চা শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন
আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার লস্করপুর ভ্যালীর ন্যাশনাল টি কোম্পানীর (এনটিসি) ৪টি চা বাগান ৪ সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে চা শ্রমিকদের রেশন, মজুরি প্রদান ও স্টাফদের বেতন ভাতা। মজুরি না পেয়ে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে বাগানগুলোর সাড়ে ৩ হাজার চা শ্রমিক। অন্যদিকে বাগান বন্ধ থাকায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বাগানগুলোর। বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে. সরকারি মালিকানাধীন এনটিসির পর্ষদ ভেঙ্গে যাওয়া এবং ব্যাংক লোন না পাওয়ায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে এনটিসির সকল চা বাগান।
এনটিসি ও চা শ্রমিক সূত্র জানায়, আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর এনটিসি’র চেয়ারম্যান শেখ কবির আহমেদ আত্মগোপনে যাওয়ায় এবং ৭ জন পরিচালক পদত্যাগ করার পর এনটিসি আর্থিক সংকটে পড়ে। এতে উপজেলার লস্করপুর ভ্যালীর মুল ৪টি বাগানসহ ৭টি চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ও স্টাফদের বেতন ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। ভ্যালীর চন্ডিছড়া, বেলাবিল, পারকুল, নাসিমাবাদ, তেলিয়াপাড়া, জগদীশপুর ও সাতছড়ি চা বাগানের সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিকের সাপ্তাহিক মজুরি বন্ধ হয় ২২ আগস্ট থেকে। পরে শ্রমিকরা মজুরির দাবিতে মানববন্ধন, সমাবেশ ও মহাসড়ক অবরোধ পালন করেও মজুরি না পেয়ে অক্টোবর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বাগানের চা উত্তোলনসহ ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় ৭টি বাগানে ১০ লাখ কেজি তৈরী চা পাতা আটকা পড়ে এবং এর গুনগত মান নষ্ট হতে থাকে। একই সাথে বাগানের গাছে গাছে পাতা বড় হয়ে এখন চা তৈরীর অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। প্রতিটি বাগানে দৈনিক ২০ থেকে ২২ হাজার কেজি কাচা পাতা উত্তোলন হয়। চা বাগানের পাতা উত্তোলন না করার চা গাছের পাতা লম্বা হয়ে গেছে। যা এখন আর উত্তোলনযোগ্য নয়। চলতি মওসুমের শেষের দিকে হওয়ার কারণে এসব পাতা কেটে ফেলে আর নতুন পাতা উত্তোলনেরও সুযোগ নেই। ফলে বাগানগুলো বড় ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। বাগানগুলো আর্থিক সংকটের পাশাপাশি লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। গুনতে হবে লোকসান। একদিকে ফ্যাক্টরিতে তৈরী পাতা নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে গাছে পাতা বড় হয়ে নষ্ট হচ্ছে। উভয়দিকের ক্ষতি সামাল দিতে গিয়ে বাগানগুলোর ১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ।
চন্ডিছড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি রনজিত কর্মকার জানান, মজুরি নাই, রেশন নাই, শ্রমিকরা না খেয়ে কাজে যাবে নাকি। আমরা লেবার ইউনিয়ন ও বাগান কর্তৃপক্ষসহ সরকারের কাছে অনেক ধর্না দিয়েছি, কেউ কথা শুনছে না। আমরা এখন মরনের জন্য প্রস্তুত।
চন্ডিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিমুর রহমান সেলিম জানান, কোম্পানীর বোর্ড পুন:গঠন এবং ব্যাংক লোন না হওয়ার কারণে আমরা টাকা পাচ্ছি না। অন্যদিকে বাগানের ফ্যাক্টরি এবং গাছে চা নষ্ট হচ্ছে। বড় ক্ষতির মধ্যে আমরা যাচ্ছি। তিনি বলেন, চলতি বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৬ লাখ কেজি পাতা, এখন পর্যন্ত আমরা মাত্র সাড়ে ৪ লাখ কেজি পাতা তৈরী করেছি। এ অবস্থা সকল বাগানেই। বড় ঘাটতির আশংকা এবং লোকসানের দিকে যাচ্ছে বাগান।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com