চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ মাছে-ভাতে বাঙালির জীবনে মাছ যখন হারিয়ে যেতে বসেছে তখন দেশের বিল আর খালে মাছ ধরা উৎসবের খবর অনেকটাই রূপকথার গল্পের মতো। দিনে দিনে ভরাট হয়ে যাচ্ছে পুকুর-ডোবা থেকে শুরু করে বিল-ঝিল পর্যন্ত। এমনকি নদ-নদীও এই দখল প্রক্রিয়ার বাইরে নয়। মাছের চলাচলের ব্যবস্থা না রেখেই তৈরি করা হয় অপরিকল্পিত বাঁধ আররাস্তা নির্মাণ একদিকে যেমন মাছের প্রাকৃতিক আবাসের বৈশিষ্ট্যকে ধ্বংস করেছে অন্যদিকে বিলের মত জলাশয়ে মাছ চাষ প্রযুক্তির প্রসার বর্তমানে প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছের বৈচিত্রকে করছে কোনঠাসা। তবুও এক সময়ের বহুল প্রচলিত উৎসবটি এখনও যে একেবারে হারিয়ে যায়নি তাই বা কম কি! অবশ্য সার্বিক পরিস্থিতিতে বিলে মাছ ধরা উৎসব অনেকের কাছেই মাছের জীব-বৈচিত্রের জন্য একটি হুমকি স্বরূপও মনে হতে পারে। কিন্তু বাপ-দাদার সময় থেকে চলে আসা এই উৎসব নিশ্চিতভাবেই ততদিন চলবে যতদিন মাছ প্রাপ্তির খাতা শূন্য না হয়। প্রধানত ছিটকি আর টেলা জাল নিয়ে মাছ ধরায় নেমে পরে গায়ের শত-শত ছেলে, বুড়ো, যুবক। সাথে থাকে খলুই হাতে ছোট্র শিশুরাও। অনেকে আবার ছিটকির সারির পেছনে পেছনে টেলা জাল হাতে নিয়ে নেমে পড়ে। যার ছিটকি বা টেলা জাল কিছুই নেই সেও নেমে পড়ে খালি হতে। সেসময়ে দেখা হয় বিভিন্ন গ্রামের মানুষের সঙ্গে। চলে একে-অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় আর হাসি-ঠাট্টা। দিন শেষে কই, মাগুর, পুটি, শিং, চিংড়ি, পুঁটি মাছ সহ হরেক রকম মাছে ভরে উঠে খলুই। সারাদিনের কাঁদা পানি মাখা মানুষটিকে চেনাই দায় হয়ে পড়ে। এ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে পরিচিতজনদের মাঝে আর বাড়ি ফিরে নারী মহলে চলে হাসি-ঠাট্টা আর রসিকতা। এভাবেই শেষ হয় দিনব্যাপী মাছ ধরা উৎসব। এরই ধারাবাহিকতায় চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের নালুয়া চা বাগানের ডুলনা বাংলা বিলে মাছ ধরার উৎসব জমে উঠে। রবিবার ভোর থেকে মাছ ধরতে গায়ের শত শত লোকজন জাল হাতে নিয়ে আসতে থাকে। সারাদিন মাছ ধরা চলে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও চা শ্রমিক এবং আশ পাশের লোকজন জড়ো হয়ে মাছ ধরতে আসেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য নটবর রুদ্র ্রপাল জানান, ডুলনা বাংলা বিলে এবার কই, মাগুর, পুটি, শিং, চিংড়িমাছ সহ অনেক প্রজাতির মাছ পাওয়া গেছে। প্রতি বছর শত শত মানুষের ভিড়ে মাছ ধরা উৎসব এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবেদ হাসনাত চৌধুরী সনজু বলেন, সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি আহম্মদাবাদ ইউনিয়ন। এখানে মনিপুরী, চা শ্রমিক, ত্রিপুরা, সাওতাল সহ অনেক লোকজনের বসবাস। মাছ ধরা উৎসব সহ অনেক ধরনের উৎসব এখানে হয়ে থাকে। তিনি বলেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে বাংলাদেশে শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন হবে চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ।