
কালনী নদের কূল ঘেঁষে বদলপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত পাহাড়পুর বাজারটি বেশ জমজমাট
প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় সাধারণত এত বড় বাজারের দেখা মেলে না
আতাউর রহমান কানন
২০ জুলাই ২০০৮, রবিবার। সকাল ১১টায় হবিগঞ্জ গ্যাসফিল্ডে যাই। সেখানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জনাব আলী ইমাম মজুমদারকে রিসিভ করি। তিনি আগামীকাল সিলেট বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিতব্য উপদেষ্টা (মন্ত্রী) পরিষদের সভায় যোগদান করবেন। ঘণ্টাখানেক যাত্রা বিরতি করে তিনি সিলেটের উদ্দেশে রওনা করেন। হবিগঞ্জ জেলায় এ উপলক্ষ্যে উপদেষ্টা ড. সিএস করিম এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মানিক লাল সমাদ্দার রাত্রি যাপন করবেন বলে গতকাল প্রোগ্রাম পেয়েছি। বেলা ১-২টার ভেতর দুজনই হবিগঞ্জ সার্কিট হাউজে এসে ওঠেন। আমি যথারীতি তাঁদের রিসিভ করি। মধ্যাহ্ন ভোজের পর উভয়েই রেস্ট নেন। রাতে সার্কিট হাউজের সভাকক্ষে জেলার অফিস প্রধানদের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। সভা শেষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত নৈশভোজে সবাই অংশগ্রহণ করেন।
পরের দিন সকাল ৭টায় সার্কিট হাউজে অবস্থানরত ভিআইপিগণ সিলেট চলে যান। আমি তাঁদের বিদায় দিয়ে সার্কিট হাউজ সংলগ্ন নিজ বাসভবনে আসি। সকাল ৯টায় অফিসে যাওয়ার পথে নির্মাণাধীন কোর্ট মসজিদ প্রাঙ্গণে যাই। আজ মসজিদের প্রথম ছাদ ঢালাইয়ের জন্য নির্ধারিত ছিল। মসজিদ কমিটির সদস্য ও অন্যান্যদের উপস্থিতিতে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ উদ্বোধন করি।
২২ জুলাই ২০০৮, মঙ্গলবার। আজ সকাল ৮টায় স্পিডবোট যোগে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার উদ্দেশে রওনা করি। এ উপজেলায় এবার দুদিনের কর্মসূচি নিয়ে যাচ্ছি। দুর্গম এ উপজেলায় সাধারণত কমই ভ্রমণ করা হয়। আর বর্ষাকালেই ভ্রমণ কিছুটা সহজ। সোয়া ৯টায় আজমিরীগঞ্জ পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে ১০টায় অন্যান্য উপজেলার ন্যায় এ উপজেলাতেও প্রধান অতিথি হিসেবে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সেমিনারে যোগদান করি। সেমিনার শেষে এসি (ল্যান্ড) অফিস দর্শন করি। মধ্যাহ্ন বিরতির পর নৌপথে বিকেল সাড়ে ৪টায় পাহাড়পুর পৌঁছে বাজার এলাকা পরিদর্শন করি। কালনী নদের কূল ঘেঁষে বদলপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত এ বাজার বেশ জমজমাট। প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় সাধারণত এত বড় বাজারের দেখা মেলে না। এলাকায় অবস্থিত পাহাড়পুর আদর্শ কলেজ, বদলপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ও বদলপুর তহসিল অফিস পরিদর্শন করি। কলেজ মাঠে এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বার ও উপস্থিত লোকজনের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হই। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আমার আর অবস্থানের সুযোগ না থাকায় এলাকাবাসীর নিকট থেকে বিদায় নিয়ে আজমিরীগঞ্জ সদরে ফিরে আসি। নৌপথের এমন ভ্রমণে কষ্টের তেমন কিছু না থাকলেও আনন্দ উপভোগের কোনো কমতি ছিল না। উন্মুক্ত জলছোঁয়া নির্মল হাওয়ায় শরীর-মন সবই জুড়িয়ে যায়।
রাতে বর্ষার জলঘেরা আজমিরীগঞ্জস্থ জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে পুলিশ প্রহরায় রাত্রিযাপন করি। তবে নতুন এ স্থানে এত মনোরম পরিবেশেও কেন যেন ঘুমের দেখা পেতে সময় লাগে।
পরদিন ভোর সাড়ে ৪টায় ঘুম ভেঙে যায়। কিছুক্ষণ এপাশওপাশ করে বিছানা ছেড়ে ফজরের নামাজ পড়লাম। জানালা গলে ফুরফুরে হাওয়া এসে গায়ে দোলা দিতে থাকে। ভাটির দেশে এসে আমার মন এক পর্যায়ে কবি হয়ে ওঠে। কী আশ্চর্য! আমি এক বসায় পরপর তিনটি গীতি কবিতা লিখে ফেলি।
সকালের নাশতা সেরে আমার আজকের কর্মসূচি অনুসরণে প্রথমে আজমিরীগঞ্জ থানা পরিদর্শনে যাই। ওসি আমার ছোট শ্যালকের ভায়রা ভাই। গতকাল থেকেই তিনি আমার প্রায় সাথে সাথে আছেন। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর থেকে জেলা প্রশাসকদের থানা পরিদর্শন নিয়ম রক্ষার রুটিন কাজে পরিণত হয়েছে। একদিন হয়তো জেলা প্রশাসকদের এ কাজটি থেকে অব্যাহতি মিলবে। আমি রুটিন মাফিক পরিদর্শন শেষে ইউএনও অফিসের মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ইসলামের আলোকে পরিবার পরিকল্পনা’ বিষয়ক অবহিতকরণ কোর্সে যোগদান করে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখি। অতঃপর উপজেলা নির্বাহী আদালত পরিদর্শন করি।
আজ হবিগঞ্জ টেনিস ক্লাবের সদস্যদের হাওড়ের বুকে পিকনিক নির্ধারিত ছিল। তাঁরা একটি বড় বজরা নৌযান নিয়ে ১২টার দিকে আমাকে নিতে আজমিরীগঞ্জ আসেন। আমি আজমিরীগঞ্জ থেকে বিদায় নিয়ে সেই পিকনিকের বজরায় উঠি। অন্যান্যের সাথে এসপি ও কর্নেল ওই বজরায় ছিলেন।