এসএম সুরুজ আলী ॥ বানিয়াচং উপজেলার মন্দরী ইউনিয়নের টুপিয়াজুড়ী গ্রামের ৩ সন্তানের জনক কৃষক মানিক মিয়া শ্বশুরবাড়িতে মারা গেছে। তার মৃত্যু নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। পরিবারের দাবি মানিক মিয়াকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। অপরদিকে পুলিশ বলছে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে মানিক মিয়া। এ ঘটনায় নিহত মানিক মিয়ার স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, টুপিয়াজুড়ী গ্রামের সইফ উল্লাহর ছেলে মানিক মিয়া (৩৬) প্রায় ১৩ বছর পূর্বে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার হুরগাও গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার মেয়েকে (৩৩) বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাদের দাম্পত্য জীবন সুখেই কাটছিল। হঠাৎ করে সুখের সংসারে দুঃখের আগুন জ্বলে উঠে। মানিক ও সাফিয়ার দাম্পত্য জীবনে কলহ সৃষ্টি হয়। প্রায় দিনই তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতো। এ জের ধরে ১ মাস পূর্বে সাফিয়া তার ৩ সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায়। বাবার বাড়িতে সাফিয়া যাবার পর তাকে নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মানিক অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু সকল চেষ্টায় ব্যর্থ হন তিনি। এক পর্যায়ে সন্তান ও স্ত্রীকে কাছে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন মানিক। শনিবার বিকেলে তার বড় ভাইকে জানিয়ে শ্বশুরবাড়ি হুরগাও গ্রামে যান। এ সময় তার বড় ভাই তাকে শ্বশুরবাড়িতে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু ভাইয়ের কথা না মেনেই মানিক মিয়া শ্বশুরবাড়িতে চলে যান। রাত ৮টার দিকে মানিক মিয়ার স্ত্রী সাফিয়া তার এক আত্মীয়কে জানান তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে মানিক মিয়ার পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে এসে দেখেন বারান্দায় তার লাশ ফেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পালিয়ে গেছেন। পরবর্তীতে এ বিষয়টি হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশকে অবগত করলে সেখানে দুপুরে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর কবির হাসপাতালে গিয়ে লাশ দেখেন এবং হুরগাও গ্রামে পুলিশ পাঠান। পুলিশ সেখানে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করেন এবং মানিক মিয়ার স্ত্রীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। বিকেলে মানিক মিয়ার লাশের ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। সন্ধ্যায় নিজ গ্রামে মানিক মিয়ার লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এ ব্যাপারে মানিক মিয়ার বড় ভাই দিলু মিয়া জানান, অনেক দিন ধরে আমার ভাই মানিক মিয়ার সাথে তার স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জের ধরেই তার স্ত্রী সাফিয়া ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায়। শনিবার বিকেলে আমার ভাই তার স্ত্রী ও সন্তানদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে যায়। রাত ৮টার দিকে তার স্ত্রী আমাদের এক আত্মীয়কে খবর দেয় মানিক অসুস্থ তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে সাড়ে ৯টার দিকে আমরা এসে দেখি তার লাশ বারান্দায় পড়ে রয়েছে। পরে আমরা এ বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ রবিবার সকালে হুরগাও গ্রামে মানিকের শ্বশুরবাড়িতে যান। এ সময় পুলিশ তার স্ত্রী ছাড়া শ্বশুরবাড়ির আর কোন লোকজনকে বাড়িতে পাননি। পুলিশ আশ-পাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, মানিক মিয়া তার শ্বশুরবাড়িতে আসার পর সন্ধ্যায় তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হয়েছে। এতে আমার সন্দেহ হয় মানিকের স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে মারধোর করে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজাতে মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছে। তার হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।
এ ব্যাপারে ওসি আলমগীর কবির জানান, মানিকের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। চিকিৎসার সূত্র ধরে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনাটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্তের স্বার্থে মানিক মিয়ার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।