হবিগঞ্জের সর্বত্র চাউল ও পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে
নিত্যপণ্য কিনতে চৌধুরী বাজারে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বললেন, বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কোন ঘাটতি নেই। অহেতুক প্রয়োজনের অধিক কিনে মজুত করবেন না। যারা নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে

হবিগঞ্জের মুখ রিপোর্ট ॥ করোনা ভাইরাস আতঙ্ক খুচরা বাজারে নিত্যপণ্যের ওপর বেশ প্রভাব ফেলেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে মজুদ করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন মানুষ, বিশেষ করে নারীরা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরাও পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারপরও রাতে অনেকে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য কিনতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরেছেন। এ চিত্র হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজারের। এদিকে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে প্রশাসন। গতকাল অতিরিক্ত মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রি করা হচ্ছে খবর পেয়ে বাজারে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমান আদালত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, অভিযানকালে অতিরিক্ত মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে ক্রেতাদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় চৌধুরী বাজার কাঁচামাল হাটায় গিয়ে দেখা যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে মানুষ বিশেষ করে মহিলারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। তারা দেদারছে পণ্য ক্রয় করছেন। বাজারে আগত প্রায় সকলকেই আলু ক্রয় করতে দেখা গেছে। ফলে ৩ দিন পূর্বেও যে আলু ১৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা। আর দেশী আলু বলে পরিচিত আলু বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকা। তার পরও সকলেই তা দেদারছে ক্রয় করছেন। সন্ধ্যায় চৌধুরী বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শংকর পালের মিলে সরিষার তেল কিনতে গিয়ে অনেইে খালি হাতে ফিরে গেছেন। এ ব্যাপারে ওই দোকানের এক কর্মচারি জানান, গতকাল হঠাৎ করে তেলের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে মিলে যে তেল ছিল (খোলা ও বোতলজাত) তা সবই বিক্রি হয়ে গেছে। রাতে ঘানিতে যে তেল উৎপাদন হবে আগামীকাল তা বিক্রি করা হবে।
চৌধুরী বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ মামুন জানান, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে হঠাৎ করেই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। ক্রেতা বিশেষ করে মহিলা ক্রেতারা দল বেধে বাজারে আসছেন। তারা ইচ্ছে মতো পণ্য ক্রয় করছেন। ক্রেতাদের চাহিদা এমন পর্যায়ে ঈদের সময়ও এমন চাহিদা হয় না। আর ক্রেতাদের এমন চাহিদার কারণে পণ্যের দামও অনেক বেড়ে গেছে। এতে বেশি প্রভাব পড়েছে চাউলের বাজারে। চাউল বস্তা প্রতি মান ভেদে ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। ক্রেতাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে শীঘ্রই দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিবে তাই প্রত্যেকে সাধ্য অনুযায়ী পণ্য ক্রয় করছেন। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। গত রবিবার যে পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০/৩৫ টাকা গতকাল সে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে মান ভেদে ৪৫/৬৫ থেকে শুরু করে ৭০ টাকা পর্যন্ত। ১৫ টাকা কেজির আলু বিক্রি হয়েছে ২০/২৫ টাকা। তবে তেল, লবণের দাম বাড়েনি। আর রসুনের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১০ টাকা। শুক্রবার যদি গাড়ি না আসে তবে দাম আরও বাড়বে। তিনি আরও জানান, গতকাল পাইকারী বাজারেও পেঁয়াজের দাম অনেক বেড়ে গেছে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি না থাকলে এবং গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলে নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়বে। চৌধুরী বাজারের একজন আলু ব্যবসায়ী জানান, আলুর গাড়ি না আসায় এবং চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েছে।
হবিগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা মোঃ আতাউর রহমান জানান, তিনি গতকাল বর্ডার এলাকায় ৪৭ টাকা দরে কিছু পেঁয়াজ কিনেছিলেন। পরে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সেই অর্ডার তিনি বাতিল করে দেন।
হবিগঞ্জ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি (ব্যকস) সভাপতি মোঃ শামছুল হুদা জানান, হবিগঞ্জের কোন ব্যবসায়ীর পক্ষে চাউলের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা নেই। ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চাউল কিনেন তাই তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। গতকাল আশুগঞ্জের বিভিন্ন মোকামে ২৯নং চাউল পাইকারী বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৪০ থেকে ২ হাজার ১৫০ টাকা। এই দামে হবিগঞ্জের একজন ব্যবসায়ী চাউল ক্রয় করে তা হবিগঞ্জে নিয়ে আসতে আরও ২০-২৫ টাকা খরচ হয়েছে। একজন ব্যবসায়ী ওই চাউল ২ হাজার ৩শ’ টাকার কমে বিক্রি করতে পারবেন না। করলে তার লস্ হবে। একজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে তিনি এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়ার দাবি জানান। তিরি আরও জানান, কয়েকদিন পূর্বেও হবিগঞ্জে ২৯নং চাউল বিক্রি হয়েছে মানভেদে ১ হাজার ৮শ’ থেকে ১ হাজার ৯৫০ টাকা।
এদিকে বাজারে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির খবর পেয়ে গতকাল দুপুরে চৌধুরী বাজার, পুরান বাজার ও বগলা বাজার এলাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হবিগঞ্জ সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসফিকা হোসেনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় চালের দাম অতিরিক্ত রাখায় বগলা বাজারের রিপন এন্টারপ্রাইজকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ ইব্রাহিম জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কোন ঘাটতি নেই। তাই অহেতুক প্রয়োজনের অধিক কিনে মজুত করবেন না। যারা বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ ও অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রির দায়ে দুই ব্যবসায়ীকে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শামসুদ্দিন মোঃ রেজার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে এ দন্ড প্রদান করা হয়। দন্ডিতরা হলেন- চৌধুরী বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ মনফর আলী ও বিপ্লব রায়। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শামসুদ্দিন মোঃ রেজা জানান, দন্ডপ্রাপ্তরা তাদের দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছিল। এছাড়াও তাদের দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি মজুদ ছিল। এ কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪০ ধারা অনুযায়ী তাদেরকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। তিনি বলেন- জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে জনস্বার্থে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে।