“নারী”
তাহমিনা বেগম গিনি
বেশ অনেকদিন পর বিবেকের তাড়নায় কলমটা ধরতে বাধ্য হলাম। গতকাল থেকে একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে। হবিগঞ্জে বাস থেকে নামিয়ে এক মহিলাকে রাস্তায় ফেলে দুইজন লোক ইচ্ছেমত মারছে টানা হ্যাঁচড়া করছে। অনেক লোক এমনকি মহিলারাও চেষ্টা করছে বাধাঁ দিতে। মেয়েটির সাথে যাচ্ছে তাই ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিদিন সকালে কম করে হলেও আমি ৪/৫টি স্থানীয় দৈনিক পড়ি। মনে মনে ভাবছিলাম কেন এমন ঘটনা ঘটলো তা নিশ্চয়ই আজকের খবরের কাগজে জানতে পারবো। কিন্তু আশ্চর্য্য হলাম যখন কোন পত্রিকায় এ বিষয়ে কোনো খবর পেলাম না। হবিগঞ্জে এইরকম ঘটনা এই প্রথম। ঘটনাস্থলে পুলিশ সেনাবাহিনীর কাউকে দেখিনি। বসে বসে ভাবছিলাম নারীপক্ষ, নারী দিবস, কন্যাদিবসে কত ভালো শ্লোগান দেন সরকার। আমি নিজেই কত কথা বলি। কিন্তু আজকাল, শিশু কন্যাদের অবস্থান কোন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে ভেবে অবাক হই। জাতীয় দৈনিক, স্থানীয় পত্রিকা, মিডিয়া সব জায়গায় নারীদের নিয়ে বিষাদময় লজ্জাজনক খবরই পাই। আমার কেন যেন মনে হয় জুলাই আগষ্টের ঘটনার পর অনেক অনেক কিছু বদলেছে। নারীরাও তেমন বদলেছে। ধর্ষণতো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। শিশু হোক কিংবা নারী, ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাও প্রচুর। এমন সমাজতো আগে ছিল না। প্রত্যেকের মুখের দিকে তাকালেই মনে হয় কত বদলে গেছে শিশু থেকে সবাই। উক্ত নারীর ঘটনায় আমি শুধু পুরুষদের দোষ দিচ্ছি না। পিতা শিশুকন্যাকে বটি দিয়ে কাটছে, মাদকাসক্ত পুত্র, কন্যা, মা, বাবাকে হত্যা করছে, স্বামীর পরকীয়ায় স্ত্রীকে হত্যা করছে, স্ত্রীর পরকীয়ায় স্বামীকে হত্যা করছে। প্রতিদিন খবরের পাতায় এসব খবর আমরা পাই। ফেসবুকের কল্যাণে দেখি কত কত শিশু হারিয়ে গিয়েছে। ভেবে পাইনা এত শিশু কিভাবে হারায়? নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তের সকল শিশুর বেলাই তা হচ্ছে। এদের মা কিংবা বাবা কি ইচ্ছে করেই হারিয়ে ফেলে বাচ্চাদের? আগে শুনতাম, পড়তাম ছেলেরা বৃদ্ধ বাবা মাকে রাস্তায় ফেলে যায় তাদের লালন পালন করতে হবে তাই। কত নতুন শব্দ যে বেরিয়েছে জি.এন.জি, মব, ফ্যাসিস্ট, পাপিলাভ। আড্ডায় বা ৪/৫ জন এক জায়গায় হলেই শুনি তারা নাকি বাচ্চা পরিবার সহ নিয়ে রাত দেড়টা দুইটার আগে ঘুমায় না। আমি অবাক হয়ে যাই। এ কোন সমাজে আমরা বাস করছি?
কোন রাস্তায় বেড়াতে গেলে দেখি কিশোরী, স্কুল কলেজে পড়ে মেয়েরা, শুধুমাত্র ছেলেরা যেমন গেঞ্জি তেমন গেঞ্জি সাথে ঘরে পড়া ট্রাউজার পরে বেড়ায়। ওড়নার কোন বালাই নেই। বড় ভাই, বাবা, মামা, চাচা, সবার সামনেই এভাবে চলছে। আর ছেলেরা তো এখন হাফপ্যান্ট পরে। মেয়ে ছেলে সবাই এমন পোশাকে বাইরেও যায় অথচ আমাদের ইসলাম ধর্মে পরিষ্কার লেখা আছে “মেয়েদের চুল,ঘাড়, বক্ষ যদি দেখা যায় সেটা কবিরা গুনাহ। এর জন্য যে এই পোষাক পরিধান করেছে সে সহ তার মা, বাবাও দায়ী থাকবেন আল্লাহর কাছে। আমি এসব নিয়ে কারো সাথে কথা বলি না কারণ কোন বাবা-মা প্রশ্রয় না দিলে তার সন্তান এমন চলতে পারে না। আজকাল সন্তানরা মা বাবার কথা শুনতেও চায় না। মোবাইল আমাদের সমাজটা বদলে দিয়েছে। যেখানে মানবতাবোধ, লজ্জা, পর্দা করা একা একা যুবতী, কিশোরী মেয়েদের চলাফেরায় সমাজের সবাই অস্থির। মনে হয় এই অস্থিরতার জন্য এতসব অপকর্ম ঘটে চলেছে। সেদিন প্রথম আলোয় নতুন একটি শব্দ পেলাম “পাপি লাভ”। আগ্রহ নিয়ে পড়তে গিয়ে মনটা খুশি হলো না। উঠতি বয়সীদের ভালোবাসার অভিধানে যুক্ত হওয়া নতুন শব্দ “পাপি লাভ”। এক কথায় “ছানাপোনার প্রেম”। কাগজে লিখেছে এই প্রেমের প্রভাবে দুজনে ‘দিবাস্বপ্ন’ দেখে সারাক্ষণ একসঙ্গে সময় কাটাতে চায়। সেটা হতে পারে ফোনে কথা বলা, সারাক্ষণ টেক্সটিং করা বা ভিডিওকলে সময় কাটানো। যেমন ঝড়ের বেগে এই প্রেম আসে, তেমন দপ করেই নিভে যায় এমন প্রেমের সলতে। এইজন্য আজকাল প্রায় শোনা যায় স্কুল কলেজ পড়–য়া মেয়েদের আত্মহত্যার কাহিনী। এই সম্পর্ক থেকে দূরে থাকার জন্য একজন ডাক্তার সকল মা-বাবাকে বলেছেন ‘বয়ঃসন্ধিকালে সম্পর্কে জড়াক বা না জড়াক সন্তানের বয়স অনুযায়ী তাকে বিজ্ঞানসম্মত যৌনশিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন’। এই শিক্ষার ফলে সন্তান হঠাৎ কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেও শারীরিক সম্পর্কে জড়াবে না। সবাই চায় আমাদের মেয়েটি নিরাপদ থাকুক যৌতুকের জন্য নির্যাতন, মেরে ফেলা, পারিবারিক নির্যাতনে আমাদের দেশের অনেক নারী ঘর হারাচ্ছে, জীবন দিচ্ছে সন্তানদের ও হারাচ্ছে। কোনদিন আমরা চিন্তা করিনি পরকীয়ার জন্য মা-বাবা সন্তানকে হত্যা করতে পারে। এখন এমন ঘটনা প্রচুর ঘটছে। আপনার মেয়েকে স্কুল কলেজে পাঠিয়েও আপনি শান্তি পাচ্ছেন না। রাস্তা থেকেই একদল তাকে অচেতন করে নিয়ে যাচ্ছে সেই সব দলে নারীরাও থাকেন। তারপর পিতা-মাতা অপহরণ মামলা দায়ের করেন। বোরকা, হেজাব পরা মেয়েরাও এসবের শিকার হন। দিন যত যাচ্ছে আমার কাছে মনে হচ্ছে নারীরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে। এমন তো কথা ছিল না, এখন তো নারীদের এগিয়ে আসার দিন কারণ আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী কেন যেন মনে হয় পুরুষ নারী সবাই আমরা বদলে যাচ্ছি। নারীদের বলবো নিজের সম্মান নিজেই রাখতে চেষ্টা করুন। আপনার কন্যা সন্তানদের ভালো-মন্দ শিক্ষা দিন। নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলুন। যেসব ছেলে মেয়ে এসবের শিকার হয় তারা উভয়েই আমাদের সন্তান। এরা ঠিক না হলে সমাজ ঠিক হবে না। নারীও তার প্রাপ্য সম্মান পাবেন না। বদলে যাওয়ার সমাজকে উদ্দেশ্য করে গালিবের দুটো লাইন লিখছি-
“এ দুনিয়া মতলববাজদের, তুমি কোন মুমিনের কথা বলছো গালিব?
এখানে মানুষ জানাজা পড়তে আসে তাও নিজের পুণ্যের কথা ভেবে।”
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com