প্রভাবশালী মহল বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির কতিপয় সদস্য ও কর্মচারিকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করে সুযোগ বুঝে ট্রাক্টর ও পিকআপ দিয়ে পরিবহন করছে
চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ চুনারুঘাটে একটি প্রভাবশালী চক্র বাগানের অভ্যন্তরে ছড়া ও খাল থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। তাদের সহায়তা করছে বাগানেরই একটি মহল। এছাড়া বাগান কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ নিজের প্রয়োজন দেখিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। রাতে নয় এখন দিনে দুপুরেও বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। তাদের অশুভ থাবায় চুনারুঘাট উপজেলার চা বাাগনগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বিলিন হওয়ার পথে। চা বাগানের অভ্যন্তর থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের কারণে নদী গর্ভে ভেঙ্গে পড়েছে বাড়ি-ঘর। বাগানের চা গাছ ভেসে গেছে পাহাড়ী ছড়ার মাঝে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্রীজ ভেঙ্গে পড়েছে।
চুনারুঘাটে রয়েছে ২৪টি চা বাগান। রয়েছে ১৮ হাজার হেক্টর বনভূমি। এসব চা বাগান ও পাহাড়ী এলাকায়ই রয়েছে সিলিকা বালু। উপজেলার ৫টি সিলিকা বালু মহাল ইজারা বন্ধ থাকায় সিলিকা বালুর সংকট রয়েছে। এছাড়া সাধারণ বালুর চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেশি দামে এসব সিলিকা বালু বিক্রি হয়। চা বাগানের লোভনীয় এসব সিলিকা বালু উত্তোলনে কোন অনুমতি নেই। কিন্তু প্রতি বছর পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টির পানিতে বিপুল পরিমাণ সিলিকা বালু এসে চা বাগানের ছড়া ও খালগুলো ভরাট হয়ে যায়। এ সুযোগে চা বাগানের কতিপয় পঞ্চায়েত ও চা শ্রমিক নেতাদের সহযোগিতায় বাগানের বাইরের একটি চক্র বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। উপজেলার চান্দপুর, চন্ডিছড়া, আমু, নালুয়া, লস্করপুর, বেগম খান, চাকলাপুঞ্জি, দেউন্দি ও লালচান্দ চা বাগানের বিভিন্ন ছড়া থেকে প্রতিদিনি বালু উত্তোলন করে ট্রাক্টর ও পিকআপ দিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে। প্রভাবশালী মহলগুলো বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির কতিপয় সদস্য এবং কতিপয় কর্মচারিকে ম্যানেজ করে এসব বালু প্রতিদিন উত্তোলন করে সকাল ও বিকেলে সুযোগ বুঝে ট্রাক্টর ও পিকআপ দিয়ে পরিবহন করছে। বিশেষ করে খুব ভোরে শ্রমিক দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আবার কোন কোন সময় বালু চুরিও হয়। সকাল বেলা চোরেরা বালু উত্তোলন করে ট্রাক্টর দিয়ে বালু নিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে বাগান কর্তৃপক্ষ এসব বালু ট্রাক্টরসহ আটক করছে। চা বাগান ও পাহাড়ী ছড়াতে বালুখেকোদের কালোথাবায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে স্থানীয় ছাত্রলীগের নামে কতিপয় নেতা প্রায়ই ট্রাক্টর দিয়ে চা বাগান থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। অভিযোগ রয়েছে, বাগান কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি ট্রাক্টর আটক করলেও ওই নেতা তদবির করে ছাড়িয়ে আনেন। একই ভাবে একটি বালু ব্যবসায়ী দলও প্রতিয়নিয়ত বালু উত্তোলন করে চুরি করে বিক্রি করছে।
এ ব্যাপারে চাঁন্দপুর চা বাগান ব্যবস্থাপক শামীমুল হুদার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারি ব্যবস্থাপক বলেন, চা বাগানে কোন বালু উত্তোলন করা হয় না। তবে বিভিন্ন চোরাই চক্র মাঝে মাঝে বালু চুরি করে নিয়ে যাবার চেষ্ঠা করছে। আমরা তাদের বিভিন্ন সময়ে ধাওয়া করেছি এবং থানায় অভিযোগ দিয়েছি। তিনি বলেন, বহিরাগত কিছু বালু ব্যবসায়ী বাগানের বিভিন্ন ছড়া থেকে বালু চুরির চেষ্ঠা করে ব্যর্থ হয়েছে।
চা শ্রমিক নেতা নৃপেন পাল বলেন, কিছু কুচক্রী মহল বালু চুরির চেষ্টা করে। আমরা সজাগ আছি, চোরেরা বিভিন্ন সময়ে বালু নেওয়ার চেষ্ঠা করলেও আমরা বাধা দিয়েছি।