স্টাফ রিপোর্টার ॥ বানিয়াচঙ্গের মক্রমপুর গ্রামের বাসিন্দা লিবিয়ার মাফিয়া চক্রের সদস্য তানজিম আহমেদ ও তার বাবা বশির আহমেদের খপ্পরে পড়ে শতাধিক যুবক বশত ভিটা ও বাড়িঘর বিক্রি করে সর্বশান্ত হয়েছেন। সম্প্রতি হিয়ালা গ্রামের মঈন উদ্দিন খান নামে ক্ষতিগ্রস্ত এক যুবকের মানব পাচার মামলায় তানজিমের বাবা বশির আহমেদকে বিজ্ঞ আদালত কারাগারে প্রেরণ করেছেন।
মামলার বিবরণ ও এলাকাবাসী সূত্র জানা যায়, কয়েক বছর ধরে মক্রমপুর গ্রামের মাওলানা বশির আহমেদ এর ছেলে তানজিম আহমেদ লিবিয়াতে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি মাফিয়া চক্রের সাথে জড়িত। তানজিম দেশ থেকে উঠতি বয়সী যুবকদের ইতালীতে নেয়ার কথা বলেন লিবিয়াতে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে নিয়ে তাদেরকে মাফিয়াদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। পরে মাফিয়াচক্র ওইসব যুবকদের আটকে রেখে নির্যাতন করে নির্যাতনের ভিডিওসহ ছবি তাদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করে নিচ্ছে। মাফিয়াদের হাতে আটককৃতরা অনেকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়ে ইতালিতে গিয়ে পৌঁছেছেন। আবার অনেকেই ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা দিয়েও ইতালি যেতে না পেরে আবার দেশে ফিরে এসেছেন। ২০২১ সালে হিয়ালা গ্রামের আবুল হোসেন খানের ছেলে মঈন উদ্দিন খানকে ইতালি নেওয়ার জন্য ১৫ লাখ টাকা চুক্তি করেন তানজিম ও তার বাবা বশির আহমেদ। চুক্তি অনুযায়ী ১ম কিস্তিতে ৫ লাখ ও পরবর্তীতে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এরপর তানজিমের বাবা বশির আহমেদ এর হাতে মঈন উদ্দিনের পাসপোর্ট দেয়া হয়। ২৯ আগস্ট ইতালি পাঠানোর উদ্দেশ্যে মঈন উদ্দিনকে ভারতে পাঠানো হয়। ভারতে ২৭ দিন থাকার পর ইতালিতে যেতে না পেরে দেশে ফিরেন মঈন উদ্দিন। পরবর্তীতে একই বছরের ৪ নভেম্বর আরব আমিরাত হয়ে লিবিয়া যান মঈন উদ্দিন। লিবিয়াতে মঈন উদ্দিনকে রিসিভ করেন তানজিম আহমেদ। পরে তানজিম মঈন উদ্দিনকে মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেন। মাফিয়া চক্রের সদস্যরা তাকে ৩ বছর তাদের ক্যাম্পে আটকে রেখে নির্যাতন করে এবং বিভিন্ন সময়ে তার পরিবারের কাছ থেকে তানজিমের বাবা বশির আহমেদ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ৩ বছর সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০২৪ সালে ২২ অক্টোবর মাফিয়া চক্রের কাছ থেকে কৌশলে পালিয়ে দেশে চলে আসেন মঈন উদ্দিন। দেশে আসার পর মঈন উদ্দিন লিবিয়াতে তাকে নির্যাতনের ঘটনা এলাকার মুরুব্বীয়ানদের অবগত করেন এবং তানজিমের পরিবারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কিন্তু তারা ক্ষতিপূরণ দিতে নানা টালবাহানা শুরু করে। সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর মঈন উদ্দিন বাদী হয়ে মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালত হবিগঞ্জে মামলা দায়ের করেন। মামলায় তানজিম আহমেদ, তার বাবা মাওলানা বশির আহমেদ, মা হাফছা আক্তার, বোন রাহমা আক্তার ও জুলফা আক্তারকে আসামী করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পিবিআই’র কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ মামলাটির তদন্ত শেষে তানজিম আহমেদ ও তার বাবা বশিদ আহমেদ এর বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তে অনিয়মের অভিযোগ এনে মামলার বাদী মঈন উদ্দিন খান আদালতে নারাজী দেন। এদিকে গত ১৫ আগস্ট মামলার আসামী বশিদ আহমেদ আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে বিজ্ঞ আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে নির্যাতনের শিকার মঈন উদ্দিন খান জানান, পূর্ব পরিচিত হওয়ায় আমি তানজিমের সাথে ইতালিতে যাওয়ার জন্য ১৫ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হই। লিবিয়াতে নেওয়ার পর তানজিম আমাকে মাফিয়াদের ক্যাম্পে বিক্রি করে দেয়। ক্যাম্পে আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করে আমার পরিবারের কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় তানজিম। তার পরও আমাতে সে ইতালিতে পাঠায়নি। ৩ বছর পর আমি কৌশলে মাফিয়া ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসে সেখানের প্রশাসনের সহযোগিতায় দেশে ফিরে আসি। শুধু আমিই নয়, ক্যাম্পে অর্ধশতাধিক যুবক আটক রয়েছেন। তাদের প্রত্যেককে নির্যাতন করে পরিবার কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে মাফিয়া চক্র।