কয়েক ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয়পক্ষে অন্তত ৩০ জন আহত ॥ সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক ৭ ॥ গুলিবর্ষণ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার নতুন খোয়াই মুখ এলাকায় ব্যাটারি চালিত টমটম স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে উমেদনগর এলাকার দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়। সংঘর্ষের শুরুতে একপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের উপর গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সংঘর্ষ থামাতে ৮ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্র জানায়, কয়েক বছর ধরে হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার খোয়াইমুখ এলাকায় পৌর ঘাটলার সামনে ও রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে ইজিবাইকের (টমটম) স্ট্যান্ড স্থাপন করা হয়। উক্ত স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে পৌর এলাকার উমেদনগরের দু’টি পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই উমেদনগর আলগাবাড়ি বনাম পূর্ব এলাকার লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রথমে স্ট্যান্ড এলাকায় সংঘর্ষ হলেও পরে নবীগঞ্জ সড়কের মাদ্রাসা এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে একপক্ষ অপর পক্ষের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম পিপিএম ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ-ওসি মো. মাসুক আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৮ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষের ৭ জনকে আটক করে পুলিশ। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সহায়তা করেন ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি-ব্যকস হবিগঞ্জ এর সভাপতি মোঃ শামছুল হুদা। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখেন হবিগঞ্জ মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি শামছু মিয়া।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৮ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ সময় সংঘর্ষে জড়িত উভয় পক্ষের ৭ জনকে আটক করা হয়। পাশাপাশি পুনরায় সংঘর্ষ এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনা শালিসে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছেন ব্যকস সভাপতি শামছুল হুদাসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা। তাঁরা রাতে উভয়পক্ষের সাথে আলোচনা করে শালিসের প্রচেষ্টা নেন। উভয়পক্ষই শালিসের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। আহতরা সুস্থ হলে শালিসের দিন তারিখ ঠিক করা হবে।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী নেতা শামছুল হুদা দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকাকে জানান, রাতে তারা এক পক্ষের শেখ আব্দুল হান্নান ও অপরপক্ষের মুক্তার মিয়ার মুরুব্বী হাজী লুৎফুর রহমান নানু মিয়ার সাথে কথা বলে সংঘর্ষের ঘটনাটি সলিশে নিষ্পত্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান- উভয় পক্ষই জানিয়েছেন তারা আর সংঘর্ষে জড়াবেন না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে- সংঘর্ষে আহত অবস্থায় তারেক মিয়া (২০), এবাদুর রহমান (২০), মোতাব্বির (২৫), শান্ত মিয়া (২১), রোমান মিয়া (২২), কামরুল মিয়া (২২), মাসুম (২৭), তানভীর (৩২), আরিফ (২৫), মোশাহিদ (২০), ইমন আহমেদ (২৫), তোরাব আলী (২৫), সাব্বির (২৫), ফয়ছল (২০), ফয়ছল (২৭), জুলহাস (৩০), সাইফুল (২০), তাজুল (২০), মধু মিয়া (৬৫), কয়সর মিয়া (২০), ছমেদ (২৫), রশিদ (৪৫), সেকুল (৩০), মামুন (৩০), মুকিত (৪০) ও কায়েস (২০) কে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ছাড়াও টেটাবিদ্ধ কয়েকজনকে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পুলিশের মধ্যে আহতরা হলেন সদর থানার এসআই হারুন আল রশিদ, খুর্শেদ আলম, অভিজিৎ ভৌমিক, নাজমুল হাসান, সাইদুর রহমান, এসএআই সুমন চন্দ্র রায়, হাবিবুর রহমান, তোরাব হোসেন। তারাও হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।