
স্টাফ রিপোর্টার ।। বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি হারুন মিয়া আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। বানিয়াচং নাইন মার্ডার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের মামলায় ১৫ নং ক্রমিকে তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, ২০২৪ এর ৫ আগস্ট বানিয়াচং গণহত্যার আগের রাতে বড়বাজার হারুন মিয়ার মালিকানাধীন জননী কমিউনিটি সেন্টারে বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সিনিয়র নেতারা এক জরুরি সভার আয়োজন করেন। উক্ত সভায় বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি হারুন মিয়া সভাপতিত্ব করেন। উক্ত সভা থেকে পরদিন ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য গণহত্যা চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। পরদিন সকাল থেকে হারুন মিয়া সহ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বানিয়াচং থানায় অব¯’ান নেন। ৫ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিল থানার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় থানার সামনে অবস্থান নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগ সহসভাপতি হারুন মিয়াসহ নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এতে ঘটনা¯’লে ৭ জন নিহত হন এবং ২ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। উক্ত ঘটনায় হারুন মিয়াসহ আরো অনেকের নাম উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়। সেখানে হারুন মিয়া ১৫ নং ক্রমিকের আসামি।
মামলা দায়েরের পরে হারুন মিয়া আত্মগোপনে চলে গেলেও আওয়ামীলীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন বলে একাধিক সূত্র জানায়।
বিভিন্ন সূত্রমতে, হারুন মিয়া সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ, ব্যক্তি মালিকানার জমি দখল, সরকারি রাস্তা দখল, সুদের ব্যবসাসহ ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ সবই করেছেন আওয়ামী লীগের পদ ব্যবহার করে। বানিয়াচং উপজেলার পুর্বতোপখানা মহল্লার মৃত ছমদু মিয়ার পুত্র হারুন মিয়া। এরশাদ শাসনামলের শেষের দিকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেম্বাররা সাগরদিঘী খননের কাজ পেলে সেই কাজের ডিও লেটার ক্রয় করতেন হারুন মিয়া। এতে তার প্রচুর লাভ হতো। পরবর্তীতে যখন যে সরকার ক্ষমতায় ছিল সেই সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে সরকারি সুযোগসুবিধা ভাগিয়ে নেন। ১৯৯৬ সালে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপির হাত ধরে তিনি আওয়ামীলীগে যোগ দেন। তখন থেকে তিনি টিসিবির ডিলার, বিএডিসির সারের ডিলারসহ বিভিন্ন কালোবাজারী ব্যবসা করতে থাকেন। ২০২৪ এর জুলাই আগস্ট আন্দোলনের সময় স্থানীয় ১নং ইউনিয়ন পরিষদের হল রুমে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অনুপস্থিত থাকলে হারুন মিয়ার সভাপতিত্বে দলীয় একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিগত ১৬ বছর তিনি বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগের মিটিং মিছিলের খরচ বহন করতেন। দলীয় কোনো সিনিয়র নেতা বানিয়াচং সাংগঠনিক সফরে আসলে আপ্যায়ন খরচের দায়িত্ব নিতেন তিনি। ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ার সুবাদে বিগত সরকারের ১৬ বছরে সরকারি রাস্তা দখল করে বহুতল বিল্ডিং তৈরি, জোর পুর্বক অন্যের জমি দখলে রাখা, সুদের ব্যবসা, বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণসহ নিজস্ব লোকজন দিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিলেন। তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে একাধিকবার অনেক চেয়ারম্যান মেম্বারকে নির্যাতন করে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন।
এলকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, একসময় হারুন মিয়া বড়বাজারে ফুটপাতে আটা বিক্রি করতেন। শুধুমাত্র আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটিয়ে তিনি আজ শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক। বানিয়াচং বড়বাজারে রয়েছে তার অনেকগুলো দোকান ভিট, হবিগঞ্জ শহরে রয়েছে তার কয়েকটি বহুতল ভবন। সুদী লগ্নি ব্যবসায় রয়েছে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ। বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামীলীগ সহসভাপতি হওয়ার সুবাদে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি করে এই বিপুল সম্পদের মালিক হন তিনি।