স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ছয়শ্রী গ্রামে সোমবার দিবাগত রাত যত গভীর হচ্ছিল ততই মৌনতায় আচ্ছন্ন হয়ে সবাই দেখছিলেন রাধা-কৃষ্ণের জীবনালেখ্য। সুরের মূর্চনায় অপলক দৃষ্টিতে সবাই দেখছিলেন অপূর্ব নৃত্যকলা। উৎসবের আমেজে সেখানে শেষ হয় ঐতিহ্যবাহী মহারাসলীলার ১৭৭তম আসর।
মুনিপুরী ঐতিহ্যের ১৭৭তম বাৎসরিক প্রধান ধর্মীয় উৎসব উত্তর ছয়শ্রী মহাপ্রভু মন্ডপে সোমবার সকাল ৫টায় মঙ্গল আরতির মাধ্যমে শুরু হয় উৎসব। মঙ্গলবার ভোররাত পর্যন্ত তা চলে। উৎসবে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল। বিশেষ অতিথি ছিলেন এনএসআই’র উপ-পরিচালক আজমল হোসেন, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাকারিয়া চৌধুরী, চুনারুঘাট রিপোর্টার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ও আমরোড স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন।
মহারাস লীলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন কুমার সিংহ জানান, মঙ্গল আরতির মাধ্যমে উৎসব শুরুর পর সোমবার দুপুর ১টায় মহাপ্রভুর ভোগ আরতি ও মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শ্রী কৃষ্ণের গোচারণ লীলা এবং রাত সাড়ে ১০টা থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত হবে মহারাসলীলা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতি বছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অনাড়ম্ভরভাবে অনুষ্ঠিত হয় মহারাসলীলা। তবে এ বছর করোনার কারণে দুর্গোৎসব ও লগ্নের জন্য বিলম্বে এই আয়োজন করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মুনিপুরী সম্প্রদায়সহ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে অনেকেই ছুটে আসেন মহারাসলীলা উপভোগ করতে। মুনিপুরী নৃত্যকলা শুধু ছয়শ্রী নয়; গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বিশ্বের নৃত্যকলার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান দখলে করে আছে। মহারাসলীলায় শিশু থেকে শুরু করে কিশোর কিশোরী সবার স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহনে রাতের বেলায় রাস উৎসব হয়ে উঠে সবচেয়ে আকর্ষণীয়।
রাখাল নৃত্য দিনের বেলায় হলেও রাখাল নৃত্যের পর থেকেই সন্ধায় শুরু হয় রাসলীলা। শুরুতেই পরিবেশিত হয় রাসধারীতের অপূর্ব মৃদঙ্গ নৃত্য। মৃদঙ্গ নৃত্য শেষে প্রদীপ হাতে নৃত্যের তালে তালে সাজানো মঞ্চে প্রবেশ করেন শ্রী রাধা সাজে সজ্জিত একজন নৃত্যশিল্পী বৃন্দা। তার নৃত্যের সঙ্গে বাদ্যের তালে তালে পরিবেশিত হয় মুনিপুরী বন্দনা সঙ্গীত। শ্রীকৃষ্ণ রূপধারী বাঁশি হাতে মাথায় কারুকার্য্য খচিত ময়ূর গুচ্ছধারী এক কিশোর নৃত্যশিল্পী তার বাঁশির সুর শুনে রজগোপী পরিবেশিত হয়ে রাধা মঞ্চে আসেন। শুরু হয় সুবর্ণ কংকন পরিহিতা মুনিপুরী কিশোরীদের নৃত্য প্রদর্শন। স্থানীয় শিল্পীদের এই পরিবেশনা সবাইকে বিমোহিত করে। ওই দিনটির জন্য তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করেন দীর্ঘ সময় নিয়ে। শিল্পীরা বংশ পরম্পরায় চর্চা করে আসছেন এই নৃত্যকলা।