আইনে নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় ২৬শে মার্চের পর থেকে যেসব বিচার প্রার্থী দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের আদেশ বা প্রশাসনিক আদেশের বিরুদ্ধে দেশের কোনো আদালতে মামলা করতে পারেননি, তারা আগামী ৩১শে আগস্টের মধ্যে আদালতে মামলা বা আবেদন করতে পারবেন। দেশের বিভিন্ন আদালতে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা, আবেদন, আপিলসহ এ সংশ্লিষ্ট সকল আবেদন দায়েরের তামাদির মেয়াদ বাড়িয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এ সময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন- রাষ্টের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন প্রমুখ।
সংবিধানে প্রদত্ত ১০৪ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে এ আদেশ দেন আদালত। আদালত আদেশে বলেন, যেসব ফৌজদারি, দেওয়ানি ও প্রশাসনিক আদালত বা ট্রাইব্যুনালে মামলা-মোকদ্দমা, আবেদন, আপিল, রিভিশনের মেয়াদ গত ২৬শে মার্চ তামাদি হয়েছে সেসব মামলা-মোকদ্দমা, আবেদন, আপিল, রিভিশনের মেয়াদ আগামী ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো।
এর আগে গত ৭ই জুন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতে যেকোনো আবেদন করার সময়সীমা নির্দিষ্টকরণ (তামাদি) বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠান। নোটিশে বলা হয়, কিছু বার অ্যাসোসিয়েশন (আইনজীবী সমিতি) এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নেগুসিয়েবল ইন্সস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট, ১৮৮১ এর অধীনে মামলা দায়েরের নির্দেশনা প্রদান করছেন। তারা মামলা দায়েরের ভিন্ন ভিন্ন নির্দেশনা (ই-মেইলে মামলা দায়ের, স্বশরীরে মামলা দায়ের, তামাদি মওকুফের আবেদন প্রভৃতি) দিচ্ছেন। এ সকল নির্দেশনা বিচারিক ব্যবস্থায় অনিশ্চয়তা তৈরি করছে যা কাম্য নয়।
এমতাবস্থায় বিচারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান অতীব জরুরি।
এই নোটিশের পর সেদিনই সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরের স্বাক্ষরে এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নেগুসিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট, ১৮৮১ এর অধীন মামলা দায়েরসহ যেসব দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা/আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে আইনে সময়সীমা নির্ধারণ করা আছে এবং যেসব মামলা বা আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে লিমিটেশন অ্যাক্ট এর ৫ নম্বর ধারার বিধান প্রযোজ্য নয়, সেসব মামলা বা আপিল দাখিল করা যাবে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিচারক তা গ্রহণ করে শুনানির তারিখ নির্ধারণ করবেন। সুপ্রিম কোর্টের এই বিজ্ঞপ্তির পরও বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছিল না। এ অবস্থায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত বিষয়টি নিয়ে আদেশ দিলেন।
উল্লেখ্য, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও সংক্রমণের কারণে গত ২৬শে মার্চ থেকে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সকল অধস্তন আদালতের স্বাভাবিক বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। গত ৯ই মে রাষ্ট্রপতি ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার অর্ডিন্যান্স জারি করেন। ওই অর্ডিন্যান্সের আলোকে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার জন্য গত ১০ই মে সুপ্রিম কোর্ট, উচ্চ আদালত এবং অধস্তন আদালতের জন্য পৃথক পৃথক প্রাকট্রিস নির্দেশনা জারি করা হয়। মানবজমিন