আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ছয়শ্রী গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে মনিপুরীদের মহারাসলীলা। উপজেলার উত্তর ছয়শ্রী মহাপ্রভু ম-পে শুক্রবার সকাল ৫টায় মঙ্গল আরতির মাধ্যমে শুরু হয় এই উৎসব। চলে শনিবার ভোররাত পর্যন্ত। এটি ছিল ছয়শ্রী আশ্রমের ১৮১তম রাস উৎসব। গভীর রাতে মনিপুরী শিল্পীরা নিপুন দক্ষতায় নৃত্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় রাধা কৃষ্ণের জীবন আলেখ্য।
মঙ্গল আরতির মাধ্যমে উৎসব শুরুর পর মহাপ্রভুর ভোগ আরতি ও মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। শুক্রবার আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে শ্রীকৃষ্ণের গোচারণ লীলা এবং রাত সাড়ে ১০টা থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত চলে মহারাসলীলা। এবার জেলা ও জেলার বাইরের অথিতিরা এ রাসলীলা উপভোগ করেন।
মহারাস লীলা উদযাপন কমিটির সাথে জড়িত বিরেশ্বর কুমার সিংহ জানান, প্রতিবছর কার্তিক মাসের পূর্নিমা তিথিতে অনারম্ভর ভাবে অনুষ্ঠিত হয় মহারাসলীলা। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মুনিপুরী সম্প্রদায়সহ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে অনেকেই ছুটে আসেন মহারাসলীলা উপভোগ করতে। মুনিপুরী নৃত্যকলা শুধু ছয়শ্রী নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বিশ্বের নৃত্যকলার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান দখলে করে আছে।
মহারাসলীলায় শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে রাতের বেলায় রাস উৎসব হয়ে ওঠে সবচেয়ে আকর্ষণীয়।
রাখাল নৃত্য দিনের বেলায় হলেও রাখাল নৃত্যের পর থেকেই সন্ধ্যায় শুরু হয় রাসলীলা। শুরুতেই পরিবেশিত হয় রাসধারীদের অপুর্ব মৃদঙ্গ নৃত্য। মৃদঙ্গ নৃত্য শেষে প্রদীপ হাতে নৃত্যের তালে তালে সাজানো মঞ্চে প্রবেশ করেন শ্রী রাধা সাজে সজ্জিত একজন নৃত্যশিল্পী বৃন্দা। তার নৃত্যের সঙ্গে বাদ্যের তালে তালে পরিবেশিত হয় মুনিপুরী বন্দনা সঙ্গীত।
শ্রীকৃষ্ঞ রূপধারী বাশিঁ হাতে মাথায় কারুকার্য্য খচিত ময়ূর গুচ্ছধারী এক কিশোর নৃত্যশিল্পী তার বাঁশির সুর শুনে রজগোপী পরিবেশিত হয়ে শ্রী রাধা মঞ্চে আসেন। রাতব্যাপী সুবর্ন কংকন পরিহিতা মুনিপুরী কিশোরীদের নৃত্য প্রদর্শন চলে। সবাই মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন এই নৃত্য। রাতের নিস্তব্ধতায় বিমোহিত হয় রাসলীলা দেখতে আসা হাজারো গ্রামবাসী ও অতিথিরা।