সারাদেশেই করোনা পরীক্ষার কিটের স্বল্পতা রয়েছে। কিটের স্বল্পতা না থাকলে আরও বেশি করোনা পরীক্ষা করা গেলে শনাক্তের হারও বাড়বে
২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ রূপ দেখেছিল বিশ্ব। ৫ বছরের ব্যবধানে করোনা ভাইরাস আবারও নতুন রূপে ফিরে এসেছে। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। পাশাপাশি ভাইরাসটির নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে উদ্বেগ।
রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, ২০২০ সালের শুরুতে করোনা মহামারি দেখা দেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ভাইরাসটি মিউটেশনের মাধ্যমে (জিনগত উপাদানের পরিবর্তন-জিনোম) একাধিক উপধরণ ছড়িয়েছে। যেগুলোর কোনো কোনোটি অনেক শক্তিশালী হওয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হারও বেড়েছে।
বর্তমানে করোনার নতুন যে উপধরন সংক্রমণ বাড়া”েছ, সেটির সংক্রামিত করার ক্ষমতা অনেক বেশি হলেও এতে রোগের তীব্রতা কম। করোনার নতুন এ ধরণটি প্রাণঘাতী না হলেও অসাবধানতা ও অচেতনতায় ধরণটি যেকোনো সময় শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তাই যথেষ্ট সতর্ক ও সচেতনতা প্রয়োজন।
চলতি বছরে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৯৩ জনের। যার মধ্যে চলতি মাসের ২০ দিনেই শনাক্ত হয়েছেন ২৩৫ জন। এ যাবৎ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৮ জন।
চলতি বছরে ৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এই ৭ জনই জুন মাসের ২০ দিনে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ যাবৎ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৯ হাজার ৫০৬ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালসহ সারাদেশেই করোনা পরীক্ষার কিটের স্বল্পতা রয়েছে। কিটের স্বল্পতা না থাকলে আরও বেশি করোনা পরীক্ষা করা গেলে শনাক্তের হারও বাড়বে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশসহ থাইল্যান্ড, চীন ও ভারতেও করোনার কিছু নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হ”েছ। যেগুলো দ্রুত সংক্রমিত করতে পারে। তবে বর্তমানে পাওয়া যাওয়া উপধরণগুলো আগের মতো প্রাণঘাতী নয়। সাধারণ জ্বর, সর্দি বা মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো। কিš‘ এখন থেকেই স্বা¯’্যবিধি প্রতিপালনে গুরুত্ব না দিলে এটি আরও বাড়তে পারে। সংক্রমণ বাড়লে মৃত্যুও বাড়বে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইইডিসিআর) পরিচালিত সর্বশেষ কোভিড-১৯ সার্ভিলেন্স ‘ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিলেন্স ও পিএইচওসি’ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে থেকে দেশে করোনা সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে শুরু করেছে।
গেল মাসে ১ হাজার ৪০৯ জন সম্ভাব্য কোভিড-১৯ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৩৪ জন পজিটিভ শনাক্ত হন, যা পরীক্ষার ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। এটি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মে সময়কালে সর্বো”চ হার। এর আগে ২০২৩ সালের মে-আগস্ট এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারি-আগস্টে সংক্রমণের হার ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি। সর্বশেষ পাওয়া নমুনাগুলোর জিনোম সিকুয়েন্সিং করে ‘ওমিক্রন বিএ ২.৮৬’ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, যা এর আগেও দেশে শনাক্ত হয়েছিল।
আইসিডিডিআর,বি চলতি বছর সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে নতুন দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি ও এক্সএফসি বাড়ার তথ্য তুলে ধরে। চলতি জুনের প্রথম ১০ দিনে ১৪টি জিনোম সিকুয়েন্স করা হয়। এর মধ্যে ১২টিতেই এ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, যা ওমিক্রন জেএন.১-এর একটি উপশাখা। সম্প্রতি যেসব নমুনা পাওয়া যা”েছ, এর প্রায় সবকটিতে এক্সএফজি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ইতোমধ্যে সরকারের স্বা¯’্য অধিদপ্তর ১১টি নির্দেশনা দিয়েছে।
সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসাধারণের করণীয়- জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা এবং উপ¯ি’ত হলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা, শ্বাসতন্ত্রের রোগসমূহ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা, হাঁচি-কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা, ব্যবহৃত টিস্যু অবিলম্বে ঢাকনা যুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলা, ঘন ঘন সাবান, পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা (অন্তত ২০ সেকেন্ড), অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ না ধরা, আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা।
সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়- জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে সু¯’ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকা, রোগীর নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা, রোগীর সেবাদানকারীরাও সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করা, প্রয়োজন হলে নিকট¯’ হাসপাতালে অথবা আইইডিসিআর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) অথবা স্বা¯’্য বাতায়ন (১৬২৬৩) এর নম্বরে যোগাযোগ করা।