইবার পুনঃখনন করা হয়েছে। পশ্চিমবাগ বেরিবাধকে বোয়ালিয়া খাল দেখিয়ে এ অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে। ২০১৭ সালে বিএডিসি বোয়ালিয়া খালটির ৩শ মিটার পুনঃখনন করে।
দ্বিতীয়বার ২০২২ সালে বোয়ালিয়া খাল জিংড়িমুখ-কেচুরিয়া খাল নাম দিয়ে হিলিপ ৩ হাজার মিটার পুনঃখনন করে। তৃতীয়বার ২০২২ সালে পশ্চিববাগ বেড়িবাধ নাম দিয়ে বোয়ালিয়া খাল পুনঃখননের জন্য কার্যাদেশ দেয় জাইকা। ৪ হাজার ৮৭০ মিটিার দৈর্ঘ পশ্চিমবাগ বেড়িবাধ নির্মাণের জন্য ৯৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তন্মধ্যে বেড়িবাধের ৩ হাজার মিটার খাল পুনঃখননের নামে প্রকল্পের ৩৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাত করে। ইতিমধ্যে বোয়ালিয়া খাল থেকে দুইবার মাটি উত্তোলন করে পূর্বের হিলিপের কাজকেই জাইকার অর্থায়নের কাজ দেখানো হয়।
পশ্চিগবাগ বেড়িবাধে কোন কাজ না করে হিলিপ ও পানিউন্নয়ন বোর্ডের মাটিকে বেড়িবাধের মাটি উল্লেখ করে ১৪টি এলসিএস এর মাধ্যমে গত বছরের ২০ এপ্রিল আজমিরীগঞ্জ এলজিইডি অফিস থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৬৫ টাকার ভূয়া বিল তৈরী করে নির্বাহী প্রকোশলী এলজিইডি হবিগঞ্জ অফিস থেকে বিল পাশ করিয়ে অভিযুক্তরা টাকা আত্মসাত করেন। ভূয়া বিলে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি জানতে পেরে নির্বাহী প্রকৌশলী চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারী এক পত্রে জানিয়ে দেন উক্ত প্রকল্পের কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জনে ব্যর্থ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
অপরদিকে গত ৯ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানান বেড়িবাধে কোন কাজ করা সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, উক্ত প্রকল্পের সভাপতি শামছু মিয়া তালুকদার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নলিউর রহমান তালুকদারের চাচাতো ভাই এবং সম্পাদক তাবাজুল হোসেন তালুকদার ইউপি চেয়ারম্যান নলিউর রহমান তালুকদারের আপন ছোট ভাই। তারা পরস্পর আত্মীয় হওয়ায় তাদের স্বজনদের মধ্যে ২৭টি এলসিএস গঠন করে ব্যাংক হিসাব খুলে চেক বইয়ে অগ্রিম সাক্ষর নেয়া হয়। একাউন্ট হোলন্ডারগণ প্রকৃত পক্ষে মাটির কাজের শ্রমিক নয়। তারা অনেকেই সাক্ষরও জানেন না।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, সভাপতি ও সম্পাদক নিজেই এদের সাক্ষর দিয়েছেন। এলসিএস এ ৬৭৫ জনের নাম দেখানো হলেও অনেকেইর নাম একাধিকবার এসেছে। প্রকল্প তদারকির জন্য সভাপতি সম্পাদকসহ দুইজন পুরুষ ইউপি মেম্বার ও একজন মহিলা ইউপি মেম্বার নিয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও সমিতির সভাপতি সম্পাদক উপ-কমিটি গঠন না করে তাদের ভাই ইউপি চেয়ারম্যান নলিউর রহমান তালুকদারকে এককভাবে প্রকল্পের তদারকির দায়িত্ব দেন। কাজ শুরুর পূর্বে জায়গার অবস্থান জানতে ভিডিও ও ফ্রিওয়ার্ক নেয়ার বিধান থাকলেও তাদের কাছে কাজের পূর্বের কোন ধরনের ভিডিও নেই। ইতিপূর্বে হিলিপের কাজ সম্পন্নের ভিডিওটি যাচাই বাচাই করলে মাটি কে খনন করেছে তা বেরিয়ে আসবে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এলাকাবাসির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও সমন্বিত জেলা দুর্নীতি দমন অফিস, প্রকল্প পরিচালক, সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা ইউনিট এলজিইডি, ঢাকাসহ নির্বাহী প্রকৌশলী হবিগঞ্জ বরাবরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।