এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের আলোচিত ওয়ার্ড হলো ১নং ওয়ার্ড। উমেদনগরের অধিকাংশ এলাকা নিয়ে এ ওয়ার্ডটি গঠিত। এ ওয়ার্ডে ৬ হাজারের উপরে ভোট রয়েছে। অসাম্প্রদায়িক সচেতনাকে ধারণ করে এ ওয়ার্ডে মুসলমান ও হিন্দু যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন সম্প্রীতির বন্ধনে। উমেদনগরে গড়ে উঠেছে শিল্প এলাকা। বিশেষ করে ১নং ওয়ার্ড এলাকায় রয়েছে অনেক মিলকারখানা। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান-চাল আমদানী ও রপ্তানী হচ্ছে প্রতিদিন। বিশেষ এ ওয়ার্ডে আসকর আলী ফিস মার্কেট থেকে প্রতিদিন শতাধিক দেশীয় প্রজাতির মাছ দেশ বিদেশে রপ্তানী করা হচ্ছে। গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের পাশাপাশি হাইস্কুল, মাদ্রাসা ও কিন্ডার গার্টেন রয়েছে। আলোচিত ১নং ওয়ার্ড তথা উমেদনগরে প্রতিটি পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটের হিসেবে নিকাশ শুরু হয়। উমেদনগরের ভোট যে প্রার্থী এককভাবে পাবে তার বিজয় অর্জনের সম্ভাবনা থাকে বেশি। বর্তমান পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজানের বাড়িও উমেদনগরে গ্রামে। গ্রামের একক মেয়র প্রার্থী হিসেবে এবারও থাকছেন মিজান। কিন্তু গ্রামের ওয়ার্ডের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিটি নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের নির্বাচনেও সম্ভাব্য ৭ কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এসব সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন, শিক্ষার মানোন্নয়ন, মাদক মুক্ত ওয়ার্ড গড়ার প্রত্যয় নিয়ে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ করছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে কেউ করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন। এ ওয়ার্ডে এবার যেসব সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- এ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক মো. আবুল হাসিম, উমেদনগর শাহজালাল একাডেমী এন্ড স্কুলের অধ্যক্ষ মদিনা ট্রান্সপোর্টের পরিচালক আফজাল মিয়া, হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দূর্বার সমাজকল্যাণ যুব সংগঠনের সভাপতি মো. আব্দুল মালেক, উমেদনগর শিক্ষা ও উন্নয়ন ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক যুবলীগ নেতা আবুল কাশেম রুবেল, উমেদনগর শিক্ষা ও উন্নয়ন ফোরামের উপদেষ্টা আলহাজ্ব কুতুব উদ্দিন, হাজী ফজলুল হক (সজলু) ও তরুণ ব্যবসায়ী শেখ মো. ইকবাল হোসেন।
এ ব্যাপারে বর্তমান কাউন্সিলর আবুল হাসিম দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, এ ওয়ার্ডে আমি ৩ বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। এ ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট নির্মাণসহ অনেক উন্নয়ন আমার হাতেই হয়েছে। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য ওয়ার্ডবাসী এবারও আমাকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য অনুরোধ করছেন। ওয়ার্ডবাসীর অনুরোধে এবারও আমি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করবো। ইনশাআল্লাহ আমি সকলের দোয়া ও আশির্বাদ নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হবো। সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী আফজাল মিয়া জানান, দীর্ঘদিন এলাকা শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছি। এলাকার সামাজিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি জলাবদ্ধতা নিরসন, মাদক মুক্ত ওয়ার্ড গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমি নির্বাচনী কাজ করে যাচ্ছি। বিগত নির্বাচনেও আমি কাউন্সিলর পদে অংশগ্রহন করেছিলাম। ওয়ার্ডবাসী আমাকে বিপুল ভোট দিয়েছিলেন। এবার আশাবাদী ওয়ার্ডবাসী আমাকে কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত করবেন। কাউন্সিলর প্রার্থী জেলা যুবলীগ নেতা আব্দুল মালেক জানান, ছাত্রলীগের রাজনীতি করে জেলা যুবলীগের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছি। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সময়ই এলাকার উন্নয়নের কথা চিন্তা করেছি। এলাকার উন্নয়নের কথা চিন্তা করেই বিগত পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে অংশ গ্রহন করেছিলাম। এরপর থেকে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। ১নং ওয়ার্ডে অনেক সমস্যা রয়েছে এবং পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। ‘মাদক’ সমস্যা রয়েছে। নির্বাচিত হলে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ মাদক নির্মূলে বিশেষভাবে কাজ করে যাবেন বলে জানান কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল মালেক।
কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল কাশেম রুবেল বয়সে তরুণ। তিনি বিগত নির্বাচনে ১ম বারের মত কাউন্সিলর পদে অংশগ্রহন করেছিলেন। এবার ২য় বারের মত নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবুল কাশেম দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, করোনা পরিস্থিতিতে রাতের আধারে এলাকায় কর্মহীন ও দরিদ্র লোকজনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছি। এখনও এলাকার কারো সমস্যা হলে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছি। জনসেবাকে আমি ইবাদত মনে করে রাজনীতি করি। রাজনীতির পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছি। তিনি বলেন- ১নং ওয়ার্ডে অনেক সমস্যা রয়েছে। এর অন্যতম সমস্যা হলো পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। এছাড়া মাদকের সমস্যাও রয়েছে। কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডের সকল সমস্যাই সমাধান করবো ইনশাআল্লাহ। কাউন্সিলর প্রার্থী আলহাজ্ব কুতুব উদ্দিন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন। তিনি বলেন- এবার প্রথম কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডের সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ মোঃ ইকবাল হোসেন জানান, ১নং ওয়ার্ডে আমি দীর্ঘদিন ধরেই সামাজিক কর্মকান্ড করে যাচ্ছি। করোনার সময়ে ওয়ার্ডে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে নগদ অর্থ, খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। এখনও ওয়ার্ডবাসীর জন্য সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন বিগত নির্বাচনেও আমি কাউন্সিলর পদে অংশ নিয়েছিলাম। এবারও নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার জন্য প্রচার-প্রচারণা করছি। ওয়ার্ডবাসীর সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। এবার আশা করি সকলের দোয়া, আশির্বাদ নিয়ে নির্বাচিত হবো। কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী ফজলুল হক (সজলু) জানান, বিগত নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছিলাম। এবারের নির্বাচনের জন্য এখন মাঠে রয়েছি। নির্বাচন করবো কি না কয়েকদিনের মধ্যে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো।