চতুর্থ প্রয়াণ দিবসের ভার্চুয়াল সভায় ড. জহিরুল হক শাকিল
স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল বলেছেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন একজন সত্যিকারের রাজনীতিবিদ। তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতির পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহে রাজনীতিবিদদের দ্বৈত দায়িত্ব তথা আইন প্রণয়ন ও স্থানীয় উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে পুরোপুরি সফল ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। দেশের একজন দক্ষ আইনজ্ঞের পাশাপাশি হাওর ও প্রত্যন্ত এলাকার জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ও জনমত সংসদে প্রতিফলিত করেছেন। কিছুদিন রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েই তিনি সিলেটের জন্য দুই জোড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিলেন। কালনী এক্সপ্রেস চালু হলেও পরবর্তী ট্রেনটি আর চালু করতে পারেননি। হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল আরো বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলাদেশে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের জন্য সবসময় সোচ্চার ছিলেন। তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যেমন চাইতেন, জাতীয় সংসদ ও নির্বাহী বিভাগকেও শক্তিশালী করার পক্ষে আজীবন সচেষ্ট ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের চতুর্থ প্রয়াণ দিবসে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি রাতে ভার্চ্যুয়াল সভায় অংশ নেন প্রতিথযশা বুদ্ধিজীবী ও একুশের অমর সঙ্গীতের রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী, আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, এটর্নী জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, মহিবুর রহমান মানিক এমপি, পংকজ দেবনাথ এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আইন উপ-কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার অনূকুল তালুকদার ডাল্টন, হাওর টিভির চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম চৌধুরী প্রমূখ।
আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এক সময় ন্যাপের রাজনীতি করলেও তিনি কখনই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ফাঁদে পা দেননি। বাঙালির শায়ত্বশাসন থেকে স্বাধীনতার আন্দোলনে তাঁর ছিল অগ্রণী ভূমিকা। আমি যখন তাঁর সাথে পরিচিত হই তখন তাঁর বিপ্লবী চরিত্র। লড়াকু মানুষ ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি অন্যান্য সংখ্যালঘুর মতো বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে গিয়ে বড় নেতা হতে পারতেন; সেখানে এমপি মন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বাংলাদেশে সামরিকতন্ত্র চলাকালীন তিনি বিলেতে এসে আমার সাথে দেখা করে এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাথে দেখা করার ব্যাপারে সহযোগিতা চান। পরে এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাতে সাক্ষাৎ করে সেনাশাসক কর্তৃক বাংলাদেশের মানবাধিকার হরণসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপর নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দায়েরের চিত্র তুলে ধরেন। তাঁর মতো অসাধারণ পার্লামেন্টারিয়ান বাংলাদেশের জন্য আজ খুবই প্রয়োজন ছিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর সাবেক চেয়ারম্যান ও আপীল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় খুবই আন্তরিক ছিলেন। তাঁর অনেক স্বপ্নই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। তিনি আমাদের অভিভাবক ছিলেন। আমি উনার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এটর্নী জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আমার কাছে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এলাকার অনেক মামলা পাঠাতেন। বেশিরভাগসময়ই আমাকে বলতেন, আমিন উনি হচ্ছেন আমাদের রাজনৈতিক কর্মী। টাকা পয়সা নেই। গরীব মানুষ। তুমি কেবল তোমার খরচটি রেখে সহযোগিতা করো। আমি তা ই করতাম। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংসদের পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষায় সবসময় সচেষ্ট ছিলেন। বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট পরিচালনার উদাহরণ টেনে তিনি সংসদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। একজন আইনজীবী হয়েও তিনি সবসময় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। যদি আইন পেশায় নিয়োজিত থাকতেন তাহলে আমাদের থেকে ভালো আইনজীবি হতে পারতেন।
মহিবুর রহমান মানিক এমপি বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শুধু মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন না; তিনি ছিলেন একজন সম্মুখ সারির মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীন হলে প্রথম গণপরিষদে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে সংবিধান প্রণয়ন কমিঠির সদস্য করেন। বিরোধীদলের সদস্য হলেও তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য। বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলে তিনি এতে সমর্থন করে বাকশালের সদস্য পদ গ্রহণ করেন। সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও তিনি বেশিরভাগ সময় ছিলেন বিরোধ দলের সদস্য। সকল ঘাত প্রতিঘাত মোকাবেলা করে গণমানুষের রাজনীতি করেছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আইন উপ-কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার অনূকুল তালুকদার ডাল্টন বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশকে যদি অসাম্প্রদায়িক চেতনার উপর প্রতিষ্ঠিত করতে হয় তাহলে আমাদেরকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আদর্শ বুকে ধারন করতে হবে।