সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে আসে আসামী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালেকের সাথে প্রবাসীর স্ত্রী মাফিয়া খাতুনের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। স্বামী কদ্দুছ এ ঘটনা জেনে যাওয়ায় তাকে হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখে আসামীরা

চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রানীগাও ইউনিয়নে প্রবাসী কদ্দুছ হত্যা মামলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দুই ইউপি মেম্বারকে আসামী করে ৭ জনের নামে আদালতে চার্জশীট প্রদান করা হয়েছে। প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি সদস্যের অবৈধ সম্পর্কের কারণেই ঘাতকরা পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছে বলে চার্জশীটে অভিযোগ করা হয়। সিআইডির দীর্ঘ তদন্ত শেষে আওয়ামীলীগ নেতা ও দুই ইউপি সদস্যকে এ মামলায় চার্জশীটভূক্ত করা হয়। সম্প্রতি সিআইডি আদালতে চার্জশীট দাখিল করে।
উপজেলার রানীগাও ইউনিয়নের আতিকপুর গ্রামের প্রবাসী আব্দুল কদ্দুছ ২০১৮ সালে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে তার স্ত্রী মাফিয়া খাতুনের নামে পাঠানো প্রায় ১৫ লাখ টাকার হিসেব চাইলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ নিয়ে কদ্দুছ মিয়ার স্ত্রী মাফিয়া খাতুন ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর হবিগঞ্জ নারী শিশু আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলা আপোষ করে দেওয়ার কথা বলে ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক, আঃ সালাম ও ছোবহান মিয়াসহ কয়েকজন ২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর রাতে আঃ কদ্দুছকে সোবহান মিয়ার বাড়ি পারকুল বস্তিতে ডেকে নেয়। সেখানে তাকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তার লাশ একটি পেয়ারা গাছে ঝুলিয়ে রাখে। পরদিন খবর পেয়ে চুনারুঘাট থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করে। এ নিয়ে নিহতের ভাই হুছন আলী বাদী হয়ে আদালতে সোবহানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
চুনারুঘাট থানা পুলিশ এ মামলা তদন্ত করে নিহত কদ্দুছ স্ত্রীর সাথে টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে আত্মহত্যা করেছে এবং স্ত্রী মাফিয়ার বিরুদ্ধে ৩০৬ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে বলে আদালতে রিপোর্ট প্রদান করে। রিপোর্টে বাকী ৪ আসামীকে অব্যাহতি প্রদান করে পুলিশ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বাদী হুছন আলী আদালতে নারাজী প্রদান করলে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি পুন:তদন্তের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে এ মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় হবিগঞ্জ সিআইডি পুলিশ। সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। প্রবাসী কুদ্দুছের স্ত্রীর সাথে ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালেক এর অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে জেনে গিয়েছিলেন কদ্দুছ। এ কারণে ইউপি সদস্য আব্দুল মালেকের পরামর্শে মাফিয়া খাতুন তার স্বামী কদ্দুছ মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেনও বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে। এ মামলা আপোষে মীমাংসা করে দিবেন বলে ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক ও আব্দুল হান্নানের পরামর্শে আব্দুস সোবহান ও আব্দুস সালাম নিহত কদ্দুছ মিয়াকে ঘটনার দিন পারকুল বস্তিতে নিয়ে যান। তদন্তে ইউপি সদস্য আব্দুল মালেকের সাথে কদ্দুছের স্ত্রী মাফিয়া খাতুনের অবৈধ সম্পর্কের কারণে আব্দুল মালেকের পরামর্শক্রমে সোবহান, সালামসহ অন্যান্য আসামীরা কদ্দুছকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখে। এছাড়া কদ্দুছকে হত্যার পর যেভাবে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল তাতেও প্রমাণিত হয় তাকে হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
চার্জশীটে বলা হয়, মামলার সার্বিক তদন্ত, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও পারিপার্শিকতার আলোকে সুরতহাল রিপোর্ট, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও ভিকটিমের ছবি পর্যালোচনায় কদ্দুছকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কারণে ইউপি সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মালেক, ইউপি সদস্য আব্দুল হান্নান ও নিহত কদ্দুছ মিয়ার স্ত্রীর মাফিয়া খাতুনসহ ৭ জনকে আসামীভূক্ত করা হয়।