চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার লস্করপুর ভ্যালীর ন্যাশনাল টি কোম্পানীর (এনটিসি) ৪টি চা বাগানের সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক গত ৪ সপ্তাহ ধরে মজুরি পাচ্ছে না। গত ২২ আগস্ট সাপ্তাহির মজুরির অর্ধেক করে টাকা দেওয়ার পর আর্থিক সংকটে তাদের মজুরি প্রদান বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকদের আন্দোলনের মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর বকেয়া না দিয়ে এক সপ্তাহের মজুরি দিলেও গত বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় বন্ধ রয়েছে মজুরি প্রদান। এতে করে ভ্যালির এনটিসির চন্ডিছড়া, পারকুল, তেলিয়াপাড়া ও জগদীশপুর চা বাগানের শ্রমিকরা চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
এদিকে বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকার পরিবর্তনের পর এনটিসির বোর্ড চেয়ারম্যানসহ ৮ জন পরিচালক পদত্যাগ করার কারণে সৃষ্ট সমস্যায় তারা অর্থ পাচ্ছে না। ফলে শ্রমিকসহ স্টাফদের বেতন ভাতাও প্রদান করা যাচ্ছে না।
এনটিসির মালিকানাধীন ১২টি চা বাগানের মধ্যে লস্করপুর ভ্যালীর মধ্যে চন্ডিছড়া, পারকুল, তেলিয়াপাড়া ও জগদীশপুর চা বাগানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক কাজ করে। তারা দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরি হিসেবে প্রতি সপ্তাহে সেই হাজিরা পায়। কিন্তু এনটিসির ১২টি বাগানেই গত ২২ আগষ্ট থেকে অর্থ সংকটে তাদের মজুরি প্রদান বন্ধ হয়ে যায়। ঐদিক প্রত্যেক বাগানেই তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্ধেক হাজিরা প্রদান করে। এর পর থেকেই গত ৪ সপ্তাহ ধরে তাদের মজুরি প্রদান বন্ধ রয়েছে। মধ্যে শ্রমিকদের আন্দোলনের মূখে ১২ সেপ্টেম্বর তাদের এক সপ্তাহের মজুরি প্রদান করা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় মজুরি প্রদান বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় এসব চা বাগানের শ্রমিকরা চরম কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। অনেকেই ধার কর্জ ও দোকান বাকি থেকে কেনাকাটা করলেও এখন দোকান বাকিও পাচ্ছেন না।
চন্ডিছড়া চা বাগানের পুস্প বাউড়ি বলেন, গত ৫ সপ্তাহের মধ্যে মাত্র দেড় সপ্তাহের মজুরি পেয়েছি। গত সপ্তাহ থেকে আবার মজুরি দেওয়া হয়নি। এতে আমাদের শ্রমিকরা অনেকেই না খেয়ে দিন যাপন করছে। অনেকেই দোকান বাকি কিংবা ধারকর্জ করে খেয়েছে, এখন তাও পাচ্ছে না। আমরা আমাদের মজুরি না পেলে আমরা না খেয়ে মারা যাব। তিনি বকেয়া সকল মজুরি এবং আসন্ন পূজার বোনাস প্রদানের দাবি জানান।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল জানান, এনটিসির আর্থিক সংকটের কারণে তারা গত সাড়ে ৩ সপ্তাহ ধরে শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারছে না। মজুরি না পেয়ে শ্রমিকরা খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছে। আমরা দাবি জানিয়েছি যে কোন মুল্যে তাদের মজুরি প্রদান করতে না হলে শ্রমিকদের অবস্থা আরো খারাপ হবে। বকেয়া মজুরি এবং আসন্ন দুর্গাপূজার বোনাস দিতে না পারলে বাগানগুলোতে শ্রমিকরা আন্দোলনে যাবে এবং উৎপাদন ব্যহত হবে।
চন্ডিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিমুর রহমান জানান, বোর্ডের সমস্যার কারণে আমরা আর্থিক সংকটে ভুগছি। আগামী মঙ্গলবার বোর্ড মিটিং আছে। আশা করছি সমাধান হলেই আমরা মজুরি প্রদান করতে পারবো।