স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচারপতি, মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার, নৌ-বাহিনীর কমোডরের সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রচার করে নিজেকে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত করে প্রতারণার ফাঁদ পেতে সাধারণ লোকজনের সাথে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত যুবক শাহ আফজাল হোসেনের জামিন নামঞ্জুর করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম তার জামিন নামঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্র জানায়, বুধবার শাহ আফজাল হোসেনের জামিন আবেদন করেন সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতু। মামলার বাদী মো. টিপুর পক্ষে জামিনের বিরোধীতা করেন অ্যাডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান। দীর্ঘ শুনানী শেষে বিজ্ঞ বিচারক আসামীর জামিন নামঞ্জুর করেন।
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হবিগঞ্জ সদর থানার এসআই পলাশ দেব প্রতারক শাহ আফজাল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন। হবিগঞ্জ আদালতের পরিদর্শক আল আমিন জানান, রিমান্ড শুনানীর জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শাহ আফজাল হোসেন ভিআইপিদের সাথে ছবি দেখিয়ে এলাকায় প্রচার করে বঙ্গভবন, গণভবন ও সচিবালয়ে তার অবাধ যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। যে কোন কাজ সে করে দিতে পারে। কোন কোন স্থানে সে নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবেও প্রচার করে। সিলেট থেকে ঢাকায় ডমেস্টিক ফ্লাইটে ভ্রমণ করে সেই ছবিও মাঝে মাঝে পোস্ট দিয়ে নিজের অবস্থান জানান দেয় সে। আর সাধারণ লোকজন এই ছবি দেখে বিশ্বাস করে শাহ আফজালের মাধ্যমে সব কাজই সম্ভব। ফলে বিভিন্ন লোকজন ঠিকাদারী কাজ, চাকুরী, নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন এবং বিদেশের ভিসা পেতে লক্ষ লক্ষ টাকা দেয় তাকে। কিন্তু টাকা দেয়ার পর কোন কাজই সে না করে সে টাকা হাতিয়ে নেয়। টাকা ফেরত চাইলে পাল্টা হুমকি দিয়ে বলে বিচারপতি তার আত্মীয়। বড় বড় কর্মকর্তারা তার পকেটে। বাড়াবাড়ি করলে সে ফাঁসিয়ে দিবে। ফলে প্রতারিত হয়েও কেউ মুখ খুলেনি তার বিরুদ্ধে। পরে হবিগঞ্জ সদর থানায় প্রতারণার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শায়েস্তানগর এলাকার ঠিকাদার মোহাম্মদ টিপু ও রিচি গ্রামের ফারুক মিয়া। মোহাম্মদ টিপু অভিযোগে উল্লেখ করেন সিলেট শহরে বড় ধরণের কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক আফজাল। মোহাম্মদ টিপুর দায়ের করা মামলায় শাহ আফজালকে ৪ জুলাই গ্রেফতার করা হয়। ফারুক মিয়া তার মামলার উল্লেখ করেন প্রতারক আফজল তার স্ত্রীকে হাই স্কুলের নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দিবে বলে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
অভিযোগ রয়েছে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার গৌর প্রসাদ রায়ের কাছ থেকে আফজল পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকুরী নিয়ে দিবে বলে ৩ লাখ টাকা নেয়। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মল্লিখ সরাই গ্রামের হাশিম মিয়া নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ইংল্যান্ড প্রেরণ করবে বলে চুক্তি করে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শফিউল্লাহর কাছ থেকে পিস্তলের লাইসেন্স করে দিবে বলে নেয় ৬০ হাজার টাকা। এভাবে বহু লোকের সাথে প্রতারণা করেছে সে।
শাহ আফজাল হোসেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার আউশপাড়া গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল হেকিমের ছেলে। সে হাই স্কুলের লেখাপড়া শেষ করতে পারেনি। এক পর্যায়ে আনসারে চাকুরী নিলেও দুর্নীতির কারণে চাকুরিচ্যুত হয় সে। পরে সিলেটে এক বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিয়ে বড় বড় নেতাদের সাথে ছবি তোলার সুযোগ খুঁজতে থাকে। এভাবে সে বিভিন্ন নেতাদের কাছে চলে যায়। এক পর্যায়ে সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মন্ত্রী এমপিদের সাথেও ছবি তুলে তা ফেসবুকে পোস্ট করে। বেশ কয়েকজন লন্ডন প্রবাসীর সাথেও ব্যক্তিগত পরিচয় সৃষ্টি করে। সে কোন পদবীধারী না হলেও সরকারী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের চিঠিও পেয়ে থাকে।